ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার, আরো অনেক স্বপ্ন। ছোট বেলার সেই দেখা স্বপ্ন পূরণ হয়ে কজনের? কেউ স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখেন, কেউ আবার সারা জীবন বয়ে বেড়ান স্বপ্নকে না ছুঁতে পারার আক্ষেপ। অনেকে আবার অজান্তেই হয়ে যান অন্য কিছু, যা তাকে দেয় অপার আনন্দ। ক্রিকেট বিশ্বে এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন, যাদের শুরুটা অন্য পেশায়। কিন্তু পরে হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের মহাতারকা। মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)- ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি জাতীয় দলে ঢোকার আগে ট্রেনের টিকেট চেকার ছিলেন। ভারতকে আইসিসি বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতানো এই অধিনায়ক আগে থেকেই ক্রিকেট খেললেও পরিবারের কষ্ট দূর করতে টিকেট চেকার হিসেবে ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে যোগ দেন। দুই বছর চাকরি করার পর ২০০৪ সালে ভারত এ হয়ে দুটি সেঞ্চুরি করে নিজের ভাগ্য বদলে নেন মি. কুল। ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- বোলারদের কাছে তিনি রীতিমতো যমদূত। টি-টোয়েন্টির আসর মানেই বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে ক্রিস গেইলের দরজায় ফ্র্যাঞ্জাইজিগুলোর ধরনা দেয়া। কথা রাখেন গেইলও। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ২২ গজে। সাজান চার ছক্কার ফুলঝুরি। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোতে তার পারিশ্রমিক দিতে হিমশিম খেতে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। অথচ জ্যামাইকার হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। থাকতেন টিনের ঘরে। কুড়াতেন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল। অর্থাভাবে একবার চুড়িও করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটিং দানব। ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)- অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম সেরা শক্তির নাম ডেভিড ওয়ার্নার। বিদেশি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসরগুলোতেও তার বেশ কদর। স্বভাবতই অর্থ নিয়ে ভাবতে হয় না। কিন্তু এই ওয়ার্নারের ব্যাট-বল কেনার সামর্থ্য ছিলো না। ক্রিকেটের সামগ্রী কিনতে সন্ধ্যায় একটি দোকানে সহযোগী বিক্রেতার কাজ করতেন। সকালে অনুশীলন আর সন্ধ্যায় চাকরি। তার কৈশর কেটেছে এভাবেই। থাকতেন এক রুমের বাড়িতে। আর এখন সাত মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ি কিনে সেখানে থাকেন বাঁ-হাতি এই অজি ওপেনার। এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)- দ্য আল্টিমেট প্লেয়ার অব ক্রিকেট বলা হয় তাকে। চারিদিকে সমানে ব্যাট চালাতে পারেন বলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আরেক নাম মি. ৩৬০। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটার অনেক প্রতিভার অধিকারী। তার আগের প্রিয় খেলা ছিলো হকি। সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলেও। কিন্তু ক্রিকেট টেনেছে মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডের রেকর্ড নতুন করে লেখা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। চলে আসেন প্রোটিয়াদের হয়ে ক্রিকেট ব্যাট চালাতে। আবার রাগবি খেলাতেও একই রকম পটু ছিলেন প্রোটিয়াদের এই ওয়ানডে অধিনায়ক। খেলার বাইরে বিজ্ঞান শাস্ত্র নিয়েও ঘাটাঘাটি ছিলো ভিলিয়ার্সের। গবেষণা করে নেলসন মেন্ডেলা পুরস্কারও পেয়েছেন ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১০৬ টেস্ট, ২২২ ওয়ানডে ও ৭৬ টি-টোয়েন্টি খেলা ভিলিয়ার্স। মিশেল জনসন (অস্ট্রেলিয়া)- ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণের প্রধান হাতিয়ার। বহু ব্যাটসম্যানের কাছে আতঙ্কের নাম ছিলেন বাঁ-হাতি এই অজি পেসার। ২২ গজে টানা ১০ বছর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন জনসন। অথচ জাতীয় দলের ঢোকার আগে বলের বদলে তার হাতে ছিলো ট্রাকের স্টিয়ারিং। অস্ট্রেলিয়ান পেসার ছিলেন একজন ট্রাক ড্রাইভার। ২০০৫ সালে এসে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৩ টেস্ট, ১৫৩ ওয়ানডে ও ৩০ টি-টোয়েন্টি খেলা সাবেক এই পেসারের। শেন বন্ড (নিউজিল্যান্ড)- হাতে ছিলো পিস্তল আর হ্যান্ডকাফ। কাজটা ছিলো অপরাধীদের ধরা। কিন্তু এসব ফেলে ক্রিকেট বল হাতে তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক গতি তারকা শেন বন্ড। পুলিশের চাকরি ছেড়ে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে যোগ দেন ২২ গজে গতির ঝড় তোলা ডানহাতি এই সাবেক ফাস্ট বোলার। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা বন্ড ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে ১৮ টেস্ট, ৮২ ওয়ানডে ২০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। নাথান লায়ন (অস্ট্রেলিয়া)- উইকেটের সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। তার কাজই যে ছিলো উইকেট বানানো। তাই তো চোখ রাখতেই উইকেটের চরিত্র বুঝে ফেলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন। আর এই বুঝতে পারার কারণেই হয়েছেন বিশ্বমানের স্পিনার। ছিলেন পিচ কিউরেটর। সেখান থেকে এখন তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের স্পিন আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র। ব্র্যাড হজ (অস্ট্রেলিয়া)- অন্য পেশা থেকে ক্রিকেটার হয়ে ওঠার তালিকায় অস্ট্রেলিয়াই এগিয়ে। মিশেল জনসন, ডেভিড ওয়ার্নার, নাথান লায়নদের মতো ব্র্যাড হজের পেশাও ছিলো ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের হয়ে খেলার আগে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান পেট ভরতে ফিলিং স্টেশনে কাজ করতেন। ২০০৫ সালে এসে অজি দলে সুযোগ পান। খেলেন ৬ টেস্ট, ২৫ ওয়ানডে ও ১৫ টি-টোয়েন্টি। তার কাজের ক্ষেত্র এখন আরো বড়। আইপিএলের দশম আসরে গুজরাট লায়ন্সের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ডোয়াইন লেভরক (বারমুডা)- ক্রিকেটে তার এবং তার দলের নামটা খুব একটা পরিচিত নয়। বারমুডার বলেই আর সব ক্রিকেটারদের মতো স্পট লাইটে আসা হয়নি ডোয়াইন লেভরকের। ভারতের ব্যাটিং ঈশ্বর শচিনের ক্যাচ ধরে পুরো মাঠ চক্কর দেয়া লেভরকের আগের পেশা ছিলো গাড়ি চালানো। আসামীদের বহন করা গাড়ী (প্রিজন ভ্যান) চালাতেন বারমুডার হয়ে ৩২ ওয়ানডে ও ২ টি-টোয়েন্টি খেলা লেভরক। উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস (ইংল্যান্ড)- চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা। স্বভাবতই ক্যারিয়ারের শুরুটা ডাক্তার হিসেবে। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ক্রিকেটের জনক দেশ ইংল্যান্ডের হয়ে ১৮৮০ সালে টেস্ট অভিষেক হয় অলরাউন্ডার উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেসের। এরপর খেলেন ২২ টি টেস্ট ম্যাচ। খেলোয়াড়ি জীবনে ডাক্তারের ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাকে। মাঠে থাকলে ইনজুরিগ্রস্ত ক্রিকেটারদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন গিলবার্ট। যে কারণে দ্য ডক্টর হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2t0pjV2
July 09, 2017 at 05:41PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টের সূচি প্রকাশ
07 Oct 20200টিঢাকা, ০৭ অক্টোবর- শ্রীলংকা সফর না হওয়ায় ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দেশের মূল ক্...আরও পড়ুন »
বার্তামেউয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট!
07 Oct 20200টিবার্সেলোনার বোর্ড নির্বাচন আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই সময়ই ঠিক হওয়ার কথা জোসেপ মারিও বার্তা...আরও পড়ুন »
বেতন কাটা নিয়ে বার্সার আলোচনা শুরু
07 Oct 20200টিকরোনার কারণে গত মার্চ থেকে কমাস ফুটবল বন্ধ ছিল। এ সময় বড় ক্লাবসহ বিশ্বের অধিকাংশ ক্লাবই ফুটবলারদের ব...আরও পড়ুন »
অস্ট্রেলিয়া-ভারত গোলাপি বলের টেস্ট চূড়ান্ত
07 Oct 20200টিক্যানবেরা, ০৭ অক্টোবর- এ বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের চার টেস্টের সিরিজ দিবারাত্রির ম্যাচ দিয়...আরও পড়ুন »
নারীর প্রতি মনোভাব বদলের ডাক মাশরাফীর
07 Oct 20200টিঢাকা, ৭ অক্টোবর- উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতার হার। সিলেটে এমসি কলেজসহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.