সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ দেশের আর্থিক খাত বা ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তারমতে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সঠিকভাবে হিসাব রাখা ও অডিট করা হলে এবং তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনা হলে দেশের অর্ধেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। দেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি আছে। এ জন্যই বড় বড় অনিয়ম হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো— অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা। এই সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার দেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন। ওই সংবাদ সম্মেলনে অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা প্রসঙ্গ তুলে ধরে ড. আবুল বারকাত বলেন, অর্থনীতি একটি নীতি শাস্ত্র। যখন থেকে সমাজে শ্রেণিভেদ শুরু হয়েছে, তখন থেকে নৈতিকতাও কমতে শুরু করেছে। বাজার ব্যবস্থার কারণেই ভোক্তা ও উৎপাদক পর্যায়ে দামের বড় ধরনের বিভাজন তৈরি হয়েছে। যার ফলে এখন আমরা দেখছি— বাজারে পিয়াজের দাম অনেক বেশি। বাজার ব্যবস্থাপনার এই স্তরে অনেক ঘাটতি রয়েছে, যার উন্নতি করতে হবে। প্রশ্নফাঁস ও শিক্ষার মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষায় একটা বড় নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। এ জন্য দেখা যায় জিপিএ ফাইভ ও গ্লোডেন জিপিএ বেড়েছে, সামনে ডায়মন্ড দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি। দেশে এখন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা দরকার। শিক্ষার মান বাড়াতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
কেননা দেশে যে ধরনের চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে, তা দিয়ে চিকিৎসা হবে না। ড. আবুল বারকাত সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর খরচ বাড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, বড়-ছোট অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, যাতে মাঝ পথে খরচ বাড়ানো হয়। নৈতিকভাবে এটা ঠিক না। যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো না হলে, খরচ বাড়বে। অর্থনীতি সমিতি থেকে আমরা ২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৪ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলেছিলাম। এখন এই খরচ বেড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটা বড় খরচ নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তার মতে, দেশে দৃশ্যমান অবকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে। তার মধ্যে পদ্মা সেতু, রাস্তাঘাট অন্যতম। কিন্তু অদৃশ্যমান অবকাঠামো যেমন— স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আর্থিক খাতের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দিয়ে পুরো অর্থনীতির উন্নতি করা যাবে না। যে বাংলাদেশ ব্যাংক আগে পাঁচ থেকে সাতটি ব্যাংক মনিটরি করত, সেই বাংলাদেশ ব্যাংককেই এখন একই জনবল ও কাঠামো দিয়ে ৫৭টি ব্যাংক মনিটরি করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি আরও বলেন, এখনো ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আইনেই চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দু-একটা জায়গায় কেবল ঘষা-মাঝা করা হয়েছে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক দেওয়া হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের এমডির অপসারণ প্রসঙ্গে ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মানে নাই, তাই ব্যাংকটিতে আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ায় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণ করা হয়েছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়— আগামীকাল বৃহস্পতিবার অর্থনীতি সমিতির ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন শুরু হবে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনে। সকাল ১০টায় তিন দিনের এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। আগামী ২৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বারটি কর্ম অধিবেশনসহ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2BgxZzR
December 20, 2017 at 01:30AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন