প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু দৃষ্টি কামনা ❀ স্বর্ণ কন্যা রোকেয়ার স্বপ্ন ৫০ হাজার টাকার জন্য থমকে গেছে?

সবার একটা স্বপ্ন থাকে, তবে সে স্বপ্ন অনেক সময়ই অপূর্ণ থেকে যায় নানা কারনে। তবে যারা সংগ্রামী, শতকষ্টের মাঝে থেকেই নিজের স্বপ্নকে জয় করেন ঠিকই, তেমনি একজন স্বপ্নজয়ীর নাম স্বর্ন কন্যা রোকেয়া খাতুন। নিজের ইচ্ছাশক্তিই তাকে পৌছে দিয়েছে স্বপ্নের চুড়ায়। মার্সাল আর্টের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জিতেছেন স্বর্ণ পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার। জুডো কারাতে নিজেকে সেরাদের কাতারে রাখতে তিনি কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।  জাতীয় দলের হয়ে ভিয়েতনাম ও কিজিকিস্তান যাচ্ছেন তিনি। কিজিকিস্থানের ৬ জনের দলে ৪ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে নির্বাচিত হয়েছে আর এর মধ্যে রোকেয়া প্রথম হয়। কিন্তু এতো খুশির খবরেইও যেন রোকেয়ার চোখেমুখে একটু চিন্তার ভাঁজ। কারণ ভিয়েতনাম সফরে কোন খরচ না হলেও কিজিকিস্তান যেতে প্রতিজন খেলোয়াড়কে নিজ খরচ গুনতে হবে ৯৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে রোকেয়ার আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা কমিয়েছে ফেডারেশন। তারপরও ৫০ হাজার টাকায় যেন থমকে গেছে রোকেয়ার স্বপ্ন। এরপরও রোকেয়া স্বপ্ন দেখেন, হয়ত শেষ পর্যন্ত টাকাটা জোগাড় হয়ে যাবে, তিনিও কিজিকিস্তানের মাটিতে উঠাবেন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। এ ব্যাপারে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।
স্বপ্নজয়ী রোকেয়ার জন্ম শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বাগদুর্গাপুর  নিরালা গুচ্ছগ্রামে। বাবা মো. মনতাজ আলী পেশায় রিক্সাচালক । এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রোকেয়া। ছোট বেলা থেকেই খেলার প্রতি নেশা ছিল, স্কুলের খেলাধুলায় অনেক পুরস্কারই তার ঝুলিতে জমা হয়েছে।
রোকেয়ার মা শাহাজাদি বেগম বলেন, ২০০৮ সালে রোকেয়া-কানসাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক খেলাধুলায় ১০০ মিটার দৌড়, মোরগ লড়াই ও উপস্থিত বুদ্ধি প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করে, ৩টি পুরস্কার পেয়ে বাড়ীতে এসে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। কিছুন পর তার বাবার রিক্সা ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে মনোুন্ন হয়ে বাড়ী আসে এবং আমার কাছে রিক্সা ভালো করার টাকা চাইলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে রোকেয়া দৌড় দিয়ে এসে তার মাকে বলে আমার পুরস্কার ৩টি বিক্রি করে দিয়ে বাবাকে রিক্সা ভাল করে দাও। সময়ের বিবর্তনে আজ ঐ ে ছাট্ট মেয়েটি দেশে এবং বিদেশে স্বর্ণ জয় করলেও তার বাবার সেই পুরানো রিক্সাটি দিয়েই চলছে রোকেয়াদের সংসার।
সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে রোকেয়া খাতুন জানায়, অর্থের অভাবে একপর্যায়ে তার লেখাপড়ার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এসময় বিদ্যালয়ের তারেক স্যার, পারভিন ম্যাডাম, জাহাঙ্গীর স্যার ও মাহাতাব স্যার সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারতো না। তার স্বপ্ন পূরনে সহযাত্রী হয়ে সবসময়ই পাশে ছিলেন, কানসাট ইউপি চেয়ারম্যান বেনাউল ইসলাম ও চাচা মনিরুল ইসলাম মানিক।
এসএসসি পাশের পর ২০১৪ সালে রোকেয়া ভর্তি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুডো কারাতে একাডেমীতে। জুডো কারাতের প্রশিক বাবলুজ্জামানের কাছে হাতে খড়ি। এরপর উচ্চতর প্রশিনের জন্য ঢাকায় যায় রোকেয়া।
ঢাকায় প্রশিনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যাওয়ার সে স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে রোকেয়া বলেন, মানিক চাচার অনুপ্রেরণায় সেদিন ঢাকায গিয়েছিলাম। এরপর কঠোর অনুশীলনে ধীরে ধীরে আমার স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়, একে একে আসতে থাকে সাফল্য।
২০১৫ সালে প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৪র্থ বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব আন্তর্জাতিক মার্সাল আর্ট কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। একই বছরে ৪র্থ বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে ৫৭ কেজি ওজনে সে তা¤্রপদক, ২০১৬ সালে ২৪ তম জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় রৌপ্য, ২০১৭ সালে নয়াদিল্লিতে ৯ম ইন্টারন্যাশনাল ইস্পিডবল কাব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহন করে স্বর্ণ পদক লাভ করে। সর্বশেষ গত বছরের ৮-১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেখ কামাল ইন্দো-বাংলা ড্রপ চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৭ তে রৌপ্য পদক পান।
রোকেয়া জানান, তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সেন্সি মোজাম্মেল হক মিললের কাছে প্রশিন নিচ্ছেন। সেই সাথে ঢাকা কলেজে অনার্সে অধ্যায়তরত। আগামী অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিবেন, আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে, তিনি নিজ গ্রামের কিছু ছেলে মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে তার মত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।  গ্রামের মানুষগুলো চরম দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠেছে, তাদের জন্য আগামীতে কিছু করতে চাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সাজেদুল হক সাজু/ ২৯-০৭-১৮


from Chapainawabganjnews https://ift.tt/2LJTU6Y

July 29, 2018 at 05:53PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top