ঢাকা, ১৫ নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই আবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়াও তেমনি আশ্বাস দিয়ে বলেছে, নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন), বনায়ন (প্ল্যান্টেশন) ও উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) খাতে তারা এখন কর্মী নেবে। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আজ মঙ্গলবার এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে কর্মী নেওয়ার জন্য যে (জি টু জি প্লাস) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার ভিত্তিতেই এই কর্মী যাবে। বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম মালয়েশিয়ার নয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকায় এসে পৌঁছায়। প্রতিনিধিদল দুপুর একটার দিকে রাজধানীর একটি হোটেলে নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে সঙ্গে বৈঠক বসেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলে। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়া বলেছে, তারা আজ (মঙ্গলবার) থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নেওয়া চালু করেছে। এখন অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কিছু করতে যে কয়েক দিন সময় লাগে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতেই মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী। এই মুহূর্তে দেশটি নির্মাণশ্রমিক, বনায়ন ও উৎপাদন খাতে কর্মী নেবে। সরকার নির্ধারিত যে খরচ, তাতেই কর্মী নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশে একমত হয়। প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা। মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোর বিষয়টি গুটিকয়েক ব্যবসায়ী পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে আমি বলেছি, জনশক্তি রপ্তানিতে দালাল চক্র নির্মূল করার জন্য বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। কাজেই গুটিকয়েক রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ না দিয়ে সরকার যে ৭৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছে, সেখান থেকে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান পছন্দমতো বেছে নিতে পারে মালয়েশিয়া। এতে করে অভিবাসন খরচ কমবে এবং সরকারনির্ধারিত খরচে কর্মী পাঠানো যাবে। ঘণ্টা খানেকের এই বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। এরপর দুই দেশের মন্ত্রীর মধ্যে স্মারক বিনিময় করা হয়। বিকেল চারটায় প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয় থেকে তাদের হোটেলের উদ্দেশে রওনা হয়। মালয়েশিয়ার নয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম ছাড়া আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নুর আশিকিন বিনতে মোহাম্মদ তায়েব, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমহাসচিব শাহনিয়ার বিন দারুসমান, অভিবাসন দপ্তরের মহাপরিচালক হাজি মুস্তাফার বিন হাজি আলী, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেফরি বিন জোয়াকিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব জামিরি বিন মাত জিন, অভিবাসন দপ্তরের পরিচালক খায়রুল খায়ের বিন ইয়াহিয়া, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য সহকারী সচিব শাহাবুদ্দিন বিন আবু বকর ও মানবসম্পদমন্ত্রীর বিশেষ কর্মকর্তা রবার্ট আনাক দাপন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। বকি সদস্যরা হলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, যুগ্ম সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা, যুগ্ম সচিব মো. আকরাম হোসেন, যুগ্ম সচিব মো. বদরুল আরেফীন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. সাইদুল ইসলাম ও বিএমইটির পরিচালক নুরুল ইসলাম। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কবে নাগাদ কর্মী নেওয়া শুরু হবে, সে বিষয়ে আজকের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু আলোচনা হয়নি। তবে মালয়েশিয়া বলেছে, দুই দেশ মিলে এখন অনলাইন পদ্ধতিসহ বাকি সবকিছু চূড়ান্ত করবে। এ কাজে ১০-১২ দিন সময় লাগবে। কাজেই ডিসেম্বরের শুরু থেকেই কর্মী যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জি টু জি প্লাস (সরকারি ও বেসরকারিভাবে) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার সমঝোতা স্মারকে সই করে। কিন্তু এর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মালয়েশিয়া জানায়, এই মুহূর্তে তারা আর কোনো কর্মী নেবে না। এতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঝুলে গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে সব জটিলতা কেটে গেল মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমদ। বায়রার সভাপতি বেনজীর মঙ্গলবার রাতে বলেন, আমরা মনে করছি, মালয়েশিয়া নিয়ে সব জটিলতা কেটে গেল। শিগগিরই বিপুলসংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি। এফ/২১:৩০/১৫নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2fUpyOW
November 16, 2016 at 03:30AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top