সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি

1ডেস্ক রিপোর্ট :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা কখনো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সকালে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা। বিকালে সেনাকুঞ্জে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিসভার সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল  অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী  সেনাকুঞ্জে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল  মোহাম্মাদ শফিউল হক, অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান স্মরণ করে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর খ?্যাতি অর্জনে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সেজন্য আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একটি সশস্ত্র বাহিনী, আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত পারদর্শী সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।  সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের সঙ্গে বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘অতি শিগগিরই’ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালীর লেবুখালীতে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের কথা উল্লেখ করেন  শেখ হাসিনা, যা চীন থেকে অচিরেই আসছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে ইতিমধ্যে অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য পদবির সৈনিকদের জন্য বাসস্থান,  মেস ও ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজের মাধ?্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রয়োজনে সবকিছু করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
এদিকে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ১৯৭১ সালে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। কাজেই আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করব।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র উত্তরাধিকার ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্তগণের মাঝে পরিচয়পত্র, সম্মানীর চেক এবং শাল ও মোবাইল ট্যাবসহ উপহার বিতরণ করেন। তিনি যুদ্ধ ও শান্তির সময় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর ৫ কর্মকর্তাকে বাহিনী পদক ও ওসমানী সেবাপদক প্রদান করেন। তিনি বলেন, জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাদের অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে আমাদের সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য অনেক সুযোগ-সুবিধার বাস্তবায়ন করেছে। অনেক প্রস্তাব ও প্রকল্প আমাদের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ নয়শ’ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে দশ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাতা ভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা জানুয়ারি ২০১৬ সাল থেকে যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠদের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য বিশ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীকদের জন্য পনের হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা সর্বনিম্ন আঠার হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা, চিকিৎসা এবং রেশন সামগ্রী বাবদ দুই হাজার চার শ’ সাতাশি কোটি পনের লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রবাহ মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মেধাবী সন্তান ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লেখাপড়ায় সহায়তা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি’ চালু করেছে। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের উপর দেশের অভ্যন্তরে ‘পিএইচডি’ করার জন্য পূর্ণ বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2ge9CaL

November 22, 2016 at 11:02PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top