মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথের মুফতিরবাজারে পুলিশী অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না ভারতীয় ‘তীর খেলা’র নামে জমজমাট জুয়ার আসর। ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে মূল হোতারা। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর থানা পুলিশ মুফতির বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জুয়াড়ীকে আটক করলেও মূল হুতাদের কাউকেই এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, শুধু মুফতির বাজারই নয় ধীরে ধীরে এই খেলা ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার গ্রামে গ্রামে। মুফতির বাজারে পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে স্থায়ীভাবে খেলা বন্ধ করতে মুল হুতাদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মুফতির বাজারে ‘তীর খেলা’র নামে জমজমাট জুয়ার আসর চলে আসছে। এতোদিন প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করায় নির্দিধায় চলে এই জুয়ার আসর। এবিষয়ে গত ১৮ নভেম্বর ডেইলি বিশ্বনাথ ডটকম-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। ফলে ঔ দিনই থানা পুলিশ মুফতির বাজারে অভিযানে নামে। এসময় ৬ জুয়াড়ীকে পুলিশ আটক করে এবং ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আটককৃদেরকে ১ মাসের সাঁজা প্রদান করা হয়। তবে ৬ জুয়াড়ীকে আটক করার পুলিশ এলাকা থেকে চলে আসার পরই ঐদিন বিকেল থেকেই নিয়মিত ‘তীর খেলা’ অব্যাহত রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
প্রত্যেক্ষদর্শীদের অভিযোগ পুলিশ শুধু নামমাত্র অভিযান চালিয়েছে। মুফতির বাজারে তীর খেলা’র জন্য ভাড়া নেওয়া অফিস ঘরে পুলিশ অভিযান না চালিয়েই চলে যায়। এমনকি মূল হুতা স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে পুলিশ পেয়েও তাকে গ্রেফতার করেনি। আর মূল হুতাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত এই ‘তীর খেলা’র নামে জুয়ার আসর বন্ধ হবে না এমনটাই বলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন যদি দ্রুত এই জুয়ার আসর বন্ধ করা না হয় তাহলে এলাকার তরুণ যুবকরা যেমন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়বে তেমনি এলাকায় চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ভারতীয় ধনকুবেরা এ রকম খেলা আবিস্কার করে। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অনুষ্ঠিত ‘তীর খেলা’য় অংশ হিসেবে বিশ্বনাথ উপজেলার মুফতির বাজারে বসেই জুয়ায় বাজি ধরা হয়। বাজারে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে এদেশীয় এজেন্টরা ভারতের জুয়ার আসরের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের সমন্বয় করে। বিশ্বনাথে স্থানীয় ভাবে খেলাটিকে বলা হয় টুকা খেলা, নাম্বার খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্য পরীক্ষা খেলা, ডিজিটাল নাম্বর খেলা। রিক্সা চালক, অটোক্সিা চালক ও বেকার যুবকরা এই ‘তীর খেলায়’ অংশ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে ১-৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রয় করা হয় যে কোন মূল্যে। যত মূল্যে বিক্রয় হবে তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হবে বিজয়ী নম্বরকে। অর্থাৎ ১ টাকায় ৭০ টাকা। একই নম্বর একাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাবেন। চরকির মত একটি চাকা ঘুরে এবং এই চাকা লক্ষ্য করে তীর ছোড়া হয়। যে নম্বরে তীর লাগবে সেই নম্বর বিজয়ী।
এই তীর খেলা সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। সপ্তাহে ৬দিন খেলাটি পরিচালিত হয়। অন্ধ বিশ্বাসের উপর এ খেলা চলে। খেলাটি ভারতের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনসহ প্রতি রবিবার ছাড়া বাকী সকল দিবসে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন বিকাল বেলা ভারতের শিলং এ মোবাইল ফোনের মাধ্যেমে খোঁজ নেন কোন সংখ্যার লটারি লেগেছে। তারপর তা মূহুর্তের মধ্যই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আর যারা তীর খেলার সংখ্যা কিনেন তখনোই তারা জানতে পারেন কে লটারি জিতেছেন। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ কোনদিন কেউ লটারি জিতলে তার লোভে পড়ে আরো আসক্ত হড়ে পড়ে এই খেলার প্রতি। বাজারের হোটেল রেষ্টুরেন্টগুলোতে আগে যেখানে মানুষ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতো কিন্তু এখন আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তীর খেলা। কে কত টাকার তীরের সংখ্যা কিনলো এবং কে কত টাকা পেল। বিশেষ করে তরুণ যুব সমাজের এই খেলার সাথে সম্পৃক্ততা বেশী। সাধারণ শ্রমিকদের অনেকেই এই খেলার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ কর্মের প্রতি মনোনিবেশ হারিয়ে ফেলেছে। সারদিন শুধু তীর খেলায় ব্যস্ত থাকেন।
এর কারণে দিন দিন তাদের পারিবারিক অস্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যখন পকেটে টাকা না থাকে তখন অনেকেই তাদের ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে এই তীর খেলার সংখ্যা ঘর কেনেন। আবার কেউ-কেউ চুরি মতো অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। ফলে এলাকাবাসী অনেকটাই আতঙ্কগ্রস্থ। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। যেভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে তীরের নাম্বার বিক্রি করছেন তাতে করে অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। এই তীর খেলা বন্ধ করতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
জুয়াড়ীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, জুয়া খেলা বন্ধ করতে হলে এর সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। তীর খেলার নামে জুয়া খেলা বন্ধ করতে তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, শুধু তীরখেলাই নয় যে কোন ধরনের জুয়া অপরাধ কর্মকান্ড বন্ধ করতে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষনিকভাবে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে তীর খেলার সাথে জড়িত ৬ জুয়াড়ীকে আটক করে সাঁজা প্রদান করা হয়েছে। জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত কাউকে পেলে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2fhPP5v
November 21, 2016 at 09:29PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন