আর কত বয়স হলে মিলবে বয়স্কভাতার কার্ড? শিবগঞ্জের সাত বয়স্ক’র প্রশ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বয়স্কভাতা প্রদানের যথাযথ বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে খাবার ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করলেও অনেক বয়স্ক মানুষ পাচ্ছেনা বয়স্কভাতার কার্ড। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকম’র অনুসন্ধানে এমন সাতজন গরীব মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের বয়স ৭০ থেকে ১১০ পর্যন্ত বয়স অথচ বয়স্কভাতার কার্ড তারা পায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আত্মীকরন ও দলীয় করনের মাধ্যমে বয়স্কভাতার সুবিধাভোগ করছেন স্বচ্ছল পরিবাররা। শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নে অনুসন্ধানে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনকালে মনাকষা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাহাপাড়া বৈরাগীপাড়া গ্রামে মৃত মুকসেদ আলীর ছেলে ইসরাইল হক জানান, জাতীয় পরিচয়  পত্রে জন্ম তারিখ ১জুলাই ১৯১৪ইং হলেও তার প্রকৃত বয়স ১১০বছর। অথচ তিনি সরকারের কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেননা। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমার অনেক জমিজমা ছিল। সব পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। ২ ছেলে ও ৬ মেয়ের সবার বিয়ে হয়েছে। তারা সবাই নিজ নিজ  সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার স্ত্রী আয়েশা বেগমের বয়স ৭৯ বছর।  আমি কিছুটা চলতে পারলেও সে বর্তমানে একেবারেই অক্ষম। শেষ বয়সেও তার সেবা আমাকেই করতেই হয়। অভাবের সংসারে কোনদিন খেতে পাই, কোন দিন  পাইনা’। তিনি বলেন, ‘বারবার মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিয়েও লোভ হয়নি। শেষে আশা করেছিলাম ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড দুজনের মধ্যে একজন পাবো। সেটাও পাইনি। টাকা অভাবে চিকিৎসা করাইতে না পেরে অসুস্থ অবস্থাকেই পরিণতি হিসাবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি’।
পাশের বাড়ির বিধবা ফুলেরা বেগম । স্বামী মৃত ইদ্রিশ আলী। ২০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। জন্মতারিখ ১জুলই ১৯৩৮সাল।  বর্তমান বয়স সাড়ে ৭৮বছর। কথা বলতে পারে না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার ছেলে জয়নাল বলেন, ‘আমরা ৪ভাই বোন। বোন তিনটা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমি সামান্য পুঁজি দিয়ে গ্রামে মাটির হাঁড়ি বিক্রী করে কোনরকমে দিনাতিপাত করি। মায়ের বয়স্ক, বিধবা বা অন্য কোনভাতার কার্ডের জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানদের অনেক অনুরোধ করেও লাভ হয়নি’।
ফুলেরার সামনে বাড়ির হুমায়ন ও তার স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে গেছে। হুমায়নের কথা মতে তার বয়স ৯০ বছর এবং তার স্ত্রীর বয়স ৭৫ বছর। বসতভিটা ছাড়া কোন জমিজমা নেই। ছেলে মেয়ে ৭ জন। মেয়েরা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেরা সবাই ভিন্ন। কোনমতে তারা দিনাতিপাত করছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘ কেউ আমাদের দিকে তাকায় না। অথচ ভোটের সময় ঠিকই ভোট নিয়ে গেছে। কিন্তু ভোটের পরে আর দেখা করেনি। আর মেম্বার চেয়ারম্যানরা তো কোনদিন আসেই না’।
একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ঠুঠাপাড়া হঠাৎপাড়া গ্রামের মৃত শের মোহাম্মদের ছেলে রাইসুদ্দিন। জন্মতারিখ ১৬ এপ্রিল ১৯৪৯ইং। বর্তমান বয়স সাড়ে ৬৭ বছর। ছেলেমেয়ে  ৩ জন। ৫ বছর ধরে অন্ধ অবস্থায় শুধু বাড়িতে কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নেই কোন জমিজমা। নেই কোন খাবার। নেই কোন চিকিৎসা।  রাইসুদ্দিন বলেন, ‘আমার অসহায়ত্বেও কোন জনপ্রতিনিধি খোঁজই নিচ্ছেনা। তাদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি’। রাইসুদ্দিনের  স্ত্রী শাহাজাদী বেগম বলেন, ‘ আগে কোন মতে দিন চলতো। এরই মাঝে প্রায় ৫ বছর আগে অন্ধ হয়ে গেলে ভিক্ষা করে সংসার চলে’।
এ ব্যাপারে মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম জানান, মাত্র কয়েকমাসে ক্ষমতা পেয়েছি। তদন্ত করে দেখবো যদি জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী বয়স হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুর্লভপর ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের কয়েস উদ্দিনের মেয়ে ও মৃত আফজাল হোসেনের বিধবা স্ত্রী গোলসান বেগম (৬০) জানান, ১৮ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। এখন ভিক্ষা করে সংসার চালান। এ ব্যাপারে দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুর রাজিব রাজুর সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ৩০-১১-১৬


from Chapainawabganjnews http://ift.tt/2fDMGC4

November 30, 2016 at 09:51PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top