কুমিল্লা জেলার মানুষ যে কারনে গর্বিত

ইতিহাস:
১. ব্রিটিশ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলায় যখন জেলা ব্যবস্থা চালু করে তখন ১৮ জেলার একটি ছিল কুমিল্লা।

২. হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। যার স্মৃতি চিহ্ন এখনো কোটবাড়ি ও ময়নামতি এলাকায় রয়ে গেছে।

৩. বিশাল আয়তনের কুমিল্লা থেকে ১৭৮১ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর ও ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলা কে পৃথক করা হয়।

ঐতিহাসিক ঘটনা:
১. ১৭৬৪ সালে ত্রিপুরার রাজার বিরুদ্ধে শমসের গাজীর নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক আন্দোলন এ অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যা পরবর্তীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রেড়না যুগিয়েছিল।

২. সাম্প্রদায়িক দাংগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯২১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্না গান্ধী কুমিল্লা জেলায় বিচরন করেন।

৩. ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ গুলি করে ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার স্টিভেন্সকে হত্যা করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন নারীর অংশগ্রহণ সেবারই প্রথম ঘটে।

৪. ভাষা আন্দোলন , স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ অনেক আন্দোলন সংগ্রামে অবদানের জন্য এ জেলা ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:
১. উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার জন্য কুমিল্লাকে প্রাচ্যের হংকং এর সাথে তুলনা করা হয়। এ জেলাটি দেশের তিন বৃহত্তম জেলা ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটের মধ্যবর্তী ও নিকটবর্তী হওয়ায় এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

জাতীয় অর্থনীতিতে কুমিল্লার অবদান:
১. প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ জেলার জ্বালানি গ্যাসের উপর ভর করেই ঢাকা ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এ জেলার ৬ টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ঢাকা অঞ্চলে এবং বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে চট্রগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

২. যে সড়কটি একদিন বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যায় সেই লাইফ লাইন নামে খ্যাত ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিংহভাগ এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে।

৩. তাছারা কুমিল্লা জেলার ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেষে ঘড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা রয়েছে কুমিল্লা ইপিজেট ও কৃষিবান্ধব অর্থনীতি।

৪. কুমিল্লা জেলা থেকে আক্তার হামিদ খানের হাত ধরেই এদেশে সমবায় সমিতি, ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম ও ডিপ টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে শুষ্ক মৌসুমে ইরি চাষের প্রচলন
হয়েছিল যা পরবর্তীতে অভাব অনটন লাঘবের দেশের রোল মডেল হয়ে দাড়িয়েছে।

৫. বিদেশে সবচেয়ে বেশি শ্রমশক্তি রপ্তানি হয় কুমিল্লা জেলা থেকে এবং দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠায় কুমিল্লা জেলার মানুষ।

শিক্ষা ব্যবস্থা:
১. দেশের ২য় শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনেই এক সময় সমগ্র চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিত। বর্তমানে এ জেলার শিক্ষার হার ৬০.৬%।

২. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভারসিটি ও মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ সহ এমন অসংখ্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

জনসংখ্যা:
৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত কুমিল্লা জেলা ঢাকা ও চট্রগ্রামের পর দেশের ৩য় জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। এ জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৪৫৩ জন মানুষ।

বিখ্যাত ব্যক্তি:
কুমিল্লা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম লিখতে গেলে আমার হাত ধরে আসবে হয়তো লেখা শেষ হবেনা তাই আমি শুধু আগের প্রজন্মের গুটি কয়েক ব্যক্তির নাম লিখে দিচ্ছি।
★ মহাস্থবির শীলভদ্র (৫২৯-৬৫৪) –বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা বিহারের প্রধান
★সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর
★বুদ্ধদেব বসু
★ছান্দসিক কবি আব্দুল কাদির
★উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পি শচীন দেব বর্মন
★ধীরেন্দ্রনাথ দও
★ রাহুল দেব বর্মন
★ মেজর গনি
★আক্তার হামিদ খান
সহ কুমিল্লার অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তির মুখ দেখেছে বাংলাদেশ।

পর্যটন:
কুমিল্লাতে বহুসংখ্যক পর্যটন আকর্ষন রয়েছে। কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে
বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট:
বাংলাদেশের প্রথম ক্যান্টনমেন্ট কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর এই এলাকার উপর সামরিক চেইন বজায় রাখার জন্য ব্রিটিশ ক্রাউন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী এটা ব্যবহার করে।১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু অস্ত্র এখানে রক্ষিত ছিল। এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক দিক নির্দেশনা এই ক্যান্টনমেন্ট থেকেই দেয়া হতো।

কুমিল্লার বঞ্চনা:
কুমিল্লা যেমন সমৃদ্ধ অঞ্চলের নাম তেমন বঞ্চিত অঞ্চলের নাম বটে এই বঞ্চনা শুরু ১৯৫৬ সাল থেকে। ঐ সময়েই বর্তমান চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা হওয়ার সব প্রস্তাবনা চূরান্ত হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ঘটন অঘটনের মধ্যে দিয়ে এটি আর কুমিল্লা হয়ে উঠেনি। বর্তমানে চট্রগ্রামের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত মিলিটারি একাডেমী কুমিল্লায় ছিল কিন্তু আশির দশকে কুমিল্লার মানুষের সেক্রিফাইস মাইন্ডের সুযোগ নিয়ে এটি চট্রগ্রামে সরিয়ে নেয়া হয়। বর্তমানেও আমরা কিছু উন্নয়ন বঞ্চনার স্বীকার যেমন একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, ক্যান্টনমেন্ট হয়ে ঢাকা টু কুমিল্লা রেল সংযোগ স্থাপন যা এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।

The post কুমিল্লা জেলার মানুষ যে কারনে গর্বিত appeared first on Comillar Barta™.



from Comillar Barta™ http://ift.tt/2gC0GwL

December 13, 2016 at 03:06PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top