সোহরাব সুমন ● বুড়িচংয়ের কোরপাই এলাকার নয়াকামতা গ্রামে গৃহকর্তার লালসার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধি এক কিশোরী গর্ভবতী হয়েছে। একই গ্রামের আবুল কাসেমের বাসায় প্রায় ১০ বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছিল সাজেদা (ছদ্ম নাম)। মাসে দু’শত টাকা আর থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে খুব অল্প বয়সে মা আরোয়ারা বেগম অভাবের সংসারে টিকে থাকতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই প্রতিবেশী ধর্ম ভাই কাসেমের ঘরে তাকে দিয়েছিল।
তার আশা ছিল প্রতিবন্ধি মেয়েটিকে সময়ে অসময়ে অন্তত দেখতে যেতে পারবেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হযনি। পাষন্ড, নরপিচাশ কাসেম অভিভাবকত্বের সুযোগে প্রতিবন্ধি কিশোরিটিকে জৈবিক লালসা চরিতার্থ করার ফলে বর্তমানে সে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কাসেমের সহযোগী জালাল ও মাহফুজ কিশোরীটিকে নিয়ে যায় চান্দিনার সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামের একটি বেসরারী ক্লিনিকে।
পাশাপাশি লম্পট কাসেমের ছেলে পলাশ জোর করে কিশোরির মা থেকে টিপ সই নিয়ে নেয়। প্রতিবেশী লোকজনদের সামনে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কাছে মা আনোয়ারা বেগম যখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের গর্ভবতীর কথা বলছিলেন, তখন ভিক্ষে করে জীবন নির্বাহ করা বাবা সিরাজুল ইসলাম পাশে নিরবে দাড়িছে শুনছিলেন মেয়ের সর্বনাশা ইতিহাস।
সরেজমিন ঘুরে ওই প্রতিবন্ধি’র মা আনোয়ারা বেগম ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই নয়াকামতা ভূইয়া বাড়ির মৃত আব্দুল কাদেরের পুত্র আবুল কাসেম। তার বাড়ির পাশেই সিরাজুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের ৩ প্রতিবন্ধি মেয়ের একজন সাজেদা ( ছদ্মনাম) । অভাবের সংসারে মেয়ের বেচেঁ থাকার জন্য মা আনোয়ারা বেগম যখন সাজেদা’র বয়স ১০ তখন প্রতিবেশী ধর্ম ভাই কাসেম শিশুটিকে তার বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যায়।
এভাবে বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি। গত ১০/১২ দিন আগে পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে স্থানীয় সাদত জুট মিলের জসিম নামের এক শ্রমিকের কাছে বিয়ে দিলে সে বিষয়টি প্রথম টের পায় কিশোরিটির অন্তঃস্বত্ত্বার বিষয়টি। এতে সে কিশোরিটিকে তার বাবা-মা’র কাছে পৌছে দেয়। আর এভাবে বিষয়টি প্রতিবেশীদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় বিষয়টি আড়ালের জন্য প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাপ। লম্পট কাসেমের ছেলে পলাশ একাধিক টিপ নিয়ে যায় প্রতিবন্ধি কিশোরিটির মায়ের কাছ থেকে।
প্রতিবন্ধি সাজেদা’র মা আনোয়ারা সাংবাদিকদের কাছে জানান, প্রতিবেশী কাসেম তার উকিল ভাই। মেয়েটির বয়স যখন ১০ তখন সে তাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর থেকে ককনো ককনো মেয়েটির সাথে দেখা করতে গেলেও কাসেম ও তার স্ত্রী দেখা সাক্ষাৎ করতে দিত না। এভাবে চলে যায় বছরের পর বছর।
তিনি বলেন, কথা ছিল প্রতি মাসে তার এ শিশুটিকে ২০০ টাকা করে দিবে। সাথে খাওয়া-দাওয়া। কিন্তু শুধু মাত্র কিছু দিন আগে তার একটি ঘর তৈরীর জন্য কাসেমের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা হাওলাত আনলেও বিগত সময়ের কোন টাকা পরিশোধ করেনি। উপরন্তু আনোয়ারা বেগম কাসেমকে ৩ হাজার টাকা পরিশোধও করে দেয়।
আনোয়ারা বেগম জানান, তার ৩ সন্তান। সবাই মেয়ে আর সকলেই প্রতিন্ধি। এজন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতি মাসে তার ৩ কন্যা ১৫’ শত টাকা ভাতা পায়।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাস যাবৎ মেয়েকে দেখতে গেলেও কাসেমের স্ত্রী তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিত না। আর এভাবে মেয়েটির গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকে।
আনোয়ারা বেগমের আক্ষেপ, যদি আমি মাঝে মাঝে মেয়েটিকে দেখভালো করতে পারতাম তাহলে এই সর্বনাশ হতো না।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর প্রতিবেশী জালাল এবং চান্দিনার গোবিন্দপুর এলাকার মফিজ নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় কিশোরিটিকে জোর করে গর্ভপাতের চেষ্টা চালায়। বর্তমানে কিশোরিটি কে ওই জালাল ও মফিজের জীম্মায় অজ্ঞাতস্থানে রাখা হয়েছে।
কিশোরির মা আনোয়ারা বেগম জানান, তার প্রতিবন্ধি মেয়েটিকে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে জামাল নামের এক শ্রমিকের সাথে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের রাতেই জামাল স্ত্রী সাজেদা গর্ভবতীর বিষয়টি টের পেয়ে তাকে বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে বিষয়টি এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। এদিকে আগত সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় নিয়েও এলাকায় চলছে ব্রাপক কানাঘুষা।
এব্যাপারে কাসেমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
এদিকে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নাই।
The post বুড়িচংয়ে গৃহকর্তা কর্তৃক প্রতিবন্ধি কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা! appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2huBEyV
December 17, 2016 at 07:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন