স্টাফ রিপোর্টার : দু’টি পাতা একটি কুড়ির শহর সিলেটে মুসল্লিদের কলরব আর ‘আমিন’ ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে এবার মুখরিত হবে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর এই প্রথম সিলেটে হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার অংশ হিসেবে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক সংলগ্ন বিশাল মাঠে এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এ ইজতেমায় ১০ থেকে ১২ লাখ মুলল্লির সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ইজতেমার মাঠে গেলে জানা গেল, ৬শ’ কেদার জমির উপর সিলেট জেলার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সেজন্য প্যান্ডেল ধারা সাজানো হচ্ছে বিশাল মাঠ। ওই মাঠে ১১টি খিত্তা থাকবে। ১৬টি করে এক একটি পয়েন্টে সাজানো মাঠে ২শ’টি মসজিদ ওয়ালি হবে। এ ছাড়া মাঠের দক্ষিণ পাশে ৫ থেকে ৬ হাজার মুসল্লি যাতে এক সাথে ওজু করতে পারেন, সেজন্য থাকবে একটি বিশাল ওজুখানা। এই ওজুখানা ছাড়াও আরো ৩৫ থেকে ৪০টি ছোট ওজু খানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাঠের একপাশে অন্তত ২ হাজার শৌচাগার থাকবে; ৫টি গভীর নলকূপসহ প্রায় ১২ থেকে ১৫টি নলকূপ বসানো হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, ইজতেমার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করছি। নলকূপ বসানো, বিদ্যুতের ব্যবস্থা, রাস্তা করা এবং রাস্তার উন্নয়নসহ প্রায় অধিকাংশ কাজে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, মুসল্লিরা যাতে সুন্দরভাবে ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন, সেজন্য পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সার্বিক দিকে দৃষ্টি রাখছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ইতোমধ্যে দুটি গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে। পানির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। লাইট দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা থাকবে।
তাবলিগ জামাতের আমীর আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহর মেহেরবাণীতে সব কাজ চলছে। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, তিন দিন ইজতেমা চলবে। ৩১ ডিসেম্বর হবে আখেরি মুনাজাত। ইজতেমা শেষে অনেক মুসল্লি আল্লাহর রাস্তায় সময় কাঠাতে চিল্লায় যাবেন।
তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার চেষ্টা করা হবে। তাঁদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল করে তাঁবু দিয়ে ইবাদত করার সুযোগ করে দেয়া হবে। যারা মাঠে থাকতে অসুবিধা মনে মনে করবেন, তাঁদেরকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
তাবলিগ জামাতের সিনিয়র মুরুব্বি সৈয়দ ইব্রাহিম জানান, ৩৬ বছর পর সিলেটে ইজতেমা হচ্ছে। এর আগে আগে ১৯৬৫ ও ১৯৮৪ সালে সিলেট জেলার সুরমা নদীর দক্ষিণ তীর সংলগ্ন টেকনিক্যাল মাঠে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমবার আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন ইউসূফ জি (রহ:) এবং দ্বিতীয়বার আখেরী মোনাজাত করেন এনামুল হাসান (রহ:)। তিনি বলেন শেষবার ৮৪ সালে পলিটেকনিক মাঠে জেলা পর্যায়ে একটি ইজতেমা হয়েছিল। এবার ৩৬ বছর পর সিলেটের ইজতেমা সফল করতে সবাই এগিয়ে এসেছেন।
এদিকে, ইজতেমার আশপাশে বসানো হচ্ছে বিপুল সংখ্যক দোকান। বসছে রেস্টুরেন্টও। স্থানীয়রা বলছেন, ওই এলাকায় এবার ইজতেমা হওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা ভালো হবে।
সূত্র জানায়, তবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিদের নতুন সিদ্ধান্তে চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমায় দেশের যে ৩২টি জেলা বাদ পড়ে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে সেই ৩২ জেলার তবলিগ জামাত সদস্যরা অংশ নেবেন।
জেলাগুলো হচ্ছে, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুডিগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও বরগুনা।
এসব জেলার মুসল্লিরা এবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় অংশ নেবেন। বাকি ৩২টি জেলায় মুসল্লিরা এবার নিজেদের জেলায় ইজতেমা করবেন। এই ৩২টি জেলার মুসল্লিরা ২০১৮ সালে তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমায় যোগ দেবেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2haOgfk
December 06, 2016 at 12:33AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন