মন্ত্রীর আগমনে পাল্টে গেছে বেহাল কুমেকের দৃশ্যপট

কামাল উদ্দিন ● শুক্রবার সন্ধা সোয়া ৬টা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান গেটে আগের মতো ছিল না যানবাহন ও দালালদের জটলা। প্রতিটি ভবনে আলোর ঝলকানি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের দেয়ালে তখনো চলছিল শেষ মুহুর্তের রং দেয়া। কুমেকের অভ্যন্তরের সড়কে ছাত্রীরা করছিল আলপনা।

ঢাকার সাভার থেকে আসা বিসমিল্লাহ লাইটিং অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেমের কর্মী রমজান আলীও ছিলেন বেশ ব্যস্ত। হাসপাতালের অভ্যন্তরের চিরচেনা দৈন্য দশাও পাল্টে গেছে দ্রুত। ছিল না দালালদের উৎপাত। হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মচারী, নার্স সবার চোখে-মুখেই ছিল যেন আতংকের ছাপ। প্রতিটি ফ্লোর ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয়েছে।

মন্ত্রী আসছেন, ভুল ধরা খেলেই রক্ষা নেই। তাই এতো আয়োজন ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আগমনকে ঘিরে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২ দিনব্যাপী রজতজয়ন্তী উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী।

১৯৭৯ সালের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের কারণে ১৯৮২ সালে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ডা. হাবিবুর রহমান আনছারী কর্তৃক ৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১১ জন শিক্ষক নিয়ে ১৯৯২ সনের ১৫ আগস্ট পূনরায় কুমেকের প্রথম শিক্ষাবর্ষের ক্লাশ শুরু হয়।

ডা. হাবিবুর রহমান ছিলেন এই মেডিকেল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। শুরুতে এতে বিভাগ ছিল মাত্র ২টি। বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ৩৪টি। চলতি বছর পর্যন্ত এখান থেকে ২০টি ব্যাচে শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হয়েছে। সময় কেটেছে প্রায় ২৫ বছর। কিন্তু এখনো বহুমূখী সমস্যা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এ মেডিকেল কলেজটি।

দক্ষ ডাক্তার ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যঘাত ঘটলেও কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। এ মেডিকেল কলেজের যে সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপর ভরসা করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে তাদের অধিকাংশই নগরী ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার এখন নাজুক অবস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমেকের শিক্ষার্থীরা জানান, অনেক ডাক্তার নিয়োমিত কলেজ এবং হাসপাতালে না আসলেও তারা যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকার পন্থী বিভিন্ন সংগঠনে জড়িয়ে পড়ায় কলেজ কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

কুমেকের ৩৪টি বিভাগে ১৪৭টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০০ জন। এসব শূন্য পদের বেশিরভাগই অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের।

জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের ১০৮টি পদের মধ্যে ৪৭টিই শূন্য। ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য কুমেকের মর্গে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। মরদেহ ব্যবচ্ছেদ করার জন্য এখনো হাতুড়ি-বাটাইলই ভরসা। এছাড়াও মরদেহ সংরক্ষনের জন্য নেই হিমঘর। ক্যামিকেল ল্যাবরেটরি না থাকায় ময়নাতদন্তের পর  বিভিন্ন রিপোর্টের জন্য ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের দিকে চেয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়।

১৯৯২ সালের ১১ জানুয়ারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুমিল্লা আধুনিক হাসপাতাল নামে কুমেকের পাশে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ওই হাসপাতালকেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০০তে উন্নীত করা হয়।

বর্তমানে এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন বৃহত্তর কুমিল্লা থেকে (কুমিল্লা, চাঁদপুর, বি-বাড়িয়া) আসা প্রায় সাড়ে ৬ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে ফ্লোরেও ভর্তি থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় আড়াই হাজার রোগী।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২ দুই যুগ অতিক্রম করেও এ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের এখন বেহাল দশা। এখানে এখনো চালু করা হয়নি আইসিও, সিসিও।

কুমেকের সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে ও ২০০৫ সালে দুটি ৫০০ এমএ এক্স-রে মেশিন, ২০০৭ সালে আনা হয়, ইকো ও এমআরআই মেমিন। এছাড়াও ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে চালু করা হয় সিটি স্ক্যান মেশিন, যা দীর্ঘ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ১৩টি ইনকিউবেটরের মধ্যে সবগুলোই নষ্ট হয়ে আছে।

এছাড়া ১২টি রেডিয়েন্ট ওয়ার্মারের মধ্যে ১০টিই নষ্ট। অপর ২টি তাপমাত্রা বেশি দেয়। দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় সংকটাপন্ন নবজাতকদের জন্য এগুলো কোনো কাজেই আসছে না। তাই এ হাসপাতালে চিকিৎসা কিংবা জন্ম নেয়া শিশুদের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত।

The post মন্ত্রীর আগমনে পাল্টে গেছে বেহাল কুমেকের দৃশ্যপট appeared first on Comillar Barta™.



from Comillar Barta™ http://ift.tt/2he4MaU

December 10, 2016 at 11:25AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top