মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ১-১ সমতায় নিষ্পত্তি হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩ মিনিটে সুয়ারেজের গোলে এগিয়ে থেকেও ম্যাচের ৯০ মিনিটের সময় রামোস দলকে সমতায় ফেরান। এদিন ডিফেন্সে ভিড় বাড়িয়ে একমাত্র স্ট্রাইকার বেনজেমাকে সামনে রেখে প্রথম ৪৫ মিনিটে ধুঁকতে দেখা গেছে রিয়াল মাদ্রিদকে। ৩৫ মিনিটের পর থেকে কৌশল কিছুটা পাল্টে কয়েকটি ভালো আক্রমণ গড়ে রিয়াল। কিন্তু এনরিকের রক্ষণ ভাঙা সম্ভব হয়নি। রিয়াল এদিন ৪-৫-১ আক্রমণে যায়। বাম উইংয়ে রোনালদো, ডানদিকে লুকাস ভাজকুয়েজ মাঝখানে ইসকো। আর একমাত্র স্ট্রাইকার বেনজেমা। বার্সা বরং আরেকটু বেশি আক্রমণাত্মক পজিশন নেয়। অর্থাৎ ৪-৩-৩ ফরমেশন। আপফ্রন্টে তিনজন। মেসি ডানদিকে, মাঝখানে সুয়ারেজ, বাঁদিকে নেইমার। অ্যাটাকিং থার্ডের নিচে গোমেজ, বুসকেটস এবং রাকিটিচ। ছয় মিনিটে প্রথম পরিষ্কার আক্রমণে যায় বার্সা। মাঝমাঠের ওপর থেকে বল ধরে সামনে এগিয়েছিলেন নেইমার। সুয়ারেজকে দিয়েছিলেন। বক্সে ঢোকার মুখে দখল হারান তিনি। নয় মিনিটের সময় দেখার মতো কাউন্টার অ্যাটাকে যায় এনরিকের দল। মাঝ মাঠ থেকে পিকের গড়ে দেয়া পাস ধরে রিয়ালের রক্ষণের ভিড় ভাঙেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ। ওয়ান-টু-ওয়ান খেলতে খেলতে বক্সের সামনে চলে যান। রবের্তো ওভারল্যাপে করে ডানদিকে উঠে যান। লাফিয়ে ওঠা বলে ঠিকমতো পা দিতে পারেননি। কর্নার বিনিময়ে রক্ষা পায় রিয়াল। ১২তম মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে দূরে বসে শট নিয়ে ব্যর্থ হন রোনালদো। ফিরতি বল গিয়েছিল ফাকায় দাঁড়ানো সুয়ারেজের পায়ে। রিয়ালের রক্ষণভাগ তখন খালি। বল ধরে উঠতে যেয়ে অফসাইডের ফাঁদে পড়েন সুয়ারেজ। দুই মিনিট বাদে মার্সেলো বা দিক থেকে ক্রস পাঠান বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা বেনজেমার উদ্দেশে। কিন্তু পিকের দক্ষতায় পেরে ওঠেননি বেনজেমা। ১৬তম মিনিটে গোমেজ-রাকিটিচ-মেসির টিকি-টাকা থেকে বল কাড়তে যেয়ে বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করেন মার্সেলো। ফ্রিকিক থেকে শট নিতে দাঁড়িয়ে যান মেসি-নেইমার। মেসি বা বায়ে বাঁকানো শট নিলেও ফাঁকি দিতে পারেননি নাভাসকে। সরাসরি বল হাতে নেন তিনি। ২০তম মিনিটে সুয়ারেজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। ফিরতি আক্রমণে নেইমার বল পান রিয়ালের বক্সের সামনে। রোনালদোদের রক্ষণ তখন এলোমেলো। বক্সে অরক্ষিত সুয়ারেজ। তাকে চোখে রেখে বল ছাড়েন। সুয়ারেজ সময় না নিয়ে শট করেন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল ডেড হয়। সুয়ারেজ মেসিকে অ্যালাউ করতে পারতেন। কিংবা নিজে ড্রিবল করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারতেন। নাভাসকে দ্রুত ভড়কে দিতে যেয়ে বল নষ্ট করেন। ৩২তম মিনিটে রোনালদো বার্সার বক্সের ভেতর বসে সাইকেল কিক নিতে যেয়ে ব্যর্থ হন। সিআরসেভেনের শরীর ঘেঁষে দাড়িয়ে ছিলেন বেনজেমা। মূলত তার কারণে চমৎকার একটি শট নেয়া থেকে বিরত থাকতে হয় রিয়াল তারকাকে। ৩৫তম মিনিটে রিয়ালের রাইটব্যাক কারভাজাল বক্সের ঠিক বাইরে বসে পেছন থেকে নেইমারকে মেরে ফাউল করেন। শট নিতে আসেন মেসি। এই ফ্রি-কিক থেকে দুর্বল শট করেন। ৩৭তম মিনিটে বা উইং থেকে বল নিয়ে কাট করে বক্সে ঢুকে পড়েন রোনালদো। চোখ জুড়ানো ড্রিবল করতে দেখা যায় তারকাকে। কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেননি। প্রথম পোস্টেই শট নেন। সেখানে প্রস্তুত ছিলেন বার্সার গোলরক্ষক। ধরতে না পারলেও পা দিয়ে রক্ষা করেন। ঠিক পরের মিনিটে রোনালদো আরেকবার কাঁপিয়ে দেন বার্সাকে। পিকের সামনে থেকে টোকা দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন। এবারও গোলরক্ষের সোজা মারেন। ৩৫ মিনিটের পর থেকে রিয়ালের আক্রমণে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকেন রোনালদো। বেনজেমার আড়ালে রিয়ালের উইঙ্গাররা মূলত তাকেই বল দিচ্ছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ৪৪তম মিনিটে আরেকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন রোনালদো। ডান দিক থেকে উড়ে আসা ক্রসে পা লাগাতে ব্যর্থ হন। গোলের হাত খানেক দূরে পজিশন ছিল তার। পিকে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে রিয়াল আক্রমণে নজর দিতে থাকে। ৫২তম মিনিটে বক্সের সামনে থেকে সাইড কিক নিতে যেয়ে বারের উপর দিয়ে মারেন রোনালদো। বুক দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বল নামিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ টাচটা ঠিক মতো করতে পারেননি। ৫৩তম মিনিটে বক্সের বাঁদিকে কর্নার পায় বার্সা। প্রথমার্ধে দুই কর্নারে দুর্বল শট নেয়া মেসি এবার নেইমারকে দিয়ে শট নেয়ান। তাতেই বাজিমাত। সুয়ারেজের সামনে ছিলেন পিকে। নেইমার বক্সের আকাশে বল তুলে দেন। পিকে সাইড হওয়ার সময় কয়েকজনকে ধাক্কা দেন। তাতে সুয়ারেজের সামনে ফাঁকা হয়। উড়ে আসা বলে মাথা ছোঁয়াতে জালের বুকে চলে যায় বল। ৫৭তম মিনিটে মেসি বক্সের বেশ বাইরে থেকে সুয়ারেজকে চোখে রেখে মাটি-কামড়ানো পাস দেন। সুয়ারেজ ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বলের দিকে যান। কিন্তু তার আগে উঠে এসে বল ধরে ফেলেন নাভাস। ৫৮তম মিনিটে বেনজেমা বক্সের ভেতর বল পেয়েও গোলে শট নিতে ব্যর্থ হন। জর্দি আলবাকে বিট করতে পারেননি তিনি। ৬০তম মিনিটে রাকিটিচকে উঠিয়ে মাঝমাঠে মেসির নিচে ইনিয়েস্তাকে নামিয়ে দেন এনরিকে। ইনিয়েস্তা ইনজুরি থেকে সদ্য সেরে ওঠায় শুরু থেকে ছিলেন না। ইনিয়েস্তা মাঠে নামার পর ফের চাপে পড়ে রিয়াল। রক্ষণে শুরুর মতো ভিড় বাড়তে থাকে। ৬৮তম মিনিটে নেইমার ম্যাচের অন্যতম সহজ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। ইনিয়েস্তা ইনসাইড-আউটসাইড করে বাঁদিকে বক্সের কর্নারে বল দেন নেইমারকে। ব্রাজিল তারকার সামনে কেবল কারভাজাল। তাকে বিট করে গোলমুখে শট নিতে যেয়ে বারের উপর দিয়ে মারেন। পরের মিনিটে ইনিয়েস্তা ফের গোলের কাছাকাছি যেয়ে খালি হাতে ফেরেন। ৭৫তম মিনিটে ভারানের সঙ্গে এরিয়াল বলের দখল নিতে যেয়ে ফাউল করেন সুয়ারেজ। হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাকে। ৭৮তম মিনিটে গোমেজকে উঠিয়ে নেইমারের নিচে তুরানকে নামান এনরিকে। ৮৮তম মিনিটে ডানদিক থেকে কারভাজাল রামোসকে চোখে রেখে দারুণ একটি ক্রস পাঠান। কিন্তু রামোস তা ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন। সমতায় ফেরার দারুণ একটি সুযোগ মাটি হয় রিয়ালের। ৯০তম মিনিটে রোনালদোর দারুণ একটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন আলবা। কয়েক সেকেন্ড পরে রামোস দলকে সমতায় ফেরান। লুকা মদ্রিচের উঠিয়ে দেয়া বল থেকে বুলেট গতির হেড করে বল জালে জড়ান রামোস। ৯২তম মিনিটে পিকে-সুয়ারেজ তালগোল পাকিয়ে বক্সের ভেতর একটি সুযোগ নষ্ট করেন। এই ড্রয়ের পর লা লিগায় ১৪ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল। সমান সংখ্যক ম্যাচে বার্সার সংগ্রহ ২৮। মেসিরা দ্বিতীয়। বার্সার শুরুর একাদশ: টের স্টেগান (গোলরক্ষক), রবের্টো, পিকে, মাসচেরানো, আলবা, রাকিটিচ, বুসকেটস, গোমেজ, মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার রিয়াল: নাভাস (গোলরক্ষক), কারভাজাল, ভারানে, রামোস, মারসেলো, কোভাসিস, মদ্রিচ, ইসকো, ভাজকুয়েজ, বেনজেমা এবং রোনালদো। আর/১০:১৪/০৩ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2gSyoNZ
December 04, 2016 at 06:28AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন