রোহিঙ্গাদের মুখে লোমহর্ষক বর্ণনা শুনে স্তম্ভিত মার্কিন দূত

amerমিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের লোমহর্ষক বর্ণনায় স্তম্ভিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত ডেভিড স্যাপারস্টেইন। কক্সবাজারে তিনি নিবন্ধিত শরণার্থীশিবির ও অনিবন্ধিত শিবিরে গিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন।
ডেভিড স্যাপারস্টেইন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও সবগুলো এখনো তুলে নেয়নি। রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র নেবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির অংশ হিসেবে ডেভিড স্যাপারস্টেইন ভারত ও বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছাড়াও সরকারের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সফরের সময় রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে কক্সবাজার যান তিনি।
কক্সবাজারে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কী দেখলেন আর যা দেখেছেন তাতে ধর্মীয় কোনো উপাদান আছে কি না, জানতে চাইলে ডেভিড স্যাপারস্টেইন বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর যেসব লোকজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের নিজেদের মুখেই সেসব লোমহর্ষক বর্ণনা শুনেছি। ধর্ষণ, বেধড়কভাবে মারধর, লোকজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা…বিভিন্ন ঘটনা আমাদের জানিয়েছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। মূলত সীমান্তচৌকিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর এসব হয়েছে। এটাও মানতে হবে ওই হামলার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা মিয়ানমার সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ওই হামলার পাল্টা জবাব দিতে নিরাপত্তা বাহিনী গ্রাম ঘিরে ফেলে অভিযান চালিয়েছে। তবে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লোকজনের বর্ণনা শুনে মনে হয়েছে, এসব হামলার পেছনে জোরালো ধর্মীয় উপাদান আছে…নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের যে বর্ণনা লোকজনের কাছে শুনেছি তা চমকে যাওয়ার মতো।’
ডেভিড স্যাপারস্টেইন বলেন, মিয়ানমারের গণতন্ত্রের সাফল্য রাখাইন প্রদেশের সমস্যা বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহার সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি সেখানকার সংখ্যালঘুদের মনে যে ক্ষত আছে, তা শুকানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রাখাইন রাজ্যে আসলেই কী ঘটেছিল, তা দেশটির সরকারকে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের করতে হবে। কে ও কেন তা ঘটিয়েছে সেটি বের করে ঘটনায় দায়ী লোকজনকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রতি এই আহ্বান অব্যাহত থাকবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডেভিড স্যাপারস্টেইন জানান, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর এখনকার অভিযানের কারণে দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের নাগরিক ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে ডেভিড স্যাপারস্টেইন বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমি রোল মডেল হিসেবে বলে থাকি। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধরনের ঘটনার পর লোকজন যে নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, সেই বাস্তবতাও পাল্টানো যাবে না।’



from যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2hPJP8S

December 23, 2016 at 07:55PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top