ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর- ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ কিংবা গরম গরম পিঠা। সকালের উষ্ণ মিষ্টি রোদ। আবার কখনো চোখ জড়ানো ঘুম। এসব কিছুই আড্ডার আলোচ্য বিষয়। সকাল তখন ১০টা। আমাদের গাড়িটি সাঁই সাঁই করে এগিয়ে চলছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। গাড়িটি থামতেই কয়েক পা হাঁটতেই ছায়া বিছানো গাছের সারি। একটু দূরেই অরণ্য। কংক্রিটের শহর থেকে বেরিয়ে আপন আলোয় যেখানে নিজেকে খুঁজে পাওয়া। শহর থেকে বেরিয়ে যেখানে হারিয়ে যাওয়া যায় ছন্দহীন গতিতে। প্রকৃতির এত রূপ, রং, রস ও গন্ধে জীবন হয়ে উঠে রঙিন। সুবিশাল আকাশের এককোনে যেন রঙের মেলা বসেছে। সেই রঙের মেলা ভেসে গিয়ে থেমেছে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির একটি বাংলোতে। পাঠক ভুলেই গিয়েছি! আপনাদেরকে এখনও আসল কথা বলাই হয়নি। আজ আড্ডা হবে অভিনয়শিল্পী অর্চিতা স্পর্শিয়ার সঙ্গে। সাথে থাকছে ছবি তোলার পর্বও। সূর্যটা তখন পূবের কোনে হেলে পড়ছে পড়ছে ভাব। জলাধার- তারপর বৃক্ষরাজির সারি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বৃক্ষ আর জলরাশি একসঙ্গে খেলা করছে! স্পর্শিয়ার সংসার জীবন-এক বছরেরও বেশি। সুখ, দু:খবোধ সবই ছিল এই সময়টাতে। তবে দিনে দিনে তাদের একের প্রতি অপরের ভালোবাসাবোধটা বেশ বেড়েই চলেছে। তবে সেটি ঠিক কেমন? তিনি বলেন, আমার সংসার জীবন শুরুতে যেমন চলতো, এখনও তেমনই। আমার কাছে, সংসার মানে বিয়ে করার পর স্বামীকে নিয়ে বসবাস করা, বিষয়টা ঠিক সেরকম নয়। জীবন তো জীবনই। আর সংসার জীবন বলতে আসলে কিছু নাই। আমি আসলে বলতে পারছি না, কবে সংসার করি নাই। আগে আমাদের সংসারটা ছোট ছিল। এখন একটু বড় হয়েছে। এখন স্বামী, মা আর আমাকে ঘিরেই পুরো সংসার। আমার স্বামীর পরিবারের বাবা, মা ভাই-বোন তারাও আমার সংসারের অংশ। তবে জীবনে হাসি আর দু:খবোধ তো থাকবেই। কথার ফাঁকে স্পর্শিয়া জানালেন, প্রথমবারের মতো বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক একটি গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছেন তিনি। যা এখন দেশের বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে প্রচার হচ্ছে। জন্মকথা শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী শাহরুখ কবির। গানটি লিখেছেন হীরা কাঞ্চন হীরক। এর সংগীত আয়োজন করেছেন ইমন চৌধুরী। পরিচালনা করেছেন খাইরুল পাপন। এদিকে অনেকেই নাকি বলেন, স্পর্শিয়ার ইমেজ খারাপ! সেই সাথে এই সমাজের ভালো সংজ্ঞায় তিনি পড়েন না। আর স্পর্শিয়া নাকি পড়তেও চা না। কৃত্তিমতা এড়িয়ে চলেন। আমি সামাজিক হতে চাই না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি এই সমাজকে ঘৃণা করি। আমি ছোটবেলা থেকে এই সমাজ থেকে ভালো কিছু পাই নাই। আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এজন্য সমাজ সারাজীবন আমার মাকে খারাপ বলেছে। যখন আমার বয়স দশ তখন একটি প্যারেন্টস মিটিংয়ে বলা হয়েছে, এই মেয়ের বাবা নেই, তাই এই মেয়ে খারাপ, মাও খারাপ। কথা প্রসঙ্গে স্পর্শিয়া জানালেন, আমি আর মা একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া থাকতাম। তখন বাড়িওয়ালা এসে আমাদের দরজায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নক করত। বিভিন্ন আজেবাজে কথা বলত। ঘুনেধরা এই সমাজের মুখোশধারী মানুষগুলোকে তখন থেকেই ঘৃণা করেন স্পর্শিয়া। প্রসঙ্গ টেনে আরও বললেন, সমাজ কিন্তু কখনও এই পুরুষগুলোকে কিংবা ওই বাড়িওয়ালাকে খারাপ বলবে না। খারাপ ছিলাম আমার মা আর আমি! তাহলে কেনো আমি এই সমাজকে সম্মান করব? আমি তো সম্মান পাই নাই। আজ আমি জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। মানুষ আমাকে সম্মান দিচ্ছে। কিন্তু এমনও একটা সময় ছিল, ঘরে খাবার নাই। কেউ ডাকে নি। যেদিন সমাজ আমাকে ভালো কিছু দেখাবে, সেদিন থেকে আমিও সমাজকে ভালোবাসব। এ দিকে বেশ কয়েকদিন ধরেই স্পর্শিয়ার পুরনো নম্বরটি বন্ধ। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সরব রয়েছেন তিনি। স্পর্শিয়া জানালেন, তার ফোনটি চুরি হয়ে গিয়েছে। যার কারণে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। আর কলকাতায় একটি নাচের অনুষ্ঠান আর শর্টফিল্মে অভিনয়ের কাজ করছেন। যার কারণেই প্রায় মাস দুয়েক ধরে কলকাতা টু বাংলাদেশ যাতায়াতের ঘনঘটাটা বেশ বেশি। আর স্পর্শিয়ার ভাষায় বলতে গেলে, আমি ডুবে থাকতে পছন্দ করি। মাঝেমধ্যে উপরে ভেসে উঠি, আবার ডুব দিই। মডেলিং ও টিভি বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি তিনি নাটকে অভিনয় করেও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। ইম্পসিবল-৫ এ অভিনয় করে অভিনেত্রী হিসেবে ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিবিসির উজান গাঙ্গের নাইয়াতে অভিনয় করে তার কর্মজীবনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন স্পর্শিয়া। নাটকে তো নিয়মিত অভিনয় করাই হয় অর্চিতা স্পর্শিয়ার। পাশাপাশি তার আছে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও। তবে এবার কলকাতায় যে স্বল্পদৈর্ঘের ছবিতে অভিনয় করছেন সেটি নাকি তার কাছে ভিন্ন কিছু। স্পর্শিয়া বললেন, এবার নতুন কিছু করছি। নাচের প্রশিক্ষণ নিলাম। নৃত্যের উপর একটা প্রজেক্ট করলাম। যার জন্য একমাস কলকাতাতে ছিলাম। এরপর ঢাকায় ফিরে দুটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হিসেবে অভিনয় করেছি। কলকাতাতে আমি দুটি শর্টফিল্ম এর কাজ করছি। তবে নাটক হোক আর শর্টফিল্ম হোক আমি একজন অভিনেত্রী যেখানে অভিনয়ের সুযোগ ভালো গল্প এবং চরিত্র পাবো সেখানেই কাজ করব। নিজের কাজেই মগ্ন থাকতে চান তিনি এতদিন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিওতে স্পর্শিয়ার দেখা মিললেও পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমায় নায়িকা হিসেবে তাঁর দেখা মেলে নি। তবে এবার সে অপেক্ষার পালা ঘুঁচতে যাচ্ছে। বড় পর্দায় বন্ধন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিষেক ঘটছে স্পর্শিয়ার। ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এটি পরিচালনা করবেন অনন্য মামুন। শুটিং শুরু হবে ২৮ ডিসেম্বর। আসছে নতুন বছরের ভালোবাসা দিবসে ছবিটির মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। ছবিটি প্রযোজনা করেছে লাইভ টেকনোলোজিস। দীর্ঘদিন ধরে নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা মিউজিক ভিডিওতে মডেল হিসেবে অভিনয় করলেও তার মনোপুত কাজ করেছেন, খুব কম। কারণ তিনি তো চরিত্রের মাঝে ডুবে থাকতে চান। খেলা করতে চান অন্তরাত্মার সাথে। স্পর্শিয়া যে খুব বেশি ভেবে-চিন্তে বন্ধন এ অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা। বিকল্পধারার ছবি কাঠবিড়ালি ও রেডরোজ এ আরও আগে চুক্তিবদ্ধ হলেও এগুলোর শুটিং এখনও শুরু হয় নি। স্পর্শিয়া তারকা খ্যাতির চাইতে, জীবনে চান এক চিলতে সুখ। এর যে বড় একটা কারণ-অভিনয় করলে তার মন ভালো থাকে। শান্তি পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চান। তবে বাণিজ্যিক ফিল্মে অভিনয় তার জন্য খুব একটা সহজবোধ্য নয়। স্পর্শিয়ার ভাষায় বলতে গেলে, এটা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা হবে। তবে আড্ডার শেষে স্পর্শিয়া বললেন, আমি শুরু থেকেই ব্যতিক্রমধর্মী কাজগুলো করতে চেয়েছি। সেটি হোক নাটক, বিজ্ঞাপন কিংবা মিউজিক ভিডিও। তবে অনেক সময় কষ্ট লাগে। যখন দেখি ভালো কাজগুলো অনেক দর্শকই দেখেন না। আমি ছয় বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি। তারপরও সাধারণ দর্শক কিংবা মানুষেরা আমাকে মডেল বলতেই পছন্দ করেন। বিষয়টা আমার কাছে একদমই খারাপ লাগে। কারণ চ্যানেলগুলোতে নাটক থেকে বিজ্ঞাপনই বেশি দেখানো হয়। এদিকে প্রকৃতির এই বিশাল সুন্দর জীবনকে কাছ থেকে দেখার পর-গাছগাছালির ভেতর দিযয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছাউনি ঘেরা জায়গায়। স্পর্শিয়ার চোখে পড়ে হরিণের একটি দল। যা তাকে বিস্মিত করে। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে একান্তে পেয়ে অনুভব করেন এক চিলতে নিসর্গ টান। অদূরেই কয়েক অরণ্যের ভাঁজে ভাঁজে ছায়া। রোদের শেষ বিকেলের ঝলক স্পর্শিয়াকে রঙিন আশ্বাস দেয়। আর সে সময়েই প্রাণের শহরে ফেরার ডাক পড়ে যায়! আর/১৭:১৪/২৬ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2iwlNx6
December 27, 2016 at 12:17AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন