ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর- কী হলো সৌম্য সরকারের? বারবার ব্যবহারে প্রশ্নটাও এখন ক্লিশে লাগে। সৌম্যও কি ক্লান্ত? প্রশ্নটার কথা হচ্ছে না। নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বাঁহাতি ওপেনার কি আশাই ছেড়ে দিয়েছেন? সৌম্য নিশ্চিত এড়িয়ে যেতে চাইবেন বিষয়টা। তবে সৌম্যর আত্মবিশ্বাস মারাত্মক টলে গেছে, এটা নিশ্চিত। আজকের ম্যাচে তো বাদই পড়লেন দল থেকে। অভিষেকের পর আগেও বাদ পড়েছেন। তবে এবারের বার্তাটা কঠিন। যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আর নয়! সমস্যা হলো, সৌম্য ফিরে আসার যে মঞ্চগুলো পাচ্ছেন, সেখানেও বড্ড বিবর্ণ। ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে চলছে দুঃসময়। এর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ হলো, সৌম্য নাকি নিজেই আর লড়াইয়ের প্রেরণা পাচ্ছেন না! সর্বশেষ বিপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচ যখন রান শূন্যতায় ভুগেছেন, রংপুর রাইডার্সের আইকন সৌম্য নিজেই নাকি হাল ছেড়ে দিয়ে অসহায় কণ্ঠে টিম ম্যানেজমেন্টকে বলেছিলেন, আমার বিকল্প দেখুন, আমি আর পারছি না! কদিন আগে কথাটা বলছিলেন তাঁর এক রংপুর সতীর্থ। তবে তিনি আশা জাগিয়েছিলেন সিডনি সিক্সার্স ও নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে। খুব বড় কিছু করেননি। সিডনি সিক্সার্সের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২০ রান করে বাংলাদেশের জয়টা সহজ করে দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ড একাদশের সঙ্গে ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে ৪০ রানও ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আবারও সৌম্যর ব্যাট কথা বলতে ভুলে গেল! করেছেন মাত্র ১ রান। আজ যে বাদ পড়তে পারেন, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন কোচ হাথুরু। ব্যর্থতার চক্রে আটকে থাকা সৌম্য একাদশে ঠাঁই পাননি অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। তখন বাদ দিলেও সৌম্যর কাছে এই বার্তা ছিল, দরজা খোলাই আছে। আবারও ফিরবে। কিন্তু এবারের বার্তাটা কঠিন এক বার্তা। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ম্যাচের আগে বলেছিলেন, তাকে যে সুযোগগুলো দেওয়া হচ্ছে কাজে লাগাতে পারছে না। কেউ ধারাবাহিকভাবে ভালো না করলে একটা সময়ে বিকল্প ভাবতেই হবে। এটা ঠিক, সৌম্যকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়ার পরও এ বছর বাংলাদেশের খেলা প্রতিটি টি-টোয়েন্টিতেই সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, ১৬ টি-টোয়েন্টিতে ১৫.৯৩ গড়ে তাঁর রান ২৫৫। রান পাননি তাঁর প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতেও। আফগানিস্তানের সঙ্গে ৩ ওয়ানডের সিরিজের প্রতিটিতে সুযোগ পেয়েছেন। সেই পুরোনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, করেছেন মাত্র ৩১ রান। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর খেলাই হয়নি। বিপিএলেও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। গত বছরে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ এ দলের হয়ে ভারত সফর থেকে শুরু, সৌম্য হারানো পথটা খুঁজে পাননি এখনো। সমস্যাটা তাঁর কোথায়টেকনিক না কি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি? অনেক দিন বাঁহাতি ওপেনার রোগের ওষুধটা খুঁজছেন, এখনো পাননি। মাশরাফি বিন মুর্তজা আফগানিস্তান সিরিজে বলেছিলেন, সে ক্যারিয়ারের শুরুতে যেটা করেছে, তা অপ্রত্যাশিত। ওই পারফরম্যান্স ধরে যদি এখন তাকে মূল্যায়ন করেন, ওর সঙ্গে অন্যায় হবে। ২০১৫ সালে ১৫ ম্যাচে ৫১.৬৯ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে সৌম্যর রান ৬৭২। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটা প্রায় একাই জিতিয়ে দিয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। দুর্দান্ত শুরুটাই কি তবে তাঁর কাছে চাপ হয়ে গেছে? যদিও সিডনিতে উড়াল দেওয়ার আগে সৌম্য বলেছিলেন, দুঃসময়কে তিনি চাপ হিসেবে নিচ্ছেন না, আমার কাজ রান করা, ভালো খেলা। ভালো না খেললে সমালোচনা হবে। এটা আমাকে মেনে নিতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই প্রেরণাদায়ী একটা ইনিংস আছে সৌম্যর। গত বিশ্বকাপে কিউইদের সঙ্গে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। সৌম্য কি নিজেকে খুঁজে পাবেন নিউজিল্যান্ডে? রওনা হওয়ার আগে আশার কথাই শুনিয়েছিলেন তিনি, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বলতে গেলে ওখান থেকেই শুরু। যেহেতু খারাপ সময় যাচ্ছে, দেখি ওখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারি কি না... এখনো পারেননি। যত সময় এগোচ্ছে, সৌম্যর পথটা ক্রমশ পিচ্ছিল হয়ে উঠছে। শঙ্কাটা হচ্ছে, পিচ্ছিল পথে পাড়ি না দিতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে আরেকটা প্রতিভা অকালে না হারিয়ে যায়! সৌম্য এমন এক ব্যাটসম্যান, যার খেলা দেখার মধ্যেও আছে আনন্দ। নিজের জন্য না হোক, অল্প সময়েই বেশ বড় ভক্ত দল জুটিয়ে ফেলা সেই সমর্থকদের জন্যও হলেও নিশ্চয়ই লড়াই চালিয়ে যাবেন সৌম্য।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2itsQY6
December 29, 2016 at 10:11PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন