রেজাউল করিম রাজু, টেক্সাস থেকেঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি অনেকটাই শীতের চাদরে ঢাকা, কুয়াশাচ্ছন্ন দিন গড়িয়ে নেমে এলো মৃদু বৃষ্টির মূর্ছনা – এমন-ই আবেগি সন্ধ্যায় গত ৪–ঠা ডিসেম্বর টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন শহরে অনুষ্ঠিত হলো এক অনবদ্য সংগীতানুষ্ঠান । আয়োজক “সুরাঙ্গন মিউজিক স্কুল” হিউস্টন, টেক্সাস। বাংলা গানের সুর মূর্ছনায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল হিউস্টনের সুর অডিটোরিয়াম । প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে উঠা এক গুচ্ছ কচি প্রাণ আর বাংলার প্রতি তাদের প্রাণের ভালবাসায় মিষ্টি সুরে বাংলা গান, আবৃতি ও নৃত্যে পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছিল আমাদের আবহমান বাংলা সংস্কৃতির অনন্য মোহনীয় স্বরূপ। গৌরব গাঁথা বিজয়ের মাসে প্রিয় ভুমি থেকে সাড়ে আট হাজার মাইল দূরে দর্শক মনে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল লাল-সবুজের প্রিয় বাংলাদেশ ।
সুরাঙ্গন মিউজিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রুপা ঘোষ উদ্বোধনী সংগীত “জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রন” দিয়ে বরন করে নেন অতিথিদের । অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সাজানো হয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের দলীয় ও একক পরিবেশনা দিয়ে । মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতি আর তাদের প্রতি বিন্ম্র শদ্ধা জানিয়ে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়- “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না”। ভালবাসায় পতাকার আদলে লাল সবুজের পোশাক, সুললিত কণ্ঠে বাংলার সুর -গান, কবিতা আর নৃত্যের পসরা সাজিয়ে উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে সুরাঙ্গন পরিবার । সবার কন্ঠে বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারনে গান – কবিতা শুনে যেন ভ্রম হয়, তারা কী সত্যিই প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম?
প্রবাসে আগামী প্রজন্মে বাংলাকে ছড়িয়ে দেয়া এবং বিশুদ্ধ চর্চার মধ্য দিয়ে “বাংলা সংস্কৃতির সমৃদ্ধ হেরিটেজ” তৈরি – এ মহৎ উদ্যগে সুরাঙ্গন মিউজিক স্কুলের প্রচেষ্টা অনবদ্য ও প্রশংসনীয়।
গানের সুরে মোহিত হতে হতে কখন যে শিশু কিশোরদের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সমাপ্তি ঘটে যায় সে ব্যাপারে উপস্থিত কারো খেয়ালই ছিল না …! এই পর্বে অংশগ্রহন করে সুরাঙ্গন মিউজিক পরিবারের প্রিয়ন্তী, গ্রন্থি, নাঈজা, সারণি, তিন্নি, সায়ন, পূর্নতা, পুষ্পিতা, আরিতা, তিথি, শাওন, পলিন, দিপিকা, সিরিন, সোনিয়া, ভানিনি, সিনা, ডোনা, সিদ্রা, শ্রেয়া, পূজা, মুক্তা, স্মিতা, আলি, ও আরিয়ান ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল তবলা কনসার্ট, তবলা যন্ত্রে হাতের পরশে মনের নানাবিধ সুর তোলা যায় – তারই এক জাদুকরী উপস্থাপনা ছিল “প্রানা মিউজিক স্কুল” এর ছাত্রদের পরিবেশনায় । বরেন্য অতিথদের মধ্যে ছিলেন হিউস্টনের স্বনাম ধন্য শিল্পী কমলপ্রিয়া রায়, অমিত দে, রাজাবাঙ্গা, বিপ্লব সমদ্দার সহ আরও অনেকে। কচি- কাঁচাদের সুরের দোলার পাশাপাশি কমলপ্রিয়া ও অমিত দে-র পর পর কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, এবং রাজাবাঙ্গা ও বিপ্লব সমদ্দারের যুগলবন্দিতে “তিনতাল লহরা” – উপস্থিত দর্শকদের সুরের এক ভিন্ন মাত্রা উপহার দেয়। তনবলায় ছিলেন রাজা বাঙ্গা, মন্দিরায় অলোক রায়, বেহেলায় ছিলেন বিপ্লব সমদ্দার এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সঞ্চালী বোস । সুরাঙ্গনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত এই বিশেষ অতিথিদের সন্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রতিবারের মত এবার ও শিক্ষার্থীদের চমৎকার সব পরিবেশনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানের এই পর্বে স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে সননদপত্র বিতরন করেন স্কুলের অধ্যক্ষা ও পরিচালক রুপা ঘোষ। সুরে উজ্জীবিত দর্শকদের পক্ষ থেকে এ সময় গান শোনানোর অনুরোধ আসে দূর প্রবাসে বাংলা গানের সুর সঞ্চারিনী হিউস্টনে সকলের প্রিয় “রুপা-দি”-র কাছে । দর্শকদের অনুরোধে পর পর কয়েকটি রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীত পরিবেশন করে উপস্তিত সকলকে এক স্মরণীয় সংগীতসন্ধ্যা উপহার দেন আমাদের প্রিয় রুপা-দি ।
প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্ম, যারা স্বদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও অন্তরে লালন করে চলেছে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । তাদের সুন্দতম পরিবেশনা এবং “বাঙ্গালি কালচারাল হেরিটেজ” এর মধ্য দিয়ে নিজেদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি মূলধারার লোকজন ও বিশ্ব আঙিনায় উপস্থাপন করার এই আয়জনে আন্তরিক ধন্যবাদ, সেই সাথে কৃতজ্ঞতা সুরাঙ্গন মিউজিক পরিবারের সব্বাইকে ।
রেজাউল করিম রাজু, হিউস্টন, টেক্সাস।
from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2gNiKjp
December 11, 2016 at 06:12AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন