ময়মনসিংহ, ১৫ ডিসেম্বর- শেরপুর মহাসড়ক ধরে ময়মনসিংহ থেকে কলসিন্দুর প্রায় ৬০ কিলোমিটারের পথ। গাড়িতে আড়াই ঘণ্টায় ওই পথ পাড়ি দিয়ে কোচিং করাতে যেতেন মকবুল হোসেন। তিন বছর তাদের নিয়ে কাজ করার ফলটাও পেলেন হাতেনাতে। তার কোচিংয়েই গতকাল জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতে নিল ময়মনসিংহ জেলা। আসরটিতে জেলা দলের আবরণে খেলেছে কলসিন্দুর স্কুলের মেয়েরা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে নাম লেখানোর পথে এ স্কুলের মেয়েদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিশোরী ফুটবলারদের আসর দিয়ে এ পথ ধরেই উঠে এসেছিল সানজিদা-মার্জিয়ারা। গতকাল সাজেদা-আমেনারা প্রমাণ করল বড়দের দেখানো পথে হেঁটে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা তৈরি! ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুর। গারো পাহাড় ও সাদা মাটির বিরল পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে অবস্থিত এ গ্রাম। যেখানে জীবনধারণের আধুনিক অনেক উপকরণই নেই। এই তো সেদিন এ গ্রামে বিদ্যুত্ পৌঁছল! গ্রামে সাধারণত ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে। কথিত আছে কলসিন্দুরে পাখির কলকাকলি ও ফুটবল খেলার শব্দে ঘুম ভাঙে! এ দেশের সমাজ ব্যবস্থায় ফুটবল উন্মাদনায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা ঢের এগিয়ে। কলসিন্দুরে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফুটবলে এখানকার ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যোজন যোজন এগিয়ে। কলসিন্দুরের কিশোরীদের স্বপ্নটাও ফুটবলকেন্দ্রিক। ১২ গোল করে জেএফএ কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া সাজেদার কণ্ঠে যার বহিঃপ্রকাশ, আমি আগেও জাতীয় পর্যায়ে খেলেছি। ছিলাম তাজিকিস্তান জয় করা অনূর্ধ্ব-১৪ দলেও। সে ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি। কলসিন্দুরে ফুটবলটা কেবল নেশায় সীমাবদ্ধ নেই, এটি ক্রমেই পেশার দিকে ঝুঁকছে। যদিও দেশের নারী ফুটবল এখনো পেশাদার কাঠামোয় আসেনি। তার পরও ফুটবল খেলে অনেক নারী তো আয় করছেন। জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা মার্জিয়ার ছোট বোন তানিয়াও ফুটবলের মাধ্যমে পরিবারের জন্য কিছু করতে চায়, আমিও বড় ফুটবলার হতে চাই। খেলতে চাই জাতীয় দলে। পরিবারে ও (মার্জিয়া) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার মতো আমিও কিছু একটা করতে চাই। কলসিন্দুরের মেয়েদের মাঝে যারা ফুটবল স্বপ্নের বীজ বুনেছেন, তাদের একজন মকবুল হোসেন। কেবল কলসিন্দুর নয়, এ কোচ ময়মনসিংহের অন্যান্য অঞ্চলেও খেলাটির মাধ্যমে নারী বিপ্লব ঘটাতে চান, কলসিন্দুরে মেয়েদের নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ হচ্ছে। আমি এখন নান্দাইল উপজেলায় মনোযোগ দেব। গড়ে তুলব আরেকটি লড়াকু দল। সদ্য সমাপ্ত আসরে দেখা পেয়েছেন একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারের। তাতে উচ্ছ্বসিত নারী জাতীয় দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন, অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলা ছয়-সাতজন জেএফএ কাপে খেলেছে। তার বাইরেও অনেক প্রতিভাবান মেয়েকে দেখলাম, যারা আগামীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য তৈরি হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিভাবান নারী খেলোয়াড় উঠে আসায় স্বস্তিও ছিল এ কোচের কণ্ঠে, ধারাবাহিকভাবে মেয়েরা উঠে আসছে। এটা বাংলাদেশের নারী ফুটবল উন্নয়নের সিঁড়ি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করতে হলে এ ধারা বজায় রাখতে হবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচের লম্বা বাঁশির পর ময়মনসিংহ ও রংপুরের মেয়েদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। ৬-০ গোলে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করার পরও এমন আবেগহীন ময়মনসিংহ। হতাশার লেশমাত্র ছিল না রংপুরের মেয়েদের মাঝেও। পরাক্রমশালী ময়মনসিংহ, রংপুর তাই ম্যাচের আগেই হয়তো হেরে বসেছিল! এ কারণেই ফাইনালের উত্তাপ টের পাওয়া গেল না। একপেশে ফাইনালে একাই চার গোল করেছে সাজেদা। রুজিনা ও শামসুননাহার করেছে বাকি দুই গোল। ময়মনসিংহের দাপটের আসরেও সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছে রংপুর জেলা দলের ডিফেন্ডার রুনা।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2hufLA5
December 15, 2016 at 07:05AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top