মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: প্রবাসী অধুষ্যিত এলাকা হিসেবে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিচিত। এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ স্ব-পরিবার যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু বিশ্বনাথের একটি গ্রামের প্রায় দুইশতাধিক শিশুই প্রতিবন্ধি। দেশের অন্যকোথাও এমনটি সত্যিই বিরল। উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের সেই আমতৈল গ্রামটির অবস্থান। গত শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদকের কাছে আমতৈল গ্রামের এ তথ্যগুলো বেরিয়ে আসে।
সরেজমিনে গ্রাম পরিদর্শকালে জানাযায়, ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম আমতৈল। এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এরা দিন আনে দিন খায়। একটি অজপাড়া গাঁ। বেশীর ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। অবহেলিত ও অনুন্নত গ্রাম। গ্রামটির অবস্থান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে আমতৈল গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। লোকসংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে গ্রামে রোগ ব্যাধি তাদের নিত্যসঙ্গী।
অনলাইন সংবাদকর্মী গ্রামে এসেছেন শুনে প্রতিবন্ধি পরিবারের লোকজন তাদের প্রতিবন্ধি শিশুদের নিয়ে জড়ো হতে দেখা যায়। এরই মধ্যে প্রতিবন্ধি তামিম আহমদ, মাসুদ আহমদ, রেদওয়ান, তাহমিদ, সাহেল আহমদ, ছাবেরা বেগম, সাফিয়া বেগম, সুমানা বেগম ছুটে আসে। এরা সবাই জন্মের পরপরই প্রতিবন্ধি হয়ে পড়ে। গ্রামে শতাধিক প্রতিবন্ধি শিশু বঞ্চিত হচ্ছে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে। ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একেকজন প্রতিবন্ধি শিশু রয়েছে। গ্রামের ১নং ওয়ার্ড জমশের পুরে প্রায় ৫০ জন, ২নং ওয়ার্ডে আমতৈল ৭৫ জন এবং ৩নং ধলিপাড়ায় প্রায় ৭০ জন শিশু কিশোর ও বয়স্ক প্রতিবন্ধি রয়েছে। কোনো পরিবারে একাধিক শিশু প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের কেউ শারিরীক প্রতিবন্ধী, কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী কেউ বাক প্রতিবন্ধী আবার কেউ লিঙ্গ প্রতিবন্ধি। প্রায় ২৫ হাজার লোকের বসতিপূর্ণ এই গ্রামের মানুষের জন্য সরকারি সহায়তায় নেই কোনো সেনিটেশন সুবিধা। দারিদ্রকবলিত ও ঘনবসতিপূর্ণ বাড়িগুলোতে মানুষের অসচেতনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অগোছালো বাড়িঘর নির্মানের কারণে এলাকার মানুষজন প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া, আমায়শয়সহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু কিশোর থেকে সকল বয়সের মানুষ। বিশেষ করে গর্ভবতি মায়েদের বেলায় ঘটছে মর্মান্তিক ঘটনা। গর্ভজাত মায়ের অপুষ্টি, অসেচতনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গর্ভকালিন সময়যাপন, যা প্রতিবন্ধি শিশু জন্ম নেয়ার মৌলিক কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
পানি নিষ্কাষনের চরম দুর্ভোগে রয়েছে এই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গ্রামের ভিতরকার আমতৈল বাজারসহ প্রতিটি জনপদে দুর্গন্ধ ও ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পরিবেশ। যার ফলে স্বাভাবিক পরিবেশে বড় হওয়া একজন লোকের পক্ষে এ অঞ্চলে বসবাস অযোগ্য বিবেচিত হবে বলে মনে করেন এলাকার লোকজন। চরম এ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা মা ও শিশুদের ভবিষ্যত বিপর্যস্ত হওয়ার কারণ সমূহের অন্যতম বলেও মনে করেন তারা। এভাবে প্রতিটি বাড়িতে, প্রতিটি ঘরে এমনকি প্রতিটি পরিবারে প্রতিবন্ধিদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আগামী ১০ বছরে এই এলাকায় প্রতিবন্ধির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য সচেতন মহলের।
এলাকার সমাজসেবক মাহতাব উদ্দিন বলেন-মা বাবার অসচেতনতা ও ঘনবসতিপূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেই মূলত প্রতিবন্ধি শিশুর জন্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল খায়ের বলেন, গ্রামে প্রায় ২৪৫ জনের মতো নানারকম প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছেন। যারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছে না। তবে কেউ প্রতিবন্ধি ভাতা পায়নি বলে তিনি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার মো.ইয়াসিন আরাফাত বলেন, গর্ভকালিন মা-বাবার অসেচতনতা ও অপুষ্টি জনিত কারণই মূলত প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি না করলে এ সমস্যা নিরসন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, এটি একটি ঘনবসতি গ্রাম। গ্রামের লোকজন বিভিন্ন সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগছেন। অনেক পরিবারেই প্রতিবন্ধি শিশু রয়েছে। তাদের ভাতার ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি জোর দাবি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2juT3sV
January 09, 2017 at 09:22PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন