নিজস্ব প্রতিবেদক ● ‘বেকার অভিশপ্ত জীবন নিয়ে অনেক দিন ঘুরা ফেরার পর স্বপ্ন জাগলো ইউরোপ মহাদেশে পাড়ি দেওয়ার। সেখানে গিয়ে টাকা-পয়সা রোজগার করে, বড় ব্যবসা করব। জীবনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে রওনা হই ইউরোপ মহাদেশে দালালের মাধ্যমে। কিন্তু দালাল চক্র প্রথমে নিয়ে যায় দুবাই। সেখান থেকে চোরাই পথে ওমান-ইরান-তুর্কী যাই। তুর্কী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তারা আবার ইরানের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে ইরানের পুলিশ পাঠায় আফগানিস্তান পুলিশের কাছে। আফগানিস্তান পুলিশ তাদের নাগরিক না বলে পাকিস্তানের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পাকিস্তানের পুলিশ আমাকে বাংলাদেশে না পাঠিয়ে একটি মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। ওই মাপিয়া চক্র চোখ বেঁধে মাইক্রো যোগে একটি দ্বীপে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে চোখ খুলে গায়ের সব কাপড়-চোপড় খুলে নিয়ে যায় আর বলে পাকিস্তানের পুলিশ তোমাকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তুমি বাড়িতে ফোন কর। টাকা পাঠানোর জন্য। তোমাদের কিডনাপ করা হয়েছে। এই হিসেবে প্রায় ৪৫ দিন বন্দী থাকার পর বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকা পাঠালে তারা আমাকে দেশে পাঠায়।’
আফসোস ও হতাশার সুরে কথাগুলো বললেন নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রবপুর ইউপির ভুলুয়াপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে তাজুল ইসলাম।
বাড়িতে এসে কি করব কিছুই ভাবতে পারছি না। কিছু দিন ঘুরা ফেরার পর মুরগী পালনের উদ্যোগে নিয়ে শুরু করে দেই মুরগী পালন। মুরগী ব্যবসায় বেস লাভবান হই। পরে ভাবি মুরগী পালনে পাশা-পাশি আর কি করা যায়। হঠাৎ মাথাই আসলো কোয়েল পাখি পালন করলে কেমন হয়। যেমনি ভাবনা, তেমনি কাজ।
একটি সেডে ৫ হাজার কোয়েল পাখি দিয়ে পালন শুরু করে তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রথমে তেমন কোনো লাভ হয়নি। প্রতিদিন কোয়েল পাখি প্রায় দু’একটা করে মারা যাচ্ছিল। পরে চিন্তা করলাম মুরগীকে যে ভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ঠিক সে ভাবে কোয়েল পাখি কেও ভ্যাকসিন দেওয়ার শুরু করি। পরে দেখি কোয়েল পাখিগুলো আর মারা যায় না। দিন দিন বাড়তে শুরু করে কোয়েল পাখিগুলো। ডিমও পাড়া শুরু করে দেয়। কয়েক দিনের ডিম জড়ো করে বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভ পাই। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫ শত ডিম বাজারযাত করা হয়। শুরু হয় ভাগ্য বদলের দিন।
তাজুল ইসলাম বলেন, কিছু দিন ঢাকা গিয়ে কোয়েল পাখির একটি খাঁমারে ৫-৬ মাস কাজ করি। ডিম থেকে কি ভাবে বাচ্চা উৎপাদ করা যায়, তা শিখি। পরে এলাকায় এসে নিজের খামারে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন শুরু করি। পরে দেখা দেয় সাফল্যের চাবি কাঠি। বর্তমানে প্রায় ১২-১৪ হাজার কোয়েল পাখি পালন করছি।
এসব কোয়েল পাখির জন্য প্রতিদিন ১-২ বস্তা খাদ্যয়ের প্রয়োজন হয়। খামার থেকে দিনে এক থেকে দেড় হাজার ডিম এবং মাসে ৪ হাজার পাখির মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। এতে তাজুল ইসলামের প্রতি মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে ও তার খামারে ২ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, চার হাজার ডিম বিক্রি করে ১২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু একই পরিমাণ ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ডিম বিক্রির চেয়ে বাচ্চা উৎপাদনে বেশি লাভ হয়। এ জন্যে তাজুল ইসলাম নিজেই তার খামারে বাচ্চা উৎপাদন করে থাকেন। এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: শাহনেওয়াজ আলম জানান, কোয়েল পাখি পালন লাভজনক ব্যবসা। যারা এটি বাণিজ্যিক ভাবে পালন করবে তারা আরো বেশি লাভবান হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ওষধ দেওয়া ও কি ভাবে পালন করা যায় তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
The post কোয়েল পাখি পালনে ভাগ্য বদল appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2kctzhF
January 31, 2017 at 08:40PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন