মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: দীর্ঘদিন পর বিশ্বনাথ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে। নেতৃত্ব পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও আ.লীগ শীর্ষ নেতাদের কাছেও নিজেদের অবস্থার তুলে ধরতে সচেষ্ট সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানিয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারী শেষের দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ইতি মধ্যে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ বিভিন্ন ইউনিটিরে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফলে বিশ্বনাথ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন শিগগিরই উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এতে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনার বিষয় কারা আসছেন নেতৃত্বে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে অল্প কয়েকটি নামই এসেছে ঘুরেফিরে। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল ৩ মাস। কিন্তু সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেই আহবায়ক কমিটি দিয়েই খুঁড়িয়ে চলছে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় বর্তমানে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। তবে এবার নতুন কমিটি গঠন হলে বিশ্বনাথে ছাত্রলীগ আরও চাঙ্গা হবে বলে তৃনমূল নেতাকর্মীরা জানান।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০১২ সালের ৩০ জুন। ফয়জুল ইসলাম জয়কে আহবায়ক ও জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মালিক সুমন ও মুহিবুর রহমান সুইটকে যুগ্ম আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ ছিল ৩ মাস। এ সময়ের মধ্যেই সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার দায়িত্ব ছিল আহবায়ক কমিটির। কিন্তু ৩ মাসের স্থলে প্রায় সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সম্মেলনের মুখ দেখেননি উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিও তাই ঘোষিত হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠনের পরপরই ছাত্রলীগ দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে ভিতরে ভিতরে তাদের গ্রুপিং থাকলে সম্প্রতি তারা প্রকাশ্যে দুটি গ্রুপ অবস্থানে রয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর উপজেলা সদরে পৃথকভাবে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী একপক্ষ পালন করলেও অপর পক্ষ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপজেলায় পালন করেনি।
দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছরেও সম্মেলন না হওয়ায় এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। হতাশায় ভোগছেন নেতাকর্মীরা। অনেকেই আবার ক্ষুব্দ। তবে খুবই শিগগিরই ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছে এমন আভাস দলীয় নেতাকর্মীর কাছে পৌছলে, তারা দলীয় পদ-পদবি পেতে লবিং শুরু করেছেন বলে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান।
জানা গেছে, উপজেলা কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা শোডাউন, মতবিনিময় ইত্যাদি করলেও কমিটি নির্ধারিত হবে মূলত লবিং আর গ্রুপিংয়ের জোরেই। জেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন প্রভাব মিলিয়ে প্রায় দুটি গ্রুপ কমিটিতে থাকার চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার কমিটি হবে। দুটি গ্রুপের নেতাদের কমিটিতে স্থান দেয়া হতে পারে।
তৃণমূল ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় বেশ এগিয়ে আছেন কয়েকজন। এর মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন, ফয়জুল ইসলাম জয়, আবদুল মালিক সুমন, মুহিবুর রহমান সুইট, শিতল বৈদ্য। আর সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় তারা হলেন, শাহ বুরহান আহমদ রুবেল, কাওছার আহমদ, খালেদ আহমদ, আরিফুল, জুবায়ের আহমদ জয়, কামরুল ইসলাম, শিপন আহমদ, আলী আহমদ জুয়েল,মিয়াদ আহমদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে একদিকে যেমন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের গ্রুপিং কাজ করছে তেমনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পছন্দের প্রার্থীদের পদ পাইয়ে দিতে সবাই কমবেশি ব্যস্ত থাকবেন। তবে যাদের ছাত্রত্ব নেই কিংবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় এমন কমিটি গঠন না করার জন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি তারা আহবান জানান।
কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিশ্বনাথ ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু খান বলেন, সম্মেলন হলে তৃণমূলের কর্মীদের মতামতের প্রতিফলন ঘটত। তবে যেভাবেই কমিটি হোক যোগ্য নেতারাই দায়িত্ব পাবেন আশা করি। সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন-এমন নেতৃত্ব না হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শীতল বৈদ্য বলেন, কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। কমিটি হলে ছাত্রলীগের প্রাণ ফিরে পাবে। তবে খুব শিগগিরই কমিটি গঠন হবে বলে এমটাই শুনা যাচ্ছে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী বলে জানান।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট সায়েদ মিয়া বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মিদের নিয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা খুবই জরুরী। তবে শুনেছি খুব শিগগিরই ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মুহিবুর রহমান সুইট বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বনাথ ছাত্রলীগ অনেক শক্তিশালী। জেলা ছাত্রলীগ চাইলেই উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন করতে পারে। এজন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। দলীয় গ্রুপিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ একটি বড় সংগঠন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা মতপ্রার্থক্য থাকতে পারে। নতুন নেতৃত্ব আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ফয়জুল ইসলাম জয় বলেন, বিশ্বনাথে ছাত্রলীগের কোন কোন্দল কিংবা গ্রুপিং নেই। ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে ত্যাগী ও মাঠের নেতাকর্মিদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা খুবই জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মীসভা আহবান করা হবে। এরপর আহবায়ক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2iskXnR
January 13, 2017 at 10:01PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন