নিজস্ব প্রতিবেদক ● প্রতারক চক্রের নিয়ন্ত্রনে এখন কুমিল্লা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন এখানে আসা লোকজন। তেমনি একজন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কলাদী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (রতন)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবা মরহুম আবুল হোসেন শ্রী হেমন্তচন্দ্র ঘোষ গংদের পক্ষে আমমোক্তার বেমেন্দ্র ঘোষ থেকে ২৫/০৬/৫৭ইং তপসিল চৌহদ্দি জিলা ত্রিপুরা ২৪৩নং তৌজি থানা মতলব, ১৫৫ নং মৌজা কলাদি মধ্য ১০৩ খতিয়ানে সাফ কবলা দলিল নং ৬০৪৩-মূলে ৫৬ শতাংশ জমির মধ্যে সাড়ে ৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরে জমি দখল নিয়ে নিজের নামে নামজারী করে ভবন নির্মাণ করেন। আমার পিতার জীবনদ্দশা থেকে সেখানে আমরা বিগত ৫৯ বছর ধরে বসবাস করে আসছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর আমরা ছয় ভাই ও তিন বোন এই জমি নিজ নিজ নামে নামজারী করি। আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে জমি হস্তান্তর করার প্রয়োজনে আমরা দলিলের অবিকল নকল অন্তত ৫/৬ বার কুমিল্লা সদর ভুমি অফিসে থেকে উত্তোলন করি। আমাদের সব দলিলেই জমির পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫৫শতাংশ জমি ক্রয় দেখানো হয়। অথচ, বিগত ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর মতলব পৌরসভার বিরোধ মিমাংসা বোর্ড থেকে (মোকাদ্দমা নং ৬/২০১৬) একটি চিঠি পাই। ওই চিঠিতে গত ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয় আমাদের। চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা উপস্থিত হয়ে জানতে পারি, বিবাদী যয়দেব ঘোষ (পিতা ফান ভূষন, ব্রাহ্মনদিয়া উপজেলা, বাবুগঞ্জ, জেলা বরিশাল) নামের এক লোক কুমিল্লা সদর রেকর্ড রুম থেকে ২১/০৯/১৬ইং তারিখে অবিকল নকল (দলিল ৬০৪৩) দলিল সভায় উপস্থিত করেন। এ দলিলে ভূমির পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫৫ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ জমি উল্লেখ করে। দলিল জালিয়াতির এ ঘটনায় মতলব (দ:) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।’
জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারী ভুয়া দলিল মালিক যয়দেব ঘোষ (৪৪) ও তার দালাল মতলব (দ:) উপজেলার শৈলপাড়া গ্রামের আ: রহমানের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (৫৫) কুমিল্লা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসে। পরে দলিল লিখকরা তাদের আটক করে। অফিসের সামনে প্রকাশ্যেই গণধোলাই দেয় প্রতারকদ্বয়কে। এ ঘটনা জানতে পেরে সাব-রেজিষ্ট্রার রফিকুল ইসলাম খবর দেন কোতয়ালী থানা পুলিশকে। সংবাদ পেয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী থানার এসআই মোহাম্মদ বাদল মিঞা উদ্ধার করে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করেন। তবে, জালিয়াতি ঘটানার তদন্ত কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেল হাজতে আটকে রাখার প্রার্থনা করেন পুলিশ কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গিয়াস উদ্দিন এবং জয়দেব ঘোষ এসেছিলেন কুমিল্লা সাব রেজিষ্টার অফিসের দলিল লেখক মো: খোরশেদ আলম এবং একই পেশায় নিয়োজিত তার পুত্র ছবির উদ্দিনের কাছে। পিতা খোরশেদ আলম কাজে অনিয়মিত হলেও পুত্র ছবির উদ্দিন নিয়মিত। এই ছবির উদ্দিনই দলিলের সরকারি বালাম বইয়ে থাকা দলিলের প্রামাণকৃত একাংশের পাতা ছিড়ে ফেলে দেয়। ফলে ভূমির পরিমান ৫৫.৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫.৫ শতাংশ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কুমিল্লার সাব-রেজিষ্ট্রার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে রেকর্ডকিপার আলী আক্কাস ও সহকারী হেদায়েত হোসেনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এই সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কুমিল্লা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আবু হানিফ সাংবাদিকদেও বাধাঁ প্রদান করেন। আবু হানিফ রেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে। বালাম বই ছিঁড়ে ফেলা, দালাল ও প্রতারকচক্র আটক, মারধর এবং থানায় মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাব-রেজিষ্ট্রারের সম্মুখেই দায়িত্বরত সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন আবু হানিফ। প্রতারক ও দালালচক্রের নেতা আবু হানিফ বেশ দম্ভের সাথেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তুই কোন সাংবাদিক, তোর চাইতে বড় বড় সাংবাদিকরাও-ত রেজিষ্ট্রি অফিসে আসে না। এখনই আমার অফিস থেকে বের ’হ, না হইলে বেশি ভালো হবে না। কুমিল্লার বড় বড় সাংবাদিকদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে।’
The post প্রতারকচক্রের নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2iFRGnb
January 11, 2017 at 08:22PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন