ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের তরুন মিঠু বিশ্বাস ও আমেরিকান তরুনী এলিজাবেথ এর সংসার কেমন চলছে। ফেসবুকে প্রেম অত:পর বিয়ে করা এই নব দম্পত্তির সংসার কেমন চলছে ?
উল্লেখ্য, প্রেমের কোনও দেশ-কাল-পাত্র নেই। এই প্রেমের টানেই সমাজ-সংসারের সব প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনের গল্প নতুন নয় ইতিহাসে।
তেমনই এক নজির স্থাপন করলেন ঝিনাইদহের মিঠুন বিশ্বাস আর মার্কিন তরূণী এলিজাবেথ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সূত্রে পরিচয় তাদের। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, প্রেম। তারপর বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব ঘুচিয়ে এই যুগল এখন পরিণয়ে আবদ্ধ। ঝিনাইদহে মিঠুনের প্রেমের সফল পরিণতির এই গল্প তাই এখন ঝিনাইদহের মানুষের মুখে মুখে।
মিঠুন-এলিজাবেথের গায়ে হলুদ
প্রণয় থেকে পরিণয়ের এই গল্প শুনতে যাই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের রাখালগাছি গ্রামে। এই গ্রামেই বসবাস নির্মল বিশ্বাসের ছেলে মিঠুন বিশ্বাসের। সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিঠুনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটর সিটির রয় এমলিকের কন্যা এলিজাবেথের।
মিঠুন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকে এলিজাবেথের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আমরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলি। আড়াই বছরের সম্পর্কের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেই বিয়ে করার। দু’জনের পরিবারকেও সেটা জানাই।’
চার্চে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা
মিঠুন জানান, এতে তার পরিবার কোনও আপত্তি না জানালেও বাগড়া দেয় এলিজাবেথের পরিবার। মিঠুনের সঙ্গে পরিচয়ের আগে এলিজাবেথ বাংলাদেশ বলে কোনও দেশ আছে বলে জানত না। মিঠুনের কথা পরিবারকে জানালে এলিজাবেথের পরিবার তার কাছে বাংলাদেশকে উগ্রপন্থী মুসলিম দেশ বলে ধারণা দেয়। বাংলাদেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতিও দেখায় এলিজাবেথের পরিবার। তবে মিঠুনের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনে পরিবারের নিষেধ অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নেয় এলিজাবেথ।
বিয়ের পর মিঠুন-এলিজাবেথ দম্পতি
মিঠুন বলেন, ‘এলিজাবেথ গ্র্যায়েজুয়েশন শেষ করেছে। এরপর পরিবারের বাধা পেলে সে হতাশ হয়ে পড়ে। কিছুদিনের চেষ্টায় সে ওয়ালমার্টে চাকরি পায়। টাকা জমানোর জন্য কয়েক মাস চাকরি করে সে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।’ মিঠুন জানান, এলিজাবেথের বাংলাদেশে আসার খবর পেয়ে তার পরিবারের সবাই খুশি হয়। ২ জানুয়ারি পরিবারের সদস্য নিয়ে মিঠুন এয়ারপোর্ট থেকে তাকে নিয়ে আসেন নিজের গ্রামে। মিঠুনের পরিবারের সম্মতিতে ৪ জানুয়ারি তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। ৯ জানুয়ারি খুলনার শালক এজি চার্চে বিয়ে হয় তাদের।
বিয়ের পর চার্চের বাইরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিঠুন ও এলিজাবেথ
মিঠুন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেসবুকের সূত্রেই আমাদের পরিচয়, প্রেম। শেষ পর্যন্ত এখন আমরা সুখে-শান্তিতে সংসার করছি। এলিজাবেথ বাংলা বলতে শিখছে। বিয়ের আগে ওর পরিবার বাধা দিলেও এখন তারা এই বিয়ে মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকবার কথাও হয়েছে এলিজাবেথের বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে। তারাও এখন খুশি।’
এই ঘটনা গোটা এলাকাতেই আলোড়ন তৈরি করে। এখন আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই দেখতে আসছেন মিঠুন-এলিজাবেথ দম্পতিকে। এ ঘটনায় উচ্ছ্বাসও জানিয়েছেন তারা। কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু এ ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেমের টানে সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের ছোট্ট একটি গ্রামে এক তরুণীর এভাবে ছুটে আসা সত্যিই বিরল একটি ঘটনা। তারা বিয়ে করেছে। দোয়া করি, তারা যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে।’
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2k44DeC
January 25, 2017 at 11:35PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.