নিজস্ব প্রতিবেদক ● বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের কার্যক্রম দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সীমিত জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করা সরকারের এ দপ্তরটি ইতোমধ্যে স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে আগ্রহের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।
কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো: আছাদুল ইসলাম জানান, অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত APA অনুযায়ী নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। অত্র কার্যালয় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এরকম ৮৮টি বাজার অভিযান পরিচালনা করবে। আজ অবদি এরকম ৬৪টি বাজার অভিযানের মাধ্যমে ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০,৯৩,৩০০/- (দশ লক্ষ তিরানব্বই হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান ছাড়াও সাধারণ ভক্তাদের কাছ থেকেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। এপর্যন্ত সাধারণ ভক্তারা ১৬টি অভিযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১২ অভিযুক্ত পক্ষকে। প্রমাণিত হয়নি ১টি। আর সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১টি। জরিমানাকৃত ১২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১,০৪,০০০/- (এক লক্ষ চার হাজার) টাকা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগকারীরা পেয়েছেন ২৬,০০০/- (ছাব্বিশ হাজার) টাকা।
এদিকে যেখানে অনেক পুরাতন দপ্তর এখনও খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সেই সময় ২০১৫ সালে তৎকালীন জেলা জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ কে এম মানুনুর রশিদের ঐকান্তিক সদিচ্ছায় কালেক্টরেট ভবনের একটি রুমেই এ দপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়।
কাগজ-কলমের হিসেবে নবীন একটি দপ্তর হিসেবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি নজীর হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। যেখানে সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়, টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেখানে এ অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে উল্টো টাকা পাওয়া যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৭৬(৪) ধারায় এমন একটি বিধান সংযুক্ত রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, “অত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দায়ের করা হইলে এবং তদন্তে সেটি প্রমাণিত হইলে দোষী ব্যক্তিকে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জরিমানা করা যাইবে। আরোপিত জরিমানার অর্থ আদায় হইয়া থাকিলে উক্ত আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে প্রদান করিতে হইবে।”
ভেজাল বিরোধী অভিযান ছাড়াও ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কুমিল্লা জেলাসহ অত্র জেলার সকল উপজেলায় ২টি করে সেমিনার ১টি করে ভোক্তা সমাবেশের আয়োজন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ হিসেবে এ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর বিভিন্ন বিধান সম্বলিত ৫০০০ পাম্পলেট, ৪০০০ লিফলেট ও ৫০০ পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিভিন্নপক্ষের সাথে মতবিনিময় সভা, গণশুনানির আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যেসব বিষয়ে অত্র দপ্তরে অভিযোগ করা যাবে …
লিখিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে; * কোন পণ্য বা সেবার মান বিক্রেতা কর্তৃক সংরক্ষণ করা না হলে, * ওজন বা পরিমাপে কারচুপি করলে, * বাটখারায় বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি করলে * কোন পণ্য বা ঔষধ নকল বিক্রি করলে, * পণ্য বা ঔষধে ভেজাল মেশালে, * প্যাকেটজাতকৃত পণ্যের গায়ে প্রয়োজনীয় ঘোষণা না লিখলে (যেমন- উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, ওজন, দাম ও উপাদান প্রভৃতি), * মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করলে, * মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্য ঝুকিতে ফেলে এরকম কোন পণ্য প্রস্তুত, উৎপাদন ও বিক্রি করলে, * লাইসেন্স ব্যাতীত অবৈধভাবে ঔষধ তৈরি করলে, * মিথ্যা বা চাটুকার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করলে * অদক্ষ বা অবৈধ চালক দিয়ে মিনিবাস, বাস, লঞ্চ, স্টিমার বা ট্রেন চালনা করলে * পণ্য বা সেবার তালিকা প্রদর্শন না করলে * ।
যেখানে অভিযোগ করা যাবে …
তিনি বলেন, একজন ভোক্তা তিন মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। সরাসরি কার্যালয়ে এসে (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুমিল্লা, কক্ষ নং ১০৫)। ইমেইলের মাধ্যমে ad-comilla@dncrp.gov.bd এই ঠিকানায়। ফেসবুকের মাধ্যমে (http://ift.tt/2kam0do এই পেউজে লাইক দিয়ে)। এছাড়াও প্রতারিত ভোক্তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করতে পারেন। মনে রাখতে হবে কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে এবং প্রমাণ স্বরুপ ক্রয় রশিদের কপি জমা দিতে হবে। এছাড়াও দেশের যেকোন প্রান্তের ঘটনা ইমেইলের মাধ্যমে অভিযাগ করা যাবে nccc@dncrp.gov.bd এই ঠিকানায়। বিস্তারিত জানার ও অভিযোগ ফরম ডাউনলোড করতে ব্রাউজ করা যেতে পারে www.dncrp.gov.bd এই ওয়েব সাইটে।
মূলত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বাস্তবায়ন ও আইনটির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করাই অত্র দপ্তরের মূল লক্ষ্য। আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকতা (জেলা পর্যায়ে সহকারি পরিচালকবৃন্দ), জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের ওপর ন্যস্ত। অন্য কোন নামের প্রতিষ্ঠান যদি ভোক্তার নাম করে চাঁদাবাজি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কক্ষ নং ১০৫, ফোন-০৮১-৭৩৯৩৮, ইমেইল- ad-comilla@dncrp.gov.bd যোগাযোগ করা যেতে পারে।
The post কুমিল্লায় সাড়া ফেলেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অফিস appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2jFkbSD
January 27, 2017 at 10:35PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন