আবদুর রহমান ● কুমিল্লা-নোয়খালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম থেকে নোয়াখালীর সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত সড়কটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঝূঁকিপূর্ন। গত দুই বছরে ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম থেকে নোয়াখালী সীমান্ত উপজেলা সোনাইমুড়ি পর্যন্ত এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৭৮ জনের। এদিকে, দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কটিকে প্রশস্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন হাইওয়ে পুলিশ। আর এনিয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কটি প্রশস্ত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাকসাম থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ওই আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে ২০১৫ সালে ৪১টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৮ জন। এছাড়া আহত হয় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এদিকে, ২০১৬ সালে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় লাকসাম থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ওই আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে প্রাণ গেছে ৪০ জনের। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক লোক।
এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা মনে করেন, কুমিল্লা-নোয়খালী আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অত্যান্ত বেশি। তবে যানবাহন তুলনায় ওই সড়কটির প্রশস্ততা একেবারেই কম। এছাড়া ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে অতিরিক্ত গতি থাকলে আঁকা-বাঁকা সড়কের কারনে খাদে পড়ে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে এসব দুর্ঘটনা। আবার অনেক সময় যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষেও প্রাণহানি হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লা-নোয়খালী আঞ্চলিক মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা প্রবন এলাকা হচ্ছে লাকসামের ছিলোনিয়া ব্রিজ এর আশ-পাশ। গত বছরের ২৭ আগষ্ট লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা বিমান বন্দরগামী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে একই পরিবারের ৩জনসহ ৫জন নিহত হয়েছিল। এর মাত্র ২২দিন পর ওই একই জায়গায় ১৯ সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে একই পরিবারের ৩ শিশুসহ ৫জন নিহত হন।
কুমিল্লা-নোয়খালী আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী অন্তত ৫জন গাড়ির চালক কালের কন্ঠকে বলেন, নোয়াখালী-লক্ষীপুর-চাঁদপুর এবং কুমিল্লার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব সম্পন্ন এই সড়কটিতে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে লাকসাম থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য ঝূকিপূর্ন বাঁক। যার কারনে এ এলাকাটি বেশি দুর্ঘটনা প্রবন। চালকদের ভাষ্য, কুমিল্লা-নোয়খালী আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়কটিকে আরও প্রশস্ত করতে হবে। আর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি গাড়ির চালক, হাইওয়ে পুলিশ ও সওজ কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
ওই মহাসড়কে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে নোয়াখালী সরাসরি চলাচলকারী দেশের নামি-দামি দ্রুত গতির অনেক বাস এ সড়ক দিয়েই চলাচল করে। এসব বাস সড়কের তুলনায় চরম বেপোরোয়া গতিতে চলাচল করে। যার কারনে দুর্ঘটনার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লাকসাম পৌরসভার মেয়র মো.আবুল খায়ের জানান, লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটির লাকসামের ছিলোনিয়া ব্রিজের কাছে ওই স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা হওয়ার কারনে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বেশ কয়েকবার বলেছি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ওই স্থানে গতিরোধক নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করাতে একই স্থানে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে ব্যাপক। আমার অচিরেই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে লালমাই হাইওয়ে ক্রসিং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট মো.ইব্রাহিম খলিল জানান, ঢাকা থেকে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং চাঁদপুরের সাথে যোগাযোগের সহজ পথ কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এই পথে যানবাহনের পরিমান বাড়ায় দুর্ঘটনায় ঘটছে ঘন ঘন। তাই দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি এড়াতে এই সড়কের প্রতি কর্তৃপক্ষের দ্রুত সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন জানান, কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রশস্ত করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে আমরা গ্রহন করেছি। তবে এর আগে দুর্ঘটনা এড়াতে এই পথে চলাচলকারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
The post কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কে দুই বছরে প্রাণ গেছে ৭৮ জনের appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2jJ8pZK
January 30, 2017 at 03:31PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন