নিজস্ব প্রতিবেদক ● কুমিল্লা লালমাই পাহাড়ের মধ্যে যেন এক টুকরো জাপান। সুন্দর পাহাড়ী মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বাংলাদেশ ও জাপান যৌথ উদ্যোগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ লালমাই পাহাড়ে রতনপুর এলাকায় মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুল। স্কুলটির এক বছর পূর্ণ এবং দ্বিতীয় বষের্র শিক্ষা কার্যক্রম মাধ্যমে সোমবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রথম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুলের উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন জাপানের নাগরিক মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপক তোশিকো অনিশি।
মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুলের উদ্যোক্তা তারিক-উল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা স্কুলটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমে প্রথম শ্রেণী দিয়ে শুরু করি। ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেনী ছাত্র ছাত্রীরা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া আমরা আবার প্রথম শ্রেণীতে ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি নেই। এই স্কুলটি সম্পূর্ণ জাপানের স্কুলের শিক্ষা নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, লালমাই পাহাড়ারে সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে জাপান এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে সর্ম্পূণ বিনা খরচে গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া করার জন্য আমি ৪০শতক জায়গায় দেই। জাপানীরা বছরে দুই বার এসে স্কুলটি পরিদর্শন করে যাবে। এই জায়গায় আরো একটি ভোকেশনাল স্কুল করার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে সোমবার সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যায় প্রথম শ্রেণির যারা ভর্তি হয়েছে আর দ্বিতীয় ¤্রিেণতে ওঠে বলছে জাপানি ভাষায় কোন্নি চিউয়া বাংলা করলে দাঁড়ায় শুভদিন। যে শিশুরা জাপানি ভাষায় শুভ কামনা জানাল, তারা বাংলাদেশী। স্কুলের সামনে উড়ছে বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকা। স্কুলের দেয়ালেও বাংলাদেশের সবুজের মধ্যে লাল বৃত্ত আর জাপানের সাদার মধ্যে লাল বৃত্ত পতাকার আদলে নকশা দিয়ে সাজানো। স্কুলে দুটি কক্ষ। ভেতরের বেঞ্চগুলো সাদা। শিশুদের স্কুলের পোশাক হলো সাদা শার্ট, তার একপাশে লাল বৃত্ত। শাটের্র সঙ্গে সবুজ প্যান্ট। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই শিশুরাই হবে তাদের পরিবারের প্রথম শিক্ষিত মানুষ। তাদের বাবা-মা অন্যের খেতে কাজ করেন। অনেকে দিনমজুর। অনেকের বাবা অথবা মা আলাদা হয়ে গেছেন। স্কুলের সাদা বোডের্র পাশেই জাপানি ভাষার একটি ক্যালেন্ডার টাঙানো। ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন দাড়িঁয়েছে ৪০। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ের বড় ধর্মপুরের আশপাশে এই শিশুদের বাস। স্কুলটি কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুই কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো স্কুলও নেই।
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যে শিক্ষার্থীরা এক বছর পার করেছে। এখানে গিয়ে হঠাৎ মনে হবে, লালমাই পাহাড়ের মধ্যে যেন এক টুকরো জাপান। শিক্ষার্থীরা জাপানি ভাষায় গান গাইতে পারে। ইংরেজি ভাষাতেও টুকটাক কথা বলতে পারে। আর বাংলা তো আছেই। কাগজ দিয়ে (ওরিগামি) বল, চরকি, পাতা, বিড়ালের মুখ, মাছ, ফুল, প্রজাপতিসহ অনেক কিছু বানাতে পারে। ফুটবল খেলার পাশাপাশি বাঁশ ও দড়ির বিশেষ একটি জাপানি খেলাও শিখেছে।
জানা যায়, তোশিকো অনিশিএই স্কুলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপক জাপানের নাগরিক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তোশিকো অনিশি। শিক্ষা বিষয়ক একটি কর্মশালায় যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন বছর দশেক আগে। তারপর নানাভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ছয় বছর আগে আরেক জাপানি বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় কুমিল্লার ব্যবসায়ী তারিক-উল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে বাংলাদেশে তৃণমূলের দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি স্কুল করতে চান বলে জানান তোশিকো। তারিক-উল ইসলাম মজুমদার স্কুলের জন্য জমি দিতে চান। তারপরে চলতে থাকে স্বপ্ন বিনিময়। এক বছর আগে যাত্রা শুরু করে স্কুলটি। ২০১৬ সাল শুধু প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠেছে। ২০১৭ শিক্ষা বর্ষে আবার নতুন করে প্রথম শ্রেণিতে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী মিলে এখন শিক্ষার্থী হয়েছে ৪০ জন। আপাতত স্কুলে শিক্ষক আছেন দুজন। দারোয়ান ও আয়া আছেন।
কুমিল্লার ব্যবসায়ী তারিক-উল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের জানান তোশিকো অনিশি গত ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এসে স্কুলটির উদ্বোধন করেন। তাঁর সঙ্গে স্কুল নিয়ে কথা হয় ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। তিনি জানান, তিনিসহ ৪৫ জন জাপানি নাগরিক ‘ওয়ান ড্রপ’ নামে একটি সংগঠন চালাচ্ছেন। এই সদস্যদের বাইরে বন্ধুবান্ধবরাও বিভিন্ন সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। ওয়ান ড্রপের সহায়তায় স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। স্কুল তৈরিতে ওয়ান ড্রপ ৬০ শতাংশ অনুদান দেয়। আর বর্তমানে দুজন শিক্ষক ও কর্মীদের বেতন, স্কুলের বিভিন্ন আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, বাচ্চাদের এক বেলা খাবার দিচ্ছে ওয়ান ড্রপ। স্কুলের পোশাক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ দিচ্ছেন তারিক-উল ইসলাম মজুমদার। তাঁর স্ত্রী নাহিদা আক্তার মজুমদার স্কুলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, স্কুলের প্রথম শিক্ষার্থীএখন পর্যন্ত সরকারি অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানান তারিক-উল ইসলাম মজুমদার। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলটি পরিদর্শনে এসে বিদেশি পতাকা কিভাবে টাঙাতে হয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রতিনিধিরা। তিনি বলেন, ‘নতুন বছরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের আমরা বিনা মূল্যের ৪০ সেট বই পেয়েছি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে।
এদিকে তোশিকো অনিশি জানান, আপাতত ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলটিকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তারপরও কেউ পড়তে চাইলে তখন স্কুলের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করবেন। জাপানের শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুদের ওপর কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাদের চিন্তাশক্তির বিষয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ আর জাপানের শিক্ষা পদ্ধতির মিশেলে এই শিশুদের বড় করা হবে।
The post লালমাই পাহাড়ে এক টুকরো জাপান appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2jm6slM
January 24, 2017 at 06:20PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন