ক্যালেন্ডার থেকে বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের এই বছরটি। পেছন ফিরে তাকালে ভেসে উঠবে আনন্দ-বেদনার একেকটি ঘটনা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত অলিম্পিকের বর্ণিল আয়োজন, ইউরো-কোপা আমেরিকার আসর নিয়ে আনন্দেই মেতেছিল ক্রীড়াপ্রেমীরা। তবে বছরের শেষ দিকে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় শ্যাপাকোয়েন্স ক্লাবের ফুটবলারদের মৃত্যুর খবরে মুষড়ে পড়ে বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীরা। এমনই অনেক ঘটনা স্মরণীয় করেছে বছরটিকে। ২০১৬ সাল জুড়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ঘটে যাওয়া স্মরণীয় পাঁচ ঘটনা নিয়েই প্রিয়.কম-এর এ প্রতিবেদন। ইডেনে ক্যারিবীয় উৎসব শেষ ছয় বলে দরকার ১৯ রান। কার্লোস ব্রাথওয়েটের ব্যাটে দেখা গেল নতুন রুপকথা। প্রথম চার বল থেকে টানা চার ছক্কা। দুই বল বাকি থাকতেই ম্যাচের ইতি! কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ইতিহাস গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালের পর ক্যারিবিয়ানরা ২০১৬ সালেও জিতে নেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দুইটি বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে ক্লাইভ লয়েডের পাশে নাম বসিয়েছেন ড্যারেন স্যামি। এর আগে লয়েডের নেতৃত্বে দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে ক্যারিবিয়ানরা। এদিন গ্যালারিতে উল্লাসে মাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারী দলও। স্যামিদের আগে ইতিহাস গড়ে তারাও। টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এদিন ক্যারিবিয়ান নারী দল জিতে নেয় প্রথম শিরোপা। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও জিতে নেয় ক্যারিবীয় যুবারা। স্যামিদের বিশ্বকাপ জয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে পড়ে যায় বিশ্ব ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের সেই পুরোনো দাপটের কথা। রিও অলিম্পিক অলিম্পিক শব্দটার সাথেই জড়িয়ে অনেক রোমাঞ্চ-মাদকতা। সেই রোমাঞ্চ-মাদকতাকে এবার বাড়িয়ে তুলেছিল ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী শহর রিও। ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান এই শহরটি সেজেছিল অপরুপ সাজে। চোখেমুখে রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে ব্রাজিল ও পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের আদি রাজধানী রিওতে হাজির হয়েছিলে ১১ হাজার ৩০৩ জন অ্যাথলেট। যেখানে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরেছেন ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রাণভোমড়া নেইমার। প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের হয়ে স্বর্ণ জিতেছেন বার্সেলোনার তারকা এই স্ট্রাইকার। শেষবারের মতো ট্র্যাক মাতিয়েছেন জ্যামাইকান গতিদানব উসাইন বোল্ট। বিদায় বলে দেওয়া আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাতারু মাইকেল ফেলপস শেষবারের মতো পানিতে তুলেছেন গতির ঝড়। নানাবিধ আলোচনা, বিতর্ক এবং জল্পনা-কল্পনা ছিল গেমস শুরুর আগে। জিকা ভাইরাস, নিরাপত্তা হুমকি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ড্রাগ গ্রহণের জন্য রাশিয়ার অনেক ক্রীড়াবিদ নিষিদ্ধ হওয়া, অনেক ব্রাজিলীয় মানুষের গেমসের বিরোধিতা এবং ব্রাজিলে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সফলভাবে অলিম্পিক আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সেসব ধামাচাপা পড়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত বর্ণিলভাবেই সমাপ্তি ঘটে রিও অলিম্পিকের! মেসির অবসর ও ফিরে আসা ২০১৬ সালটা কিছুটা হতাশাতেই কেটেছে লিওনেল মেসির। বার্সেলোনার জার্সিতে লা লিগা, কোপা দেলরের শিরোপা জিতলেও জাতীয় দলকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি আর্জেন্টিনার এই প্রাণভোমড়া। কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে দুর্ভাগ্যবশত পেনাল্টি শ্যুটআউট মিস করেন মেসি। দলও শিরোপা বঞ্চিত হয়। টানা তিন বছর কোপা আমেরিকা ও ফুটবল বিশ্বকাপ মিলে তিনটা বড় ফুটবল আসরের ফাইনালে জাতীয় দলকে তুলে আনলেও, এনে দিতে পারেননি শিরোপা। এই দু:খ-যন্ত্রনা বুকে নিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনাল শেষে মেসি জানিয়ে দেন, আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন না তিনি। মেসির অবসরের এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি ফুটবলপ্রেমীরা। প্রিয় তারকাকে ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় নেমে আসে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। তবুও সিদ্ধান্ত অটল ছিলেন মেসি। শেষপর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও নতুন কোচ এদগার্দো বাউজার হস্তক্ষেপে আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর ঘোষণা দেন এলএমটেন। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে গোলের দেখাও পান মেসি। রোনালদোর বছর বছরটা দারুণভাবেই শেষ করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। হিসেব করলে এ বছরটা তারই! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপসহ দেশের জার্সিতে ইউরো জেতেন সিআর সেভেন। সেই সাথে ইউরোতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করে রোনালদো জেতেন সিলভার বুট। যদিও তা সতীর্থ ন্যানিকে উপহার দিয়ে দেন রিয়াল প্রাণভোমড়া। ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১১তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও দেশের জার্সি গায়ে ইউরো জেতানোর স্বীকৃতিস্বরূপই উয়েফা বর্ষসেরার মুকুট মাথায় ওঠে রোনালদোর। ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার নিজের করে নেন পর্তুগীজ সেনশেসন। এছাড়া চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডিঅরও নিজের শোকেসে তুলেছেন রোনালদো। এমনকি বছরের শেষ দিকে গ্লোব সকার অ্যাওয়ার্ডও নিজের করে নেন পর্তুগীজ সেনশেসন। সবদিক থেকেই গেল মৌসুমটা সৌভাগ্যমণ্ডিত ছিল রোনালদোর জন্য। শ্যাপাকোয়েন্স ট্র্যাজেডি এবারই প্রথমবার কোপা সুদামেরিকানার ফাইনালে উঠেছিল শ্যাপাকোয়েন্স। দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিযোগিতার ফাইনালের প্রথম লেগ খেলতে কলম্বিয়ার মেডেলিন যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এক বিমান দুর্ঘটনায় ক্লাবের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ক্লাবের খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো ন্যাশিওনাল, শ্যাপাকোয়েন্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশন (কনমেবল) কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানায়। তাতে সাড়া দিয়ে খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান জানিয়ে ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণাও করে কনমেবল। শিরোপার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সহায়তাও পেয়েছে ক্লাবটি। শ্যাপাকোয়েন্সের খেলোয়াড়দের মরদেহ দেশে ফিরলে শ্যাপাকোয়েন্স স্টেডিয়ামে প্রায় লাখো ভক্ত-সমর্থক শ্রদ্ধা জানান তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের। পরবর্তীতে ব্রাজিল ও কলম্বিয়া শ্যাপাকোয়েন্সের নিহত খেলোয়াড়দের স্মরণে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচও খেলে।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2iSwuhN
January 01, 2017 at 04:19PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top