কলকাতা, ২৫ ফেব্রুয়ারি- দীর্ঘদিন প্রভাবশালী হিসেবে কারাবাস করেছেন। মুক্তি পেয়েও যেন মুক্তি মেলেনি। আচমকা ডানা ঝাপটিয়ে বুঝিয়ে দিলেন প্রভাব কাকে বলে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কী বার্তা গেল? তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে আছেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও পদে নেই। দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি এখনও ব্রাত্য। তবুও তিনি নেতা। সেটাই শুক্রবার শিবরাত্রির সকালে বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন ছায়াসঙ্গী মদন মিত্র। তিনি বরাবরই জনপ্রিয়। তৃণমূল কংগ্রেসের সত্যিকারের তৃণমূল স্তরের সঙ্গে কাজ করা নেতাদের অন্যতেম মদন মিত্র। জনসংযোগকে বরাবর গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক। এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে যে কাণ্ড মদন ঘটিয়েছেন তার পরে, তৃণমূল কংগ্রেসেরই এক নেতা বললেন, মদন সব সময়েই ভাল রাজনীতিক। নানা ঘটনার জেরে এখন রাজনীতির বাইরে থাকলেও ওর ভিতরে রাজনীতি ব্যাপারটা তো আছে। সেটা তো মুছে ফেলা যায় না। শুধু রাজনীতিক নন, তিনি ঝানু রাজনীতিক। জানেন, কখনও কোন ইস্যুকে কাজে লাগাতে হয়। কী ভাবে কাজে লাগাতে হয়। তাই সময় নষ্ট করেননি মদন মিত্র। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসাপাতালের কর্তাদের দাঁড় করিয়ে ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার বেশ ভাল প্রভাব পড়ে। আর সেই লোহা গরম থাকতে থাকতেই তাতে হাতুড়ির ঘা দিলেন মদন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠক না করলে এ দিন হয়তো তাঁকে এই ভূমিকায় দেখা যেত না। যা দেখা গেল অনেক দিন পরে। এসএসকেএম দেখল অনেক দিন না দেখা দৃশ্য। কমলা রঙের পাঞ্জাবি। চোখের সানগ্লাস মাথার উপরে তোলা। চারিদিকে অনুগতদের ভিড়। মোবাইল ফোন কানে নিয়ে উত্তপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলছেন মদন মিত্র। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে, সারদা মামলায় অভিযুক্ত না হলে, কামারহাটির বিধায়ক আজকের মহাশিবরাত্রির দিনটা হয়ত কাটাতেন তাঁর একসময়ের বিধানসভা এলাকায়। জনসংযোগের তাগিদে দক্ষিণেশ্বরে জনসেবামূলক কাজ করতেন। সেটাই তিনি করে এসেছেন বরাবর। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। আদালতের নির্দেশে তাঁর চলাফেরার সীমানা নিয়ন্ত্রিত। নিজের এলাকা বলে সে ভাবে কিছু নেই। তাতে কী হয়েছে? সুযোগ পেয়ে নিজের চেনা ময়দানে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন। দীর্ঘ সময় হাসপাতাল রাজনীতি করেছেন তিনি। এটা তাঁর চেনা মাঠ। সেই মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে ব্যাটে বলে করে দিয়েছেন। সোশ্যাল সাইটে এই মুহূর্তে লাইক শীর্ষে তিনি। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস কী বলবে? এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তৃণমূলনেত্রী কিছু বলেননি। দলের প্রথম সারির নেতারাও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। সকলেই তাকিয়ে রয়েছেন দিদিমণি কী বলেন তার দিকে। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট, অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকলেও নেমেই ছক্কা হাকিয়েছেন মদন। যা দলের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তিরও। কারণ, কোনও পদে না থাকলেও সকলের কাছে মদন মিত্র তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে তিনি বেছে নিয়েছেন যা নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা মুশকিল। আবার হজম করাও কঠিন। নিজের গা থেকে প্রভাবশালী তকমা সরাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে। সিবিআই এখনও তাঁর প্রভাব কমে যাওয়ার তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। এই রকম সময়ে তাঁর হুমকি এবং সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের পক্ষে সংশ্লিষ্ট রোগীর পরিবারকে যাবতীয় টাকা ফেরৎ দেওয়া মদন মিত্রকে প্রভাবশালী প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট। এটুকু ঝুঁকি নিতেই হত একদিন না একদিন। কিন্তু দলনেত্রী বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ্যে আনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মদন যে পদক্ষেপ করলেন তা অনবদ্য রাজনীতির নমুনা তৈরি করল। দীর্ঘ বাধ্যতামূলক বাণপ্রস্থের পরে কিছুদিন ধরেই রাজনীতির অঙ্গনে একটু একটু করে আবার পা রাখছিলেন মদন মিত্র। এ বার সত্যিই সেই পা পড়ল বেশ শক্ত জমিতে। কিন্তু সেটা কি মেনে নেবেন তৃণমূলনেত্রী? আবার রাজনীতির মূলস্রোতে ফিরিয়ে নেবেন মমতা? নাকি, মমতার কোনও পদক্ষেপ আড়ালে ঠেলে দেবে মদনকে তা দেখার অপেক্ষা করতেই হবে বাংলার রাজনৈতিক মহলকে। আর/০৭:১৪/২৫ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ljh6sk
February 25, 2017 at 01:56PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন