মুম্বাই, ০৩ ফেব্রুয়ারি- হলিউড ছবির একটা দল মুম্বাইতে গিয়েছিল। কমপক্ষে ২০০০ বাচ্চাকে তাঁরা অডিশনে ডেকেছিল। কিন্তু আট বছরের সানির কী কোনও ধারণা ছিল যে যাত্রাটা শেষ হবে একটা অস্কার মনোনিত ছবিতে। কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই সে বলে উঠছে আমাকে খালি খেলতে বলা হয়েছিল। গার্থ ডেভিস পরিচালিত লায়ন ছবিতে সারু নামের বাচ্চা ছেলেটা হারিয়ে যায়। কাস্টিং ডিরেক্টররা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে চরিত্রের জন্য একটা বাচ্চা ছেলে। শেষে আট বছরের সানিকে তাঁদের পছন্দ হয়ে যায়। ছবিতে অভিনয় করছেন দেব প্যাটেল এবং নিকোল কিডম্যান। এঁদের সঙ্গেই অভিনয় করেছে সানি। কিন্তু একরত্তির ওই ছেলের ওসবে বিন্দুমাত্র নজর নেই। ওর নজর কেবলই ডব্লিউ ডব্লিউ ই তে। কোনও হলিউড বা বলিউড স্টার নয়, জন সিনা, হাল্ক হোগ্যান, সেথ রোলিন্স আর আন্ডারটেকারের সঙ্গে দেখা করতে চায় সানি। মুম্বাইয়ের কলিনা বস্তি এলাকায় একটা ঘরেই আরও দুই ভাই বোন ও মা বাবার সঙ্গে থাকে ছোট্ট সানি। সানির মা বাসু দিলীপ পাওয়ার তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন প্রথমে। কেননা সানি যে শুধু হিন্দি আর মরাঠি জানে। যে কথাগুলো ও বলে সে গুলোও কাটা কাটা। ওইটুকু ছেলে কী করে ইংরেজি সিনেমা করবে? তবুও বাসু দিলীপ পাওয়ারের কাছে এ যেন এক স্বপ্ন। তিনি কখনও ভাবতেও পারেননি যে ছেলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জীবনটাও এমন বদলে যাবে। আট বছরের ছেলেটার সবথেকে আনন্দের মুহূর্ত কেটেছে অষ্ট্রেলিয়ায়, শুটিংয়ের সময়। গার্থ ডেভিস খালি সানিকে ছুটতে বলেছিলেন ট্রেন ধরার দৃশ্যে। আর সানিও ছুটেছিল মন প্রাণ দিয়ে। ইংরেজি বোঝাটা তো ওর পক্ষে দুষ্কর ছিলই। কিন্তু তাতে কী, ইশারায় সাড়া দিয়ে পুরোটা কাজটা নিজের বাঁ হাতের মুঠোয় করে নিয়েছিল একরত্তির সানি। সানি বলছে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে আমার বিন্দুমাত্র ভয় হয়নি। ছোট্ট সানির মতে যে কোনও দৃশ্যের জন্য একটা ইশারাই যথেষ্ট ছিল, তাতেই আমি বুঝে যেতাম আমাকে হাসতে হবে, নাকি কাঁদতে হবে। প্রেস কনফারেন্স করতে গোটা টিম যখন আমেরিকা যায়, সানি তখন ডিজনিল্যান্ড ঘুরে নেয়। টাওয়ার অব টেরর ওর প্রিয়। নিকোল কিডম্যানকে ক্রিকেট খেলাটাও শিখিয়েছে সানি। তবে কিডম্যান আর সানির একটা মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। নিকোল হিন্দি জানেন না আর সানি ইংরেজি। ফিল্ম লায়ন এর ঝুলিতে রয়েছে ৬টা অস্কার মনোনয়ন। বেস্ট সিনেমা ছাড়াও দেব পটেল বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাক্টরের মনোনয়ন আর কিডম্যানও বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাক্ট্রেসের মনোনয়ন পেয়েছেন। গোল্ডেন গ্লোবের রেড কার্পেটে ইতিমধ্যেই দেব পটেলের হাত ধরে হেঁটে ফেলেছে সানি। মুম্বাই ফিরে সানির স্কুল থেকে পাড়া পড়শি সবাই তাকে কোলে নিয়ে নাচানাচি শুরু করে দেয়। না দেখা স্বপ্নপূরণে খুশি সানি বলেছে, এই ছবিতে অভিনয় না করলে, আমি হয়তো পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্নই দেখে যেতাম। দাদার সঙ্গে ট্রেনে যাত্রা করতে বেরিয়ে পাঁচ বছরের সারু নামের একটা ছেলে হারিয়ে যায়। ঘুম যখন ভাঙে ছেলেটার তখন সে দেখে সে কলকাতায় পৌঁছে গেছে। আর তারপর অষ্ট্রেলিয়ার এক দম্পতি তাকে উদ্ধার করে কলকাতা থেকে। নিয়ে আসে ৬০০০ মাইল দূরে অষ্ট্রেলিয়ায়। বেশ কয়েক বছর পর গুগল আর্থ এর সাহায্যে সে খুঁজে পায় তাঁর ঘর, যে ঘরে সে জন্মেছিল। যে ঘর থেকেই সে শেষবার ট্রেনে উঠেছিল। সেই সারু কে নিয়েই গার্থ ডেভিসের সিনেমা এখন অস্কার মনোনীত। আর/১২:১৪/০৩ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2jHZhBi
February 03, 2017 at 06:37AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন