কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভা মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মীরু। সেমাবার ভোরে তিনি গোপনে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করেছিলেন।
রোববার রাতে মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বরে (পল্লবী) ছোট বেলার এক বন্ধুর বাসায় রাত যাপনের পর সেখান থেকেই কুমিল্লা হয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু রোববার বিকালে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মীরুকে গ্রেফতারের নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি পুলিশের সঙ্গে পৌর মেয়রকে গ্রেফতারে অভিযানে যোগ দেয় প্রযুক্তি দক্ষ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনেরও দুটি দল। এর আগে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি দলও ঢাকায় আসে।
গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়া গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সোমবার বলেন, পুলিশ সদর দফতরে স্থাপিত মোবাইল ফোনে আড়িপাতার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) মাধ্যমে সন্ধ্যায় পৌর মেয়রের অবস্থান নিশ্চিত হয় অভিযান পরিচালনাকারীরা। ওই সময় আদাবর এলাকায় অবস্থান করলেও রাত ১০টার কিছু আগে তিনি মোটরসাইকেলে মিরপুরে ছোট বেলার এক বন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কালো রংয়ের টিভিএস ব্র্যান্ডের নম্বর প্লেটবিহীন ওই মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে কিছুটা আন্দাজের ওপর ভর করে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এর আগে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুর পাসপোর্ট ব্লক করে দেয়। দেশের সবক’টি স্থল ও বিমানবন্দরে হালিমুল হক মীরুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। এ কারণে তিনি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ভারতে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
মেয়র মীরুকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনায় অংশ নেয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর থেকেই পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। ঘটনার পরপরই তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকা চলে আসেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকায় প্রবেশ পর্যন্ত তিনি গোয়েন্দাদের নজরদারিতেই ছিলেন। কিন্তু ঢাকায় প্রবেশের পর পৌর মেয়র তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন। এতে কিছুটা বিপাকে পড়েন গোয়েন্দারা। অবস্থান নিশ্চিত হতে গোয়েন্দারা পৌর মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ ঘনিষ্ঠদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পৌর মেয়রের স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের এসব মোবাইল নম্বরে আড়িপাততে পুলিশ সদর দফতরে স্থাপিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি) পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে চলে গেলেও রোববার বিকালে পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সিরাজগঞ্জের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ফোনকল থেকে সন্দেহভাজন একটি নম্বর শনাক্ত করা হয়। এরপর ওই নম্বরে আড়ি পেতে গোয়েন্দারা সন্ধ্যায় হালিমুল হক মীরুর অবস্থান শনাক্ত করেন। তিনি তখন রাজধানীর আদাবর এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ছাড়াও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারকে ফোন করে তাকে এ দফা রক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করায় আওয়ামী লীগের এসব নেতা তাকে সাহায্যের বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারেননি।
অভিযানে অংশ নেয়া ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মেয়র মীরু রোববার থেকেই আদাবরের ওই এলাকায় অবস্থান করছেন বলে তারা নিশ্চিত হন। একটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারের আশপাশে তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলেও তা সুনির্দিষ্ট করতে রাত হয়ে যায়। ততক্ষণে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে প্রযুক্তিতে দক্ষ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের দুটি দল অভিযানে নামে। এর আগে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি দলও পৌর মেয়রকে গ্রেফতারে অভিযানে থাকা দলটির সঙ্গে যোগ দেয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর দীপক কুমার দাস (পিপিএম) জানান, রাত ১০টার কিছু আগে মেয়র মীরুর অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি সদর দফতরের ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল থেকে অভিযান পরিচালনাকারী দলকে অবহিত করা হয়। এলআইসির তথ্য অনুযায়ী পৌর মেয়র যে পথ দিয়ে আদাবর এলাকা ত্যাগ করছিলেন সেই পথে থাকা মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছিল। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর রাত পৌনে ১০টার দিকে কিছুটা আন্দাজের ওপর নির্ভর করে সন্দেহভাজন একটি মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন গোয়েন্দারা। এ সময় পৌর মেয়র মীরু মোটরসাইকেলের পেছনে মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলেন। আর মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন মেয়রের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মী পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। মোটরসাইকেলটি থামানোর পর হেলমেট খুলতেই পৌর মেয়র মীরুকে পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে অভিযানে থাকা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে ছুটে আসেন। পরে রাতেই তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
শাহজাদপুরের দিলরুবা বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তার কাজ নিয়ে পৌর মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টুর সঙ্গে পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের শ্যালক ছাত্রনেতা বিজয়ের বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ হয়। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মেয়রের লাইসেন্স করা গুলিতে দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল নিহত হন।
এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী নুরুন নাহার বেগম শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে মেয়র হালিমুল হক, তার দুই ভাইসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে পৌর মেয়রের ভাইদের মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের চাচা এরশাদ আলী পৃথক মামলা করেন। ওই মামলায় মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাসিবুল হক ও হাবিবুল হককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক শিমুল হত্যার পর থেকে মেয়র মীরুকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সমকাল পরিবারের সদস্যসহ সারা দেশের সাংবাদিকরা। হত্যার বিচার দাবিতে শনিবার শাহজাদপুরে আধাবেলা স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। একই দাবিতে রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সমকাল পরিবার, বিএফইউজে ও ডিইউজে।
এদিকে গ্রেফতার মেয়র মীরুকে সোমবার সিরাজগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে জিজ্ঞাাসবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হলেও ১৩ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানি হবে বলে জানান আদালত।
The post কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে চেয়েছিল মীরু! appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2lkjfUI
February 07, 2017 at 04:15PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন