মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে চান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আবদুল গফফার উমরা মিয়া (৭৩)। ৩৯ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে ‘বৃক্ষ প্রেমিক’ খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। তার হাতের ছোঁয়ায় সবুজাভ হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, সড়ক-মহাসড়ক। বৃক্ষের প্রতি তার প্রেমের গল্প, যে কাউকেই বিস্মিত করবে। সেই সাথে আসহায় মানুষের ঘর-বাড়ি করে দিয়ে এলাকায় ‘সাদা মনের মানুষ’ হিসেবেও পরিচিত তিনি।
উমরা মিয়ার জন্ম বিশ্বনাথ উপজেলার তাতিকোনা গ্রামে। তিনি ছিলেন আর্দশ ছাত্র। কৃতিত্বের সহিত বিকম পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির সাথে ছিল তার গভীর সখ্য। গাছ রোপন ও তার পরিচর্যা করতে পছন্দ করতেন তিনি। মরে যাওয়া গাছ গভীর দাগ কাটতো তার মনে। ধীরে ধীরে এটি নেশায় পরিণত হয় তার।
১৯৭৮ থেকে আজ অবধি জীবনের পুরোটা সময় তিনি ব্যয় করেছেন নিজ খরচে উপজেলা জুড়ে বৃক্ষরোপণ করে। এ পর্যন্ত উপজেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি গাছ লাগিয়েছেন। এখনও ভ্যান ভর্তি চারা নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সড়কে সড়কে নিজ হাতে রোপন করেন চারা। রোপনের কিছুদিন পরপর দিনব্যাপী পথে পথে ঘুরে সন্তানের মতো পরিচর্যা করেন চারা গাছের। সাধ্যমতো অসহায়-গৃহহীন মানুষদেরও বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। স্বজনদের থেকে সহযোগিতা নিয়ে এলাকার দারিদ্র্য ৩১টি মুসলিম ও হিন্দু পরিবারকে ঘর করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তৃনমূলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। সালমান ফারসী জাবের ও সাফওয়ান মেহদী জাকি দু’জনেই প্রবাসী। স্ত্রী সাবিহা গফফার তার কাজে প্রেরণা যুগিয়েছেন সব সময়। তাকে নিয়েই বাড়িতে তৈরী করেছেন শখের নার্সারি।
উমরা মিয়ার বাড়িতে গেলেই বুঝা যায় গাছের প্রতি তার ভালোবাসার নমুনা। প্রবেশ পথের দু’ধারে নান্দনিক গাছের সারি। বাড়ির উঠোন, বারান্দা ও ছাদ ভর্তি শত শত ফুল, ফল ও ঔষধি গাছে। তার বৈঠকখানা যেন দুর্লভ এক সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে অদ্ভুত সব বিচিত্র জিনিসের সমাহার। প্রাচীন কালের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি। বৃক্ষ সাদৃশ্য আসবাবপত্র। এক সময় তার এ সংগ্রশালা পরির্দশন করেছেন আমেরিকান মেডিকেল ডাইরেক্টর মি.রায়মন্ড ফিলিপ, ওর্য়াল্ড ব্যাংক প্রতিনিধি ড. এন্টন ডালহুজ, বিট্রিশ সংসদীয় দলের নেতা মি. নরম্যান ও মিস ক্যাম্পাবেশ, ব্রিটেনের রানীর পক্ষে এমবি ডিগ্রিপ্রাপ্ত এলিজা ও তার স্বামী মি. এলেস্তসহ সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক আবদুল মালেক চৌধুরী।
উমরা মিয়া’র পথচলা নিয়ে তার সাথে কথা বলে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। তিনি জানান, আমি যেমনটি পেয়েছি, সে ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে একটি সুন্দর পরিবেশ রেখে যাওয়াই আমার লক্ষ্যে। আমি প্রকৃতি ও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
গ্রামের মঙ্গলবাবু জানান, তার শাশুড়ি স্বর্গীয় তেজবালা দুই মেয়ে রেখে মৃত্যুবরণ করলে উমরা মিয়াই অসহায় গৃহহীন এই পরিবারকে পাকা ঘর করে দেন।
বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল হক বলেন, তিনি শুধুই বৃক্ষ প্রেমিক নন, একজন খাটি দেশপ্রেমিকও বটে। কলেজের প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার অবদান রয়েছে। তার রোপন করা গাছ ক্যাম্পাসে এনেছে নান্দনিকতা। হয়েছে আসবাবপত্রও। তার এ মহৎ কাজে সকলে সহযোগিতা করলে তিনি আমাদের জন্যে আরে অনেক কিছু করতে পারতেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, ‘উনার বিষয়ে জেনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। উনার মতো সাদা মনের মানুষ সমাজে বৃদ্ধি পেলে দেশ ও দশের কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2khSCPC
February 07, 2017 at 08:08PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.