কুমিল্লায় নির্ভার বিএনপি, আ.লীগে দোটানা

নিজস্ব প্রতিবেদক ● কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের দ্বিতীয় কার্যদিবস গেল বৃহস্পতিবার। কিন্তু মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে তেমন কোনো আভাস মেলেনি এখনো। তবে দলের মনোনয়ন পেতে অন্তত ছয়জন প্রার্থী অত্যন্ত জোরালো চেষ্টা-তদবির করে চলেছেন। সবশেষে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।

অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে বেশ নির্ভার দল ও নেতাকর্মীরা। দলটি সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে নিজেদের মেয়র প্রার্থী করার বিষয়ে একরকম মতৈক্যে পৌঁছে গেছে।

আগামী ৩০ মার্চ ভোটগ্রহণের তফসিল অনুয়ায়ী কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২ মার্চ। নির্বাচন কমিশন ২০ মার্চ তফসিল ঘোষণার পর এরই মধ্যে দুই কার্যদিবস চলে গেছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার।

আ.লীগে আফজল-বাহারদের উত্তরাধিকারী
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা আফজল খান ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধ দীর্ঘদিনের পুরনো। সেখানে দলটির প্রধান সমস্যাও এটিই। তাদের বিরোধে গত সিটি নির্বাচনসহ ওই এলাকায় বারবার ভুগেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এবার নিজেরা প্রার্থী না হলেও নির্বাচনে মাঠে আছেন তাদের ছেলেমেয়ারা। ফলে চিরবৈরী দুই নেতা ঠিকই মাঠে থেকে যাচ্ছেন।

দুজনের বিরোধ এবার উত্তরাধিকারের মধ্যে পড়েছে- এমন আলোচনা আছে এলাকায়।

গত সিটি নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুর কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের আফজল খান। এবার তিনি নির্বাচন না করে দুই সন্তান আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরানকে নিয়ে এগোতে চাইছেন।

সীমা টানা ১৫ বছর কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সির ছিলেন। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারমান পদে তিনি রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সব অর্জন পুঁজি করে তার মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য চলছে জোর লবিং। আশির দশকে একসময়ের প্রভাবশালী ও জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্যাতিত এই নেতা এলাকায় বেশ পরিচিত। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি।

আ.লীগে সক্রিয় অন্য যারা
আওয়ামী লীগের প্রধান ছয় মনোনয়ন-প্রত্যাশীর অন্য তিনজন হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম ও কুমিল্লা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবীরুল ইসলাম শিকদার এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর মামুন। নানাভাবে তারা মাঠে সক্রিয়।

নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন। সেবার মনোনয়ন না পেয়ে আফজল খানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন তিনি। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবীরুল ইসলাম শিকদারও এবার নৌকা প্রতীক চাইছেন। এলাকায় তার বেশ স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। তার পক্ষে প্রায়ই মিছিল-সমাবেশ হচ্ছে।

গতবারের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঝপথে সরে গিয়েছিলেন মেজর মামুন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সমার্থনে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য উচ্চপর্যায়ে লবিং করছেন তিনি। কুমিল্লার আদি সন্তান ছোটরা এলাকার বাসিন্দা মেজর মামুন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে সুন্দরভাবে সাজাতে চান।

তেমন জোরালো না হলেও মেয়র পদে নির্বাচনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী বলে কানাঘুষায় নাম আসছে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপত্বি মো. ওমর ফারুক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এস এম কামরুল ইসলামের।

মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে সম্ভাব্য মনোনয়ন-প্রত্যাশীও অনেক থাকবে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই আমরা কাজ করব।’

প্রার্থিতা মনোনয়নে এগিয়ে বিএনপি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে নির্বাচনে বিশেষ করে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে এগিয়ে বিএনপি। তাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। দলের নেতারা জানান, সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর হাতেই উঠছে ধানের শীষ।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রথম মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করেন। আগামী নির্বাচনেও দলের প্রার্থী হিসেবে তার নামই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে বিএনপিতে। তবে দলের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীও প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোটে সহজেই উতরে যান মনিরুল হক সাক্কু। যদিও সেবার বিএনপির সমর্থন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে তাকে আবার প্রার্থী হতে বলা হয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করছেন।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভার রূপকার হিসেবে পরিচিত। সেখানে রয়েছে সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ড। ওই এলাকায় বেশ জনপ্রিয়ও তিনি। তার সমর্থকরা প্রচার চালাচ্ছেন পরিবর্তনের।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াছিন বলেন, ‘যেহেতু এখন পর্যন্ত আমাদের দল থেকে কেউ মেয়র নির্বাচন করার জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেনি, তাই মনিরুল হক সাক্কুই এখন পর্যন্ত আমাদের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আছে। পরে কেউ দাবি করলে সেটা দেখা যাবে।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন বলে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ এবং জাতীয় পার্টির (জাফর) এয়ার আহমেদ সেলিম।

তবে যত আলোচনা-সমালোচনা হিসাব-নিকাশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে। আবার তাদের বাইরে নতুন কেউ মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন এমন কথাও কোথাও কোথাও চাউড় হয়। তারা কারণ হিসেবে কুমিল্লা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের উদাহরণ টেনে আনেন সামনে।



from Comillar Barta™ http://ift.tt/2mrAhQw

February 24, 2017 at 02:41PM
24 Feb 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top