হায়দরাবাদ, ১২ ফেব্রুয়ারি- মুশফিকুর রহিম ৮১ রান করে অপরাজিত আছেন। থাকতেই পারেন। সাকিব আল হাসান করেছেন ৮২ রান। করতেই পারেন। এসবে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। ৮২ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিব। দলের দাবি, ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান ওই শট। এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাকিব তো ওভাবেই খেলেন! হায়দরাবাদ টেস্টের তৃতীয় দিনে অবাক হওয়ার মতো যদি কিছু থেকে থাকে, সেটি মেহেদী হাসান মিরাজের অপরাজিত ৫১ রান। আগের ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে যাঁর মোট রান ২০, দুই অঙ্কের ইনিংস মাত্র একটি (১০), তিনিই কিনা ঝকঝকে একটা হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন! কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য! মিরাজকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের কাছে এটাও মোটেই আশ্চর্য কোনো ব্যাপার বলে মনে হবে না। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে জেনুইন অলরাউন্ডার হিসেবেই পরিচিতি ছিল। অনেক ম্যাচেই বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ে ভালো করেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি আছে। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতেই যে ব্যাটিংয়ে হাবুডুবু খেয়েছেন, সেটিরও যৌক্তিক কারণ আছে। অভিষেকেই পড়েছেন বেন স্টোকসের রিভার্স সুইংয়ের সামনে। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরেও বাউন্স আর সুইং মিলিয়ে একেবারেই অচেনা এক জগৎ। মিরাজকে যে ব্যাট হাতে একেবারেই নবিশ মনে হয়েছে, তাতে আর আশ্চর্য কী! হায়দরাবাদে অনেকটাই চেনা কন্ডিশন পেয়ে মিরাজ মেলে ধরলেন তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা। টেস্টটা পঞ্চম দিনেও গড়ানো প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার মূলেও আসলে তাঁর ওই ইনিংসটাই। সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১৯৭ বলে ৮৭ রানের জুটি। দলকে ২১৬ রানে রেখে সাকিবের আত্মহত্যার পর আর ১৯ রান যোগ হতেই সাব্বিরও যখন আউট হয়ে গেলেন, দেয়ালের লিখন পড়া যাচ্ছিল পরিষ্কার। চা-বিরতিও হয়নি তখনো। বাকি সময়টায় বড়জোর কী হতে পারে? লড়াকু মুশফিক আরও কিছুক্ষণ লড়াই করবেন। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ থাকলে তো! বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসও শুরু হয়ে যাবে এ দিনই। মিরাজ এই চিত্রনাট্যটাই পুরো বদলে দিলেন। শেষ সেশনটা পুরো ব্যাটিং করে মুশফিকের সঙ্গে যখন তিনি ফিরে আসছেন, বিরাট কোহলির কপালে একটু হলেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ। সেটি ম্যাচের ভবিষ্যৎ ভেবে নয়। বাংলাদেশ এখনো ৩৬৫ রানে পিছিয়ে। যার অর্থ, ফলো অন এড়াতেই লাগবে আরও ১৬৬ রান। কোহলির চিন্তার একটাই কারণ থাকতে পারে, সুযোগ পেলেও ফলো অন করাবেন কি করাবেন না, এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হবে তাঁকে। ভারতের টেস্ট উইকেট তৃতীয় দিন যেমন হওয়ার কথা, একদমই তেমন হয়নি। দ্বিতীয় দিনেই বাংলাদেশের স্পিনারদের বল টার্ন করতে দেখে মনে হয়েছিল, তৃতীয় দিনের উইকেট হবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মৃগয়া। এমন কিছুই হয়নি। সাকিব ওভাবে উইকেট দিয়ে না এলে অশ্বিনকে উইকেটশূন্যই থাকতে হতো। সাকিবের উইকেটটি নেওয়ার পর অধীর অপেক্ষায় কেটেছে অশ্বিনের সময়। বিশ্ব রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা কারও অমনই হওয়ার কথা। তবে রেকর্ডটা শেষ পর্যন্ত তাঁরই হবে। সেটি আজ হোক বা কাল হোক। এমনকি পরের টেস্টে হলেও সমস্যা নেই। এরপরের টেস্টে হলেও না। এটি অশ্বিনের ৪৫তম টেস্ট। ২৪৯ উইকেট হয়ে গেছে। সবচেয়ে কম টেস্টে ২৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলির। সেটি ৪৮ টেস্টে। অশ্বিনের তাই দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। বাংলাদেশের অবশ্যই আছে। সকালে ৬৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দিনটা যে পার করে দেওয়া গেছে, সেটিই অনেক। তবে টেস্ট বাঁচানো এখনো অনেক দূরের পথ। আগের বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য বলতে এখন আর বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ নয়। সামনে দাঁড়িয়ে সেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব আল হাসান সতীর্থ সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতার কথা বলে গেলেন। পরিস্থিতি যত কঠিন, ততই দুর্ভেদ্য মুশফিকের ব্যাট। কঠিনেরেই যেন ভালোবাসিয়াছেন তিনি! কথাটা খুবই সত্যি। বাংলাদেশের এই দলে বাহারি স্ট্রোক খেলার মতো ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। কিন্তু বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে দাঁতে দাঁত কামড়ে, জীবন বাজি রেখে লড়ার প্রশ্ন যদি আসে, মুশফিকুর রহিমের ধারেকাছে আসার মতোও আর কেউ নেই। আঙুলের চোট সেই নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই পিছু নিয়েছে। কালও আঙুলে ছোবল দিল বল। ইশান্ত শর্মার বাউন্সার। দিনের শেষটাও হলো এই পেসারের ভয়ংকর এক বাউন্সারেই। শেষ মুহূর্তে মুশফিক মাথাটা সরিয়ে নিতে পেরেছিলেন বলে রক্ষা! হুমকি হওয়ার কথা ছিল অশ্বিনের। কিন্তু অশ্বিন নন, এ দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নিলেন উমেশ যাদব। আগের দিন বাংলাদেশের ইনিংসের ১৪ ওভারের মধ্যেই বল রিভার্স করতে শুরু করেছিল। কাল সকালে প্রথাগত সুইং আর রিভার্স সুইংয়ের এক প্রদর্শনী মেলে বসলেন এই ফাস্ট বোলার। শুধু মুমিনুলের উইকেটটাই পেয়েছেন। তবে সেটি নেহাতই দুর্ভাগ্য বলে। এমন এক স্পেল যে আরও দুই-তিনটি উইকেট তুলে নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। এমনিতেই তো আর সাকিব তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলা দুরূহতম স্পেলের মর্যাদা দিচ্ছেন না এটিকে! বাংলাদেশকে প্রথম আঘাতটা অবশ্য সুইং বা স্পিনে নয়। রানআউটে! তামিম আর মুমিনুলের দ্বিধাজড়িত রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের শিকার হয়ে দিনের শুরুতেই ফিরতে হলো তামিমকে। মুশফিকও একবার রানআউট হতে হতে বেঁচে গিয়েছেন। হয়তো সন্দেহের অবকাশেই। মুশফিকের সঙ্গে সাকিবের ১০৭ রানের জুটিটি প্রতিরোধের প্রথম দেয়াল। মুশফিক আর মিরাজের জুটিটি ম্যাচ বাঁচানোর নিশ্চয়তা না হলেও ম্যাচটিকে ইন্টারেস্টিং করে তোলার ইঙ্গিত তো দিয়েছেই। এই জুটিটির সময়ই হাবিবুল বাশার, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রান হয়েছে মুশফিকের। উপলক্ষটা কখন এসেছে, সেটি বোধ হয় খেয়াল করারও সুযোগ হয়নি তাঁর। অধিনায়ক যে তখন যুদ্ধে নেমেছেন। টেস্ট বাঁচানোর যুদ্ধ! এফ/০৯:৫০/১২ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2kj5R1C
February 12, 2017 at 03:47PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top