নিজস্ব প্রতিবেদক ● দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য কুমিল্লায় প্রায় সাড়ে চার মাস পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রবাসির স্ত্রী তানজিনা আফরিন রিমার (২৩) মরদেহ। বুধবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর গ্রামে রিমার পিতার বাড়ির পাশে কবর থেকে তাঁর মরহদেহ উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর উপজেলার বরদৈল গ্রামে ননদের গোপন বিয়ের কথা ফাঁস করায় প্রবাসি স্বামী মাহবুব আলমের ইন্দনে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদসহ আরও কয়েকজন জন মিলে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে একই উপজেলার আলেখারচর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে এক সন্তানের জননী তানজিনা আফরিন রিমাকে (২৩)। এ ঘটনায় স্বামীসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২/১ জন অভিযুক্ত করে কুমিল্লার আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রিমার পিতা।
জানা গেছে, রিমার প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুমেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা.মো.ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে হত্যাকে আত্মহত্যা বানিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বদলানোর। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই প্রবাসির স্ত্রীর পিতা ও মামলার বাদী মো.জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া রিমার প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সুরহতাল প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়ে দ্বিতীয়বার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের আবেদন জানান তিনি। আদালত মামলার বাদীর এ আবেদন আমলে নিয়ে পূণরায় ওই প্রবাসির স্ত্রীর ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
গতকাল মরদেহ উত্তোলনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা, কুমিল্লা কোতয়ালী থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা রিমার মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদী মো.জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, রিমার প্রবাসি স্বামী মাহবুব আলমের নির্দেশে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদসহ আরও কয়েকজন জন মিলে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁর মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। রিমার ননদ তানজিনা আক্তার অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে এক যুবককে বিয়ে করার তথ্য ফাঁস করে দেওয়া এবং তাদের যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারাই ছিলো তাঁর মেয়ের অপরাধ। তিনি দাবি করেন, ৫লাখ টাকার বিনিময়ে রিমার প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যাকে আত্মহত্যা বানিয়েছেন ডাঃ ফারুক। যার কারনে আমার মেয়ের মৃতদেহের গঁলায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহৃ থাকা সত্ত্বেও গত বছরের ২২ নভেম্বর আমার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এই মর্মে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন তিনি। তিনি বলেন, এবার অন্তত আমার মেয়ের হত্যার সঠিক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি ডাক্তারদের।
আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্র ও পরিবারের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রিমাকে হত্যার পর তাঁর পিতা কোতয়ালী থানা ও ফাঁড়িতে গিয়ে হত্যা মামলা করতে চাইলেও রহস্যজনক কারনে মামলা গ্রহন না করে ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো.নুরুল আলম একটি মনগড়া অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে লাশ মর্গে পাঠান। এসআই নুরুল আলমের তৈরি করা সুরতহাল প্রতিবেদনটি বেশিরভাগই মিথ্যা বলেও আদালতে একটি আবেদন করেছেন মামলার বাদী। উল্লেখ, হত্যার পর কোতয়ালী থানায় মামলা করতে না পেরে রিমার পিতা বাদী হয়ে কুমিল্লার আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই মামলায় রিমার স্বামী মাহবুব আলমকে এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামী করা হয়। এছাড়া অপর আসামীরা হলেন; রিমার শ্বশুর আবদুল আজিজ, শাশুড়ি সাবেরা বেগম, ননদ তানজিনা আক্তারসহ অজ্ঞাত আরও ১/২ জন।
The post কুমিল্লায় ৪ মাস পর প্রবাসির স্ত্রী’র মরদেহ উত্তোলন appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2kWsSbu
February 01, 2017 at 11:53PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন