কলকাতা, ২৫ ফেব্রুয়ারি- অপরের জন্য গর্ত খুঁড়ে অনায়াসে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল ভারত। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ইডেনে ইংল্যান্ডের কাছে সেই যে সর্বশেষ টেস্ট হেরেছিল, এরপর ঘরের মাঠে পরাজয় কী জিনিস সেটার স্বাদ পায়নি ভারত। ঘরের মাঠে টানা ২০ টেস্ট অপরাজিত। সব মিলিয়ে টানা ১৯ ম্যাচ। টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠাটা ছিল যেন তাদের জন্যই অবধারিত। মাত্রই কদিন আগে ইংল্যান্ডকে একের পর এক পর্যদুস্ত করেছিল অশ্বিন-জাদেজারা। ৪০০র ওপর রান করেও ইনিংস পরাজয় ঘটেছিল ইংলিশদের। ৫ টেস্টের সিরিজে পুরোপুরি বিধ্বস্তই হয়েছিল অ্যালিস্টার কুক অ্যান্ড কোং। তার আগে নিউজিল্যান্ড বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল অশ্বিন-জাদেজাদের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান হারিয়েছিল ভারতের মাটিতে খেলতে এসে। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের একটি বৃষ্টির কারণে ভেসে গিয়েছিল। বাকি তিনটিতে ভারতীয় স্পিনারদের সামনে নাকানি-চুবানি খেয়ে যেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ মানেই ভারতীয় স্পিনারদের জয়জয়কার। উইকেট এমনভাবে তৈরী করা হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অন্যের স্পিন অনায়াসে খেলবে, তবে নিজেদের স্পিন বিষ এতটাই বিষাক্ত হবে যে, অন্য দলের ব্যাটসম্যানরা সে বিষে নীল হতে বাধ্য। বিরাট কোহলিরা এই উইকেটে একদিকে রানের ফুলঝুড়ি ফোটাবেন, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কচুকাটা করবেন- এটাকেই যেন নিয়তি বানিয়ে ফেলেছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে প্রথম ইনিংসে রবীন্দ্র জাদেজা হাফ সেঞ্চুরি করার পর যেভাবে ব্যাট ঘুরিয়েছিলেন, সেটাই যেন এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ, তাদেরকেও একটা বার্তা পৌঁছে দেয়াও ছিল জাদেজাদের উদ্দেশ্য। পরিসংখ্যান ঘেঁটে অস্ট্রেলিয়াও নিজেদের জন্য বার্তা প্রস্তুত করে রেখেছিল। ভারতের মাটিতে তারা সর্বশেষ খেলে গিয়েছিল ২০১৩ সালে। মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে সেই সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। অশ্বিন-জাদেজা মিলে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ৫৩ উইকেট। অশ্বিন ২৯টি আর জাদেজার ২৪টি। এরপর ভারতের মাটিতে যত সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই ছিল অশ্বিন-জাদেজার মঞ্চ। তাদের ঘূর্ণির সামনেই প্রতিটি দলকেই নাকানি-চুবানি খেয়ে আসতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজের আগে ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ খেলে এসেছে ১ ম্যাচের সিরিজ। হায়দরাবাদের ওই ম্যাচে অশ্বিন-জাদেজা মিলে ৬টি করে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। তার আগে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে ৫ ম্যাচের মধ্যে প্রথমটি ড্র করতে পারলেও ইংল্যান্ড বাকি চারটিতে হেরেছে। যার মধ্যে দুটি ইনিংস পরাজয়। শুধুমাত্র অশ্বিন-জাদেজার ঘূর্ণি সামলাতে না পেরেই তাদের এমন দশা হয়েছিল। ওই সিরিজে অশ্বিন নিয়েছিলেন ২৮ উইকেট এবং জাদেজা নিয়েছিলেন ২৬ উইকেট। অর্থ্যাৎ এই দুজনই নিয়েছেন সর্বমোট ৫৪ উইকেট। বিপরীতে ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদও খারাপ বল করেননি। ২৩টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছিল ভারত। ৩ ম্যাচের সিরিজেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়েছিলেন ২৭ উইকেট। জাদেজা নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। স্পিনার না থাকার খেসারত দিতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। তাদের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট নিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ১০ উইকেট। ২০১৫র শেষ দিকে ভারত সফর করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই সময় তারা টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দল। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের একটি ভেসে গিয়েছে বৃষ্টিতে। বাকি তিনটিতেই হেরেছে প্রোটিয়ারা। ওই তিন ম্যাচে একা অশ্বিনই নিয়েছিলেন ৩১টি উইকেট। জাদেজা নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। অথ্যাৎ, দুই স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৫৪ উইকেট। প্রোটিয়া স্পিনার ইমরান তাহির নিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবারও যথারীতি প্রথম টেস্টেই স্পিন ফাঁদ পেতে রাখল ভারত। পুনের মারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে উইকেট তৈরি করার জন্য তিনজন কিউরেটর নিয়োগ দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। উদ্দেশ্য অশ্বিন আর জাদেজার জন্য মঞ্চ তৈরি করা। যেখানে বধ্যভুমি রচিত হবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের। আর রানের নৃত্যে মেতে উঠবে কোহলিরা। আগের চার সিরিজে চারটি ডাবল সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলিকে তো আর ইচ্ছা করলেই যে কোনো বোলার ফাঁদে ফেলতে পারবে না! তার ওপর নিজেদের ঘরের মাঠে। এখানে করুণ নায়ারেরমত ব্যাটসম্যানও ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারেন। আজিঙ্কা রাহানে, লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পুজারা কিংবা মুরালি বিজয়রা ঘরের মাঠে পরকে ভয় করারমত ব্যাটসম্যানই নন! উইকেটটা তৈরি হলো তাই অশ্বিন-জাদেজাদের জন্য। ভারত জানতো অস্ট্রেলিয়ার মূল স্পিনার নাথান লিওন থাকবেন দলে। তিনি আর কতটুকুই বা বল ঘোরাবেন এই উইকেটে! ফাঁকা ফিল্ডে তাই একাই গোল দেয়ার লক্ষ্য ছিল ভারতীয় স্পিনারদের। অশ্বিন-জাদেজার সঙ্গে আবার যোগ হলেন এবার জয়ন্ত যাদবও; কিন্তু স্টিভেন ওকেফি নিয়ে কী পরিকল্পনা ছিল ভারতের? থাকলে এই বাম হাতি স্লো অর্থোডক্সের হাতে হয়তো এভাবে নাকাল হতে হতো না বিরাট কোহলিদের। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ২৬০ রানে বেধে রাখার পর যখন বোলারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতীয় মিডিয়া; তখন তারা ভাবতেই পারেনি আরও কত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে তাই তুরুপের তাস স্টিভেন ওকেফিকে প্রথম থেকেই ব্যবহার করতে শুরু করেন স্টিভেন স্মিথ। যে স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বধ করার পরিকল্পনা ছিল ভারতের, উল্টো সেই স্পিনেই নাকাল হতে শুরু করে তারা। একা এক স্টিভেন ওকেফিই মহা ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়ে গেলেন বিরাট কোহলিদের সামনে। মাত্র ৩৫ রান দিয়ে নিলেন ৬ উইকেট। একটি নিলেন নাথান লিওন। বাকি তিনটি নিলেন দুই পেসার স্টার্ক (২টি) আর জস হ্যাজলউড। দ্বিতীয় ইনিংসে স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরিতে ভারতের সামনে ৪৪০ রানের বিশাল লিড দাঁড়িয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার। যদিও স্মিথের এই সেঞ্চুরিতে দারুণ অবদান রয়েছে ভারতীয় ফিল্ডারদের। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সেই স্পিনের ফাঁদেই পা দিতে বাধ্য হলো অস্ট্রেলিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন মোকাবেলা করতে গিয়ে বিরাট কোহলি যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে মনে হচ্ছিল কোনো পাড়ার ক্রিকেটারও সম্ভবত এর চেয়ে ভালো ব্যাট করতে পারতেন। সেই স্টিভেন ওকেফি আর নাথান লিওন। এই দুই স্পিনার মিলেই শেষ করে দিলেন ভারতকে। পুরো এক সেশন এবং পরে আরেক সেশনের মাত্র কয়েক ওভার ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র বিরাট কোহলিরা। ৩৩.৫ ওভারেই ভারত অলআউট ১০৭ রানে। প্রথম ইনিংসের চেয়ে মাত্র ২ রান বেশি করতে পেরেছে তারা। ওকেফি নিলেন ৬ উইকেট। লিওন ৪ উইকেট। দুই ইনিংস মিলে ওকেফি একাই নিলেন ১২ উইকেট। লিওন নিলেন ৫ উইকেট। অথ্যাৎ দুই স্পিনার মিলে নিলেন ১৭ উইকেট। অন্যদিকে ভারতের তিন স্পিনার দুই ইনিংসে নিয়েছেন ১৪ উইকেট; কিন্তু স্টিভেন ওকেফির আগ্রাসনের কাছে সবই ম্লান হয়ে গিয়েছে। ভারত হেরেছে মাত্র পৌনে তিনদিনে। পুরো দুটা দিন এবং তৃতীয় দিনের প্রায় ১৫ ওভার বাকি ছিল। তার আগেই ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলো বিরাট কোহলির ভারত। এতটা হয়তো কল্পনাই করেনি তারা। নিজেদের মাঠে এভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ের কারণে দর্পও চূর্ণ হয়েছে বলতে গেলে ভারতীয়দের। রীবন্দ্র জাদেজাদের ব্যাট ঘুরানোর ঔদ্ধত্যও নিশ্চয়ই থামবে এবার! আর/১৭:১৪/২৫ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2mhHpDe
February 25, 2017 at 11:55PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টের সূচি প্রকাশ
07 Oct 20200টিঢাকা, ০৭ অক্টোবর- শ্রীলংকা সফর না হওয়ায় ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দেশের মূল ক্...আরও পড়ুন »
বার্তামেউয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট!
07 Oct 20200টিবার্সেলোনার বোর্ড নির্বাচন আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই সময়ই ঠিক হওয়ার কথা জোসেপ মারিও বার্তা...আরও পড়ুন »
বেতন কাটা নিয়ে বার্সার আলোচনা শুরু
07 Oct 20200টিকরোনার কারণে গত মার্চ থেকে কমাস ফুটবল বন্ধ ছিল। এ সময় বড় ক্লাবসহ বিশ্বের অধিকাংশ ক্লাবই ফুটবলারদের ব...আরও পড়ুন »
অস্ট্রেলিয়া-ভারত গোলাপি বলের টেস্ট চূড়ান্ত
07 Oct 20200টিক্যানবেরা, ০৭ অক্টোবর- এ বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের চার টেস্টের সিরিজ দিবারাত্রির ম্যাচ দিয়...আরও পড়ুন »
নারীর প্রতি মনোভাব বদলের ডাক মাশরাফীর
07 Oct 20200টিঢাকা, ৭ অক্টোবর- উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতার হার। সিলেটে এমসি কলেজসহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.