নিজস্ব প্রতিবেদক ● ‘পল্লী নারী জাগরণ সংস্থা’ (রেজিষ্ট্রেশন নং- ম-০৫৬৭/১৯৯০ইং) নামে একটি বেসরকারী সংস্থা ঋণ দেয়ার আশ্বাসে গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে একটি প্রতারক চক্রের ৫ এনজিও কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার কুমিল্লা ৪নং আমলী আদালতে হাজির করে ব্যপক জিজ্ঞাসাদের মাধ্যমে আরো তথ্য আদায়ের লক্ষে ৭ দিনের রিমান্ড আবেন করে পুলিশ। শোনানীর পর কুমিল্লা ৪নং বিচারিক আদালতের প্রথম শ্রেণীর বিচারক বিপ্লব কুমার দেবনাথ ২দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ‘পল্লী নারী জাগরণ সংস্থা’র নামে দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নে অফিস ভাড়া নেয়ার পূর্বেই বিপুল সংখ্যক সদস্য সংগ্রহপূর্ব গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে থাকেন যে, যেসব দরিদ্র নারীরা টাকার অভাবে আত্মকর্মসংস্থানে স্বাবলম্বী হতে পারছেননা, তাদের জন্য সংস্থাটি স্বল্পসূদে ঋণ প্রদান করে আসছে। গত ২৭ জানুয়ারী ‘পল্লী নারী জাগরণ সংস্থা’(এনজিও)টি দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের সুবিল গ্রামের ডাঃ আবদুল খালেক’র পুত্র মোঃ গোলাম মোস্তফার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নেয়ার শর্তে ২লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান এবং প্রতি মাসে ৭হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার কথা চুড়ান্ত করে দু’দিনের মধ্যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও অগ্রিম টাকা পরিশোধের কথা বলে। ৩০ জানুয়ারী প্রতারক চক্র কয়েকটি মোটর সাইকেল যোগে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার আশ্বাসে সদস্য করতে থাকে। সদস্যদের মধ্যে যারা ১০হাজার টাকা জামানত দেবেন তাদের এক লক্ষ থেকে দু’লক্ষ টাকা প্রয়োজনে অধিক টাকা ঋণপ্রদান করা হবে” এমন লোভনীয় প্রচারনা চালায় এবং যারা ঋণ নিতে আগ্রহী তারা ৩১ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৮টায় সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জামানতের টাকা জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় ঋণের বিপরীতে আবেদন পত্র জমা দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকে। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) প্রায় ৫০/৬০ জন গ্রাহক জামানতের টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে আসেন।
এনজিও কর্তৃক ভাড়ানেয়া কার্যালয়ের ভবন মালিক গোলাম মোস্তফা (মোমেন)’র সাথে বাড়িভাড়া বাবত অগ্রিম ২লক্ষ টাকা এবং ৭হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার শর্ত থাকলেও এ বিষয়ে কোন লিখিত ডিড করা হয়নি। মৌখিক আলোচনায় ৩১ জানুয়ারী সংস্থার ডিজিটাল সাইন বোর্ড লাগিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। বাড়ির মালিক ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে ভাড়ার চুক্তি পত্র সম্পাদনের চাপ দিলে আপাতত সাদা কাগজে লিখিত দেয়ার কথা জানায়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকার প্রতারিত গ্রাকরা বাড়ির মালিককে বিষয়টি অবগত করেন।
সংস্থার কর্মকর্তাদের আচরন বাড়ির মালিকের সন্দেহ হলে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে কোন ধরনের নিয়ম নীতি ছাড়াই শুধু মাত্র ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে এক থেকে দু’লক্ষ বা তার অধিক টাকা ঋণ প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে জামানতের নামে টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠে।
এনজিও কর্মকর্তাদের আটক রেখে স্থানীয়রা দেবিদ্বার থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গোপালগঞ্জ জেলার মোকসুদপুর উপজেলার ঝাকার কান্দার পাড় গ্রামের মৃতঃ মোসলেম শেখের পুত্র হাফিজুর রহমান(৪২), হাজী আক্তারুজ্জামানের পুত্র আবুল হোসেন(৩৩), কদমপুর গ্রামের মোঃ সিরাজ মিয়ার পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান(৩২), গোপ্তগাতী কান্দারপাড় গ্রামের আঃ রব শেখের পুত্র মোঃ লেবু শেখ(৩৬) এবং ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদী গ্রামের মৃতঃ সুভাষ ঘোষের পুত্র মিন্টু ঘোষ(২৮)কে আটক করলেও অপর ২ প্রতারক গাজীপুর জেলার কামরুল ইসলাম(৪৫) ও ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার ঝুংগুরদী গ্রামের মোসলেম উদ্দিন শেখের পুত্র এম,একরামুজ্জামান পালিয়ে যায়।
এসময় পুলিশ ১৩৫ সিসি ও ১০০ সিসি ২টি মোটর সাইকেল, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আল-আরাফা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচ্যুয়েল ট্রাষ্ট ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সংশ্লিষ্ট শাখার নামে চেক বই, সঞ্চয়ি হিসাবের বই, সংস্থার সিল, প্যাড, রেজিষ্টার বইসহ বিপুল পরিমান কাগজ পত্র উদ্ধার ও জব্ধ তালিকাভূক্ত করে।
পুলিশ জানায় ইতিপূর্বে প্রতারক চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘পল্লী নারী জাগরণ সংস্থা’ নামে প্রতারনা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা প্রতারক চক্র স্বীকার করেছে। ওই চক্রটি দির্ঘদিন যাবৎ দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতারনা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় বলেও জানায়। তাছাড়া সুবিল ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী ফতেহাবাদ ইউনিয়নের প্রতারনার শিকার একাধিক ব্যাক্তি পুলিশের কাছে ওই প্রতারনার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে প্রতারনার শিকার উপজেলার চান্দপুর গ্রামের ফুল মিয়ার পুত্র মাসুদ রানা জানান, তাকে ২লক্ষ টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ হাজার ২শত টাকা, মৃতঃ দুধ মিয়ার পুত্র আব্দুল জলিল জানান, তাকে ১লক্ষ টাকা ঋণ দেয়ার নামে ৫হাজার ২শত টাকা এবং একই গ্রামের ফুল য়িার পুত্র আল আমিন জানান, তার থেকে ৫ হাজার ২শত টাকা হাতিয়ে নেয়।
বাড়ির মালিক গোলাম মোস্তফা (মোমেন) জানান, গ্রাহকদের বক্তব্য শোনে এবং এনজিও কর্মকর্তাদের আচরনে মনে হলো ওরা প্রতারক। তাই ওদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি। সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) মোঃ সাইদুর রহমান’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে ওদের আটক করে এবং ২টি মাটর সাইকেলসহ চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করে ওদের থানায় নিয়ে যায়। ৭জন প্রতারকের মধ্যে ৫জনকে আটক করতে পারলেও বাকী ২জন কৌশলে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনায় দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) মোঃ সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ৭জনকে নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা দেবিদ্বার থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ পারভেজ তালুকদার জানান, আটক প্রতারক চক্রের সদস্যরা অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা মানুষের সরলতার সুযোগে এনজিওর নাম করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক চলমান মামলারও খোঁজ পাওয়া গেছে। গ্রেফতার হওয়া আসামী হাফিজুর রহমান’র বিরুদ্ধে ঢাকা’র ধামরাই থানায় মামলা নং-৭(৪)১২, ধারা-৪০৬ দঃ বিঃ, ফরিদপুর’র আলফাডাঙ্গা থানায় মামলা নং-১২(১০)০৫, জিআর-৮৫, ধারা-৪০৬/৪২০ দঃ বিঃ এবং আসামী লেবু শেখ এর বিরুদ্ধে ডিএমপি মিরপুর মডেল থানায় মামলা নং-৫৫(৯)১৫, ধারা-৩২৮/১০৯/৩৪ দঃ বিঃ বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, প্রতারক চক্রটি খুবই প্রভাবশালী। ওদের শেকড় গভিরে। ওরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এনজিওর নামে প্রতারনা করে আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে মীরপুর, ধামরাই, আলফাডাঙ্গায় এদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারনার মামলা চলমান রয়েছে মর্মে তথ্য পেয়েছি। তাদের ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত ২দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
The post দেবিদ্বারে কথিত এনজিওর ৫ কর্মকর্তা গ্রেফতার appeared first on Comillar Barta™.
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2kVN9ll
February 02, 2017 at 09:09PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন