নিজস্ব প্রতিবেদক ● কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি করায় সেখানকার বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারো দাবি কুমিল্লা নামেই বিভাগ হতে হবে, কারো কাছে নাম কোনো মুখ্য বিষয় না; যেকোন নামে বিভাগ হলেই চলে।
তবে, মাঠে কুমিল্লা নামপন্থীদের অবস্থান জোরালো। বিভাগের নাম কুমিল্লা রাখার দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে তারা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সব বিভাগের নাম ওই বিভাগের সদর দফতর যে জেলায় অবস্থিত, সেই জেলার নামে হয়েছে। যেমন ঢাকা বিভাগের নাম ঢাকা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের নাম চট্টগ্রাম বিভাগ। কুমিল্লার নামে বিভাগ না হলে কুমিল্লার এক কোটি মানুষের সঙ্গে অবিচার করা হবে।’
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘কুমিল্লা শহর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। যেহেতু একে বিভাগ ঘোষণার একটি সিদ্ধান্ত এসেছে, তাই হয়তো একটি নতুন নামের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অনেকেই। কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ আরো কিছু জেলা এর অন্তর্ভুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সেই সব জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে ঐক্যের ভিত্তিতে যদি এর নামকরণ ‘ময়নামতি’ করা হয়, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে কারো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ময়নামতি নামকরণ হলে ঘোরতর আপত্তি অাছে।’
ময়নামতি নামের বিষয়ে সরাসরি আপত্তি জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ময়নামতি রাখার যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, অামি এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’
তিনি কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে আরও বলেন, বাস্তবতা হলো কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করার জন্য কুমিল্লা নামই যথেষ্ট। কুমিল্লা তো কুমিল্লাই, এর আলাদা নাম লাগবে কেনো? ময়নামতির যেমন আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে কুমিল্লারও তেমন অালাদা ঐতিহ্য রয়েছে। কুমিল্লা এতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি শহর। এর ঐতিহ্যগত পরিচিতির জন্য আলাদাভাবে কোন নামের প্রয়োজন নেই। আমি চাই অচিরেই সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট রুস্তম আলী কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘ময়নামতির হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, এটা সত্য কথা কিন্তু কুমিল্লার সাধারণ জনগণ তা পুরোপুরি জানে না। তারা কুমিল্লাকে কুমিল্লা নামেই জানে চেনে। কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ সবার মনের ভেতরেই লালন হয়ে আসছে কুমিল্লা নামটি। সেক্ষেত্রে এই নামটি পরিবর্তন করে ময়নামতি করা হলে, সবার ভেতরেই স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। অামি মনে করি যেহেতু অামাদের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রকৃত চাহিদাসহ সবই বোঝেন, তাই আমার বিশ্বাস তিনি সাধারণ মানুষের মতামতকে মূল্যায়ন করবেন।’
কিছুটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ময়নামতি নামেই সন্তোষ প্রকাশ করে কুমিল্লা গণদাবি পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘কুমিল্লা নামকরণ করা হয়েছে ১৯৬২ সালে। এর আগে কুমিল্লার নাম ছিল ত্রিপুরা। কুমিল্লার নামকরণ করেছেন অাইয়ুব খান। আর তাই নেত্রী যদি এই নামের পরিবর্তে ময়নামতি নামে বিভাগ করেন, অামার মনে হয় না এতে কারো আপত্তি থাকা উচিত। কারণ নামে কিবা অাসে যায়, অামরা চাই বিভাগ। সেটা কুমিল্লা বা ময়নামতি একটা হলেই হলো। নাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে আমরা বিভাগ হারাতে চাই না।’
প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহম্মদ আলী কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘আধুনিক সভ্যতার রূপ হলো কুমিল্লা। সমৃদ্ধ কুমিল্লা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেকড় অনেক গভীরে। কুমিল্লাকে বাদ দিয়ে ময়নামতি নামে বিভাগের নামকরণের কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘আমরা কুমিল্লাবাসী আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শে আলাদা ধর্মীয় অনুশাসনে চললেও জেলার বৃহত্তর স্বার্থে সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি ও থাকবো। কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন চাই, অন্য নামে নয়।’
কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্য কোনও নাম আমরা কুমিল্লাবাসী গ্রহণ করবো না।’
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ইকবাল আনোয়ার বলেন, ‘অতীতে দেশে যত বিভাগ গঠন করা হয়েছে ওই জেলার কোনও বিশেষ নামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। যদি প্রাধান্য দেওয়া হতো তাহলে সিলেট বিভাগের নামকরণ হতো শাহজালাল বিভাগ। আসলে এমন প্রস্তাবনা কেন করা হলো আমার বোধগম্য নয়।’
দেশের প্রাচীন পত্রিকা আমোদ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাকীন রাব্বী বলেন, ‘কুমিল্লাবাসী হিসেবে আমি তীব্র অপমানবোধ করবো- যদি কুমিল্লা নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে বিভাগ ঘোষণা করা হয়। ’
নারী নেত্রী ও কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক পাপড়ি বসু কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, ‘একজন কুমিল্লাবাসী হিসেবে এমন প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
ময়নামতি নামের পক্ষে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। ময়নামতি বিভাগের সদর দফতর কুমিল্লায় চাই।’
বরুড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ময়নামতি একটি ঐতিহাসিক নাম। ময়নামতি নাম নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা কুমিল্লায় বিভাগ চাই।’
গোমেতি সংবাদ নামের স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, ‘ময়নামতি নামটি কুমিল্লার গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেবে। এতে এ বিভাগে আসতে অন্য জেলার লোকজনের আপত্তিও থাকবে না। ময়নামতি রানীর বাংলো ঘিরে ময়নামতি বিভাগের সদর দফতর করা হোক।’
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2lp4FhG
February 17, 2017 at 02:52PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.