এ রায়ে আমার কিছুই হবে না : বদরুল

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর হামলার দায়ে শাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বদরুল আলমকে দন্ডবিধির ৩২৬ ধারায় দোষী সাবস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাথে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুর ১১টা ৩০ মিনিট থেকে ১২ টা পর্যন্ত টানা আধাঘন্টা সময় ধরে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা ৩০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায় পড়ে শোনান। এসময় তিনি মামলার মোট ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনই দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে সাক্ষ্য দিয়ে বিচারিক কাজে সহয়তা করায় সাক্ষীদের ধন্যবাদ জানান।
এদিকে আদালতে আলোচিত এই মামলার রায় শুনতে সকাল থেকে আদালত চত্বরে কয়েকশ সাধারণ মানুষ জড়ো হন। রায় ঘোষণার পর তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আলোচিত এই ঘটনার পাঁচ মাস ৫ দিনের মাথায় বিচার কার্যক্রম শেষে আদালত থেকে এই রায় এল। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় খাদিজার ওপর হামলাকারী বদরুল উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৩ অক্টোবরে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গরুর মাস কাটার চাপাতি দিয়ে খাদিজাকে উপর্যুপুরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মনিরজ্ঞাতি গ্রামের বাসিন্দা বদরুল।
রায় ঘোষণা সময় আদালতের কাঠগড়ায় চুপচাপ থাকলেও কারাগারে নেওয়ার সময় আদালত চত্বরে বদরুল জয় বাংলা স্লোগান দেন। তিনি বলেন, এই রায়ে আমার কিছুই হবে না।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে রায়ে নারীদের অধিকার ও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
আর আসামি বদরুলের আইনজীবী মো. সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আমার মক্কেল ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা রায়ের নকল তোলার পর উচ্চ আদালতে আপিল করব।
মামলার বাদি খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে। রায় বহাল থাকলে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ৩ অক্টোবর ডিগ্রির ফাইনাল পরীক্ষা শেষে হল থেকে বেরিয়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস হামলায় আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যাওয়ার খবরে সিলেটসহ দেশজুড়ে হামলাকারী বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠে। স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজাকে দেখতে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হোসাইনসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তীব্র আন্দোলনের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদিজার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
গত ৫ মার্চ উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও শুনানি শেষে আদালত আজ ৮ মার্চ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য রেখেছিলেন। গত ১ মার্চ আদালত পরিবর্তন করে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দেন হামলার শিকার খাদিজা বেগম নার্গিস। মামলায় মোট ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য প্রদানকালে খাদিজা আদালতকে বলেন, আমার শরীরের যে যে স্থানে আসামি আঘাত করেছে, সেসব জায়গায় দাগ আছে। সে আমাকে সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী করেছে। আমি আসামি বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমি বিচার চাই।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাভার পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) প্রায় তিন মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে নিজ বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামে ফিরেন বদরুলের চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস।
গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার সময় বদরুল আলমের হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্কয়ারে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁর অবস্থার উন্নতি হলে গত ২৮ নভেম্বর খাদিজাকে সিআরপিতে ভর্তি করা হয়।
খাদিজাকে হত্যাচেষ্টার মামায় বদরুল এখন কারাগারে রয়েছেন। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর তাকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2m4Nejv

March 09, 2017 at 10:22AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top