মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথে অসুস্থ স্কুল শিক্ষক লিয়াকত আলী এখনও স্ত্রী ও দুই পুত্র নিয়ে ফেরারীদের মত জীবন যাপন করছেন । টাকা পয়সার অভাবে ঘর না তৈরীর কারণে তাদের বসত ভিটা এখনও খালি পড়ে আছে আর তাই তারা প্রতিবেশী আত্নীয়ের ঘরে কোন মতে জীবন যাপন করছেন ।এ নিয়ে তাদের দুঃখের সীমা নেই । অথচ প্রবাসী অধ্যুষিত এই বিশ্বনাথে প্রতিবৎসর কোটি কোটি টাকা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে আলীশান বাড়ী ঘর নির্মান হচ্ছে । পাশাপাশি বিশ্বনাথে হাজার হাজার বিলাসবহুল বাড়ী , যেখানে কেবল লোকজন থাকার অভাবে বছরের পর বছর পড়ে আছে অনাদরে আর অবহেলায়। অথচ বিত্তবানরা একটু সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেই আদর্শ মানুষ সৃষ্টির সেই মহান কারিগরটি জীবনের বাকী সময় থাকার জন্য একটি আশ্রয় খুঁজে পাবেন ।
জানাগেছে বিশ্বনাথের স্থানীয় মন্ডলকাপন গ্রামের বাসিন্দা মোঃ লিয়াকত আলী দীর্ঘদিন বিশ্বনাথের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন । একসময় এই পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজস্ব একটি ব্যবসা করেন ।
একসময় ব্যবসায় লোকসান দিলে তিনি কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন । এরই অংশ হিসেবে বছর তিনেক পূর্বে তিনি স্ট্রোক করেন । আর এর ফলে তার দেহের একটি অংশ প্যারালাইসড হয়ে যায় । তখন থেকে বিছানাই হয়ে যায় তার নিত্যসঙ্গী । অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠা তার পক্ষে সম্ভব হত না ।
এসময় নিজ ব্যবসার মালামাল, আসবাবপত্র বিক্রি করে আর স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদের আর্থিক সহযোগিতায় অনেক চিকিৎসার পর নিজ প্রচেষ্টায় বিছানা থেকে কেবল উঠে বসার শক্তি পেলেও একা চলার বা কথা বলার শক্তি ফিরে পাননি । তখন নিয়মিত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল । কিন্তু তাদের আয় উন্নতির কোন পথ না থাকায় স্বাভাবিক চিকিৎসা তো দূরের কথা দুই শিশু পুত্র আর স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে থাকাটা তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে ।
এমতাবস্থায় বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষক লিয়াকত আলীর জন্য একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন চাওয়া হয় । আলহামদুলিল্লাহ মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম দয়ার বদৌলতে মাসখানেকের মধ্যে ১২ লক্ষ টাকারও বেশী প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায় এবং কিছু প্রতিশ্রুতি ছাড়া বাকী সব অনুদান তাদের হাতে সরাসরী পৌছে । মোট কথা একজন অসুস্থ শিক্ষকের জন্য তার ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম দারুণ উৎসাহিত হবে এবং নিঃসন্দেহে বিশ্বনাথের বাহিরের মানুষের কাছে এ অন্চলের মানুষের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে ।
মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার কারনে সময়মত চিকিৎসা দেওয়ায় শিক্ষক লিয়াকত আলী যেমন নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছেন ঠিক তেমনী চিকিৎসা শেষে উদৃত ৭ লক্ষ টাকার এফ ডি আর খুলার কারণে এখন প্রতি মাসে সামান্য যে মুনাফা পান তা তাদের ৪ সদস্যের পরিবারের ভবিষ্যত জীবনযাপনের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে । কিন্তু নিজের বসতভিটা থাকলেও টাকার অভাবে ঘর নির্মান না করায় এখনও তাদেরকে প্রতিবেশী আত্মীয়ের ঘরে ফেরারীদের মত জীবনযাপন করতে হচ্ছে ।
তাদের এই মৌলিক গুরূত্বপূর্ণ সমস্যার কথা ভেবে তারই কিছু প্রাক্তন ছাত্র ও স্বজনরা দুই কামরার একটি ঘর, ১ টি বাথরুম ও ১টি রান্নাঘরের জন্য প্রাথমিক একটি পরিকল্পনা হাতে নেন । তাতে অনেক যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে উপরোক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘর নির্মান করতে হলে নূন্যতম ৮ লক্ষ টাকার প্রয়োজন । হাতে তাদের রয়েছে বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা ও রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস.সি ১৯৯১ এর ব্যাচ এর প্রদত্ত ৬০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক লিয়াকত আলীর নিকটাত্মীয়রা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা প্রদান করবেন ।
সেই হিসেবে এখনও বাকী ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা প্রয়োজন । এমতাবস্থায় শিক্ষক লিয়াকত আলীর প্রাক্তন ছাত্র ও বিশ্বনাথের প্রবাসী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন একটু সাহায্যের হাত প্রসারিত করলে অবশিষ্ট প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা হবে এই বিশ্বাস সকলের । বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের আহবানে অতীতের সকল মহৎ কাজের ন্যায় এবারও প্রবাসীরা এবং স্থানীয় বিত্তবানরা আদর্শ মানুষ সৃষ্টির সেই মহান কারিগর শিক্ষক লিয়াকত আলীর জীবনের বাকী সময় থাকার জন্য একটি আশ্রয় নির্মান করে দিবেন সেই প্রত্যাশা সমস্ত বিশ্বনাথবাসীর।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2mWJQKq
March 17, 2017 at 06:40PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন