ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আশরাফকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণার একদিন পরে বুধবার তার কার্যালয়ে তালা মেরে দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
বুধবার সকালে উপাচার্য তার নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সাধারণ সদস্যদের নিয়ে তার পথরোধ করে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
শিক্ষকদের প্রতিবাদের মুখে উপাচার্য অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে চলে যান। পরে শিক্ষকরা কার্যালয়ের প্রবেশদ্বারে তালা মেরে দেয়।
এর আগে ছয় দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস এবং ২২ জানুয়ারি থেকে ১২ কার্যদিবস ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছিল।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ডরমেটরিতে চুরির ঘটনা এবং গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের ভাড়া বাসায় হামলা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছে।
ডরমেটরির চুরির ঘটনার পর শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা, বিভিন্ন বিভাগে প্ল্যানিং কমিটিসমূহের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ ব্যাতিরেকে ইতিপূর্বে প্রচারিত সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলসহ আরও কয়েকটি নতুন দাবী যুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মো: আলী আশরাফকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে।
শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবীর জবাব এবং তাদের চলমান আন্দোলনকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এর স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা জানায়, ডরমেটরির চুরির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলা দায়ের করেছে এবং ডরমেটরির নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শিক্ষকের বাসায় ডাকাতির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়ের করতে গেলে ঘটনাস্থল ক্যাম্পাসের বাহিরে হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং ভিকটিমকে উপস্থিত থেকে নিজে বাদী হয়ে মামলা করতে বলে। তারা আরও জানায়, উপাচার্য যোগদানের পর থেকে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশক্রমে বিধি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগের শিক্ষক সমিতির ৬দফা দাবীর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রক্টরের অব্যাহতি, আইকিউএসি-এর পরিচালকের অব্যাহতি, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব এম.এম শরীফুল করীম এর চেয়ারম্যান এবং ডিন এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কৃত ছাত্রের ক্যাম্পাসে অবস্থান, শিক্ষকের বাসায় ডাকাতির বিষয়ে মামলা এবং খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের বিচার বিষয়ে ইতোমধ্যে অসংখ্যবার আলোচনা করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের ভিত্তিতেই শিক্ষক সমিতি আন্দোলন স্থগিত করেন এবং যথারীতি ক্লাশ ও পরীক্ষা চলমান রয়েছে। বিষয়টির পুনরাবৃত্তি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার অভিযোগে সাময়িক বহিস্কৃত ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ ইসলাম গল্পের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বার শ স্বাক্ষর সম্বলিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগ যৌথভাবে উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপি দেয়।
তারা স্মারকলিপিতে মানবিকতা এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনের কথা বিবেচনা করে অতি শীঘ্রই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে গল্পকে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায়। এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে 'কিছু অযৌক্তিক ও অনৈতিক' বলে আখ্যা দিয়ে শিক্ষক সমিতির 'সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ব্যাতিরেকে' উপাচার্যকে অবাঞ্চিত ঘোষণা এবং উপাচার্য কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার। বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের কাছে আমরা যৌক্তিক বিভিন্ন দাবী উত্থাপন করলেও তিনি দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেননি।
তাই আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি।’ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষকদের বাসায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও ভিসি আজ পর্যন্ত বাসাগুলো দেখতে কিংবা শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে আসেননি। ১৮ জানুয়ারির ডাকাতির ঘটনায় ১৬৩ জন শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তিনি শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
মামলা প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, ডাকাতির ঘটনায় চুরির মামলা করলে কীভাবে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে? সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করলে উপাচার্য ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে গিয়েছিলো। কিন্তু আবারও তারা অযৌক্তিক কিছু দাবী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’
from Comillar Khabor – Comilla News http://ift.tt/2mFMGV3
March 08, 2017 at 09:06PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন