চান্দিনা প্রতিনিধি ● ‘বাবা আমার সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টেহা খরচা কইরা আলুর চাষ কইরছি, কিন্তু ২৫ পইসাও ফিরত পাই নাই। আমি এহন পথে বইসা গেছি। কী অইব এহন আমার? আর্তচিৎকার ও আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল এলাকার আলু চাষী কৃষক জয়নাল আবেদীন টইক্কা’।
তিনি ২৪’শ শতাংশ (২০ কানি) জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। একই উপজেলার হোসেনপুর এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলামের সামনেও ঘোর অন্ধকার। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা ও সুদে টাকা এনে আলু চাষ করে এখন পথে বসেছেন। লাভ দূরে থাক, পুঁজির ন্যূনতমও ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় স্তব্ধ প্রায় তিনি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ কানি (৬’শ শতাংশ) ক্ষেতে আলু চাষ কইরছিলাম, কিন্তু সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। বৃষ্টি আমারে শ্যাষ কইরা দিল। গেল বছরও ধারদেনা কইরা আলু কইরছিলাম, কিন্তু লস অইল। মনে কইরছিলাম এইবার লস অইব না, কিন্তু এইবারও সব শ্যাষ। এহন আমার কী অইব?’
শফিকুল ইসলাম এখন ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার ঋণের নিচে চাপা পড়েছেন। এমন আর্তচিৎকার, হাহাকার ও আহাজারি শুধু জেলার আলু চাষী জয়নাল আবেদনী বা শফিকুল ইসলামেরই নয়, শত কৃষকের।
জানা যায়, হঠাৎ করে গত সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টির ফলে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় আলু ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভারী বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় আলু ক্ষেত। পানিতে আলুর পচন ধরে। তার ফলে অত্র জেলার আলু চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিশেষ করে জেলার চান্দিনা উপজেলার কাজী জুরপুকুরিয়া, কুটুম্বপুর, পরচঙ্গা, বসন্তপূর, দোল্লাই নওয়াবপুর, গল্লাই, পিপুইয়া, কৃষ্ণপুর, মহিচাইল, হোসেনপুর, কেশেরা, অম্বরপুর, মোহনপুর, তেঁতুইয়া, কংগাই, বসন্তপুর, দারেরা এলাকার আলুর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। এর ফলে কৃষকেরা নিঃস্ব প্রায়। কী করে এই ক্ষতি পোষাবেন তারও কোনো উপায় দেখছেন না। এমন দূরাবস্থায় সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন তারা।
কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সরকার যদি আগগো দিকে একটু তাকাইত, তা অইলে বাঁচতে পারতাম। সরকার কি আমগোরে কোনো সহযোগিতা করব না। আমাগোরে বাঁচাইব না?’ কৃষক শফিকুল ইসলামেরও একই চাওয়া। একই প্রত্যাশা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষকেরই।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ.ম জাকারিয়া বলেন, আলু চাষিদের ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে এবং তাদের সহযোগিতার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। কৃষকদের সবসময়ই আমরা সহযোগিতা করে থাকি। যাদের কৃষি কার্ড রয়েছে তাদের সার, বীজসহ সরকারি সহযোগিতাগুলো কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিই। এটা আমাদের নিয়মিত কাজ। এখন বিশেষ একটা দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা, এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা জানাব। মন্ত্রণালয়কেও জানাব। এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কৃষি অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন তথ্যগুলো সংগ্রহণ করেন। কত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করার জন্য। সব তথ্য সংগ্রহ করার পর সরকারের কাছে তথ্যগুলো পাঠাব। এ সপ্তাহেই যেন তথ্য কম্পাইলের কাজটি সম্পন্ন হয় সেই নির্দেশাও দেওয়া আছে। আশা করছি, এ সপ্তাহেই তথ্য সংগ্রহের কাজটি শেষ হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করার বিষয়েও আমরা আশাবাদী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এ বিষয়ে বলেন, বৃষ্টির কারণে চান্দিনা উপজেলায় আলুর ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এটা খুবই কষ্টদায়ক। কৃষকদের অনেকেই কষ্ট করে অর্থ সংগ্রহ করে আলু চাষ করেছিলেন ভালো থাকার জন্য কিন্তু অসময়ে আসা বৃষ্টির কারণে তারা আজ নিঃস্ব প্রায়। বিষয়টি আমাদেরও মর্মাহত করেছে। বিপদগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণলায়ের সঙ্গে যোগাযোগ এবং এফবিসিআইয়ের মাধ্যমেও তাদের জন্য কিছু করা যায় কি না তারও চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চিহ্নিত করার জন্য একটা জরিপ করা দরকার। সেটা খুবই জরুরি। জরিপটা করা যায় কি না, যদি যায় তাহলে সেটা কিভাবে হবে তাও আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। জরিপটা সম্পন্ন করা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চিহ্নিত করা যাবে। তার ভিত্তিতেই তাদের সহযোগিতা করা যাবে, যদি সরকারি কোনো সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায়। তবে আমরা আশাবাদী কৃষকদের সহযোগিতা করতে পারব। কারণ বর্তমান সরকার কৃষক বান্ধব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কৃষকদের যেকোনো প্রয়োজনে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তাদের বিষয়ে সবসময়ই তিনি আন্তরিক। তাদের অবদানের কথা সবসময়ই তিনি বলে থাকেন। কৃষকদের পাশে সরকার সবসময় ছিল, এখনো আছে। আগামী দিনেও কৃষকদের পাশে আমরা থাকব, ইনশা আল্লাহ।
from Comillar Barta™ http://ift.tt/2mIgxeA
March 14, 2017 at 06:34PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন