মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: গত এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানিতে তলিয়ে রয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথের কৃষকদের ৬৫৪৩ হেক্টর ফসল। এতে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসলের এমন পরিণতিতে নির্বাক কৃষক। উপজেলার ১৬ হাজার ৫শত কৃষকের চোখে এখন শুধুই পানি।
ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া ধানক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন তারা। ধারকর্জ করে আবাদ করা ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে পড়েছেন অনেকেই দুশ্চিন্তায়। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার আট ইউনিয়নের সর্বত্র থাকা ‘রবিশষ্য ও বোরো ধান’ তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলাবাসীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চরমে পৌঁছেছে। দিন দিন উপজেলার বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল-হাওরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ।
গতকাল পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৬৫৪৩ হেক্টর বোরো ধান আবাদকৃত জমি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিশ্বনাথে বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদকৃত রবিশষ্যের। উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে,গত মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী ও গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন।
গত মঙ্গলবার উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আয়োজিত জরুরী সভায় স্থানীয়ভাবে ‘বিশ্বনাথ উপজেলা’কে দূর্যোগপূর্ণ উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সভা থেকে ‘জেলা প্রশাসক’সহ সরকারের উধর্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ‘বিশ্বনাথ উপজেলা’কে দূর্যোগপূর্ণ উপজেলা ঘোষণা করে দ্রুত কার্যক্রর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
কারণ পানিতে তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান গাছ থেকে আর কোনো রকমেই ফসল পাওয়া সম্ভব নয় বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সভায় উপস্থিত সবাইকে অবহিত করা হয়। বিশ্বনাথের চাউনধনী হাওর,বেলার হাওরসহ নিচু জমি অকাল বর্ষণের পানিতে তলিয়ে গেছে। অকাল বর্ষণে সারা বছরের সম্ভাব্য খাদ্য বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় এসব হাওরপাড়ের লোকজনের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৭হাজার ৬শত হেক্টর বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৩শ ৬০ হেক্টর, উফসী ৬ হাজার ৩শ ৪০ হেক্টর ও স্থানীয় বোরো চাষ হবে ৩শ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার কারিকোনা গ্রামের কৃষক রইছ আলী বলেন, এ বছর ২০ কেদার জমি চাষ করেছি ঋণ করে। সব ফসল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ বছর একটি ধানও পাওয়া যাবেনা। এখন ৮ সদস্যের সংসার চালাবো কি করে, আর কীভাবে ঋণের টাকা সুদ করবো, সে চিন্তায় আছি।
বিশ্বনাথ ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতি মধ্যে কৃষকদের মধ্যে ফরম বিরতণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আলীনূর রহমান বলেন, প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ১৬ হাজার ৫শত কৃষক পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এতে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব জানা যাবে। গতকাল পর্যন্ত উপজেলার ৬৫৪৩ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2o9PDv3
April 08, 2017 at 08:00PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন