ঢাকা, ২৬ এপ্রিল- অনেকদিন ধরেই একটি গুজব সচেতন ভাবে ছড়ানো হয়েছে আমাদের লোকচক্ষে খাটো করার জন্য। এই ছবিটিও সে ভাবেই সাজানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে, হুমায়ুন আহমেদের মেয়ের এক বান্ধবী তাঁদের বাড়ি আসত। সেখান থেকেই নাকি প্রেম। কি ডাহা মিথ্যা কথা এটা। প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন সম্প্রতি আনন্দবাজারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমনভাবেই তার ও হুমায়ূন আহমেদের একান্ত কিছু কথা বলেন। শাওন বলেন, কস্মিনকালেও হুমায়ূনের কন্যার সঙ্গে বন্ধুত্ব দূরস্থান, কোনো পরিচিতিও ছিল না। থাকবেই বা কী করে! আমাদের স্কুল-কলেজ সবই তো আলাদা। পরিচয়ের সূত্রটা তো ছিল গান। রবীন্দ্রসংগীতের অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন হুমায়ূন। দিনভর প্রবল পরিশ্রমের মধ্যে সেটাই ছিল তাঁর বড় আশ্রয়ের জায়গা। সেখানেই গান দিয়ে দ্বার খুলেছিলেন শাওন। বা বলা ভালো, তিনি খোলেননি, দরজা খুলে গিয়েছিল আপনা হতেই। সেই ক্লাস সিক্স এ পড়ার সময় থেকেই তো ওনার নাটকে অভিনয়, গান করি। ইউনিটের কেউ যদি গান জানতেন, উনি রিহার্সালের পর তাঁর কাছে শুনতে চাইতেন। সেই ভাবে আমার কাছেও অনেকবার শুনতে চেয়েছেন। আমি খুব চটপট গান তুলে নিতে পারতাম বলে আমার নাম দিয়েছিলেন টেপ রেকর্ডার! বলেন শাওন। সেই টেপ রেকর্ডার যে নিরবচ্ছিন্নভাবে কবে থেকে বাজতে শুরু করল হুমায়ূনের জীবনে, আজ আর তার সঠিক ঠাহর পান না শাওন। মাঝে মাঝে সিগারেটের রাংতায় হাতচিঠি দিতেন। একবার লিখে দিয়েছিলেন সুনীলের লাইন- ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে। হয়তো রিহার্সালের পর একা বসে খাচ্ছেন, আমি হয়তো এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি কিছু লাগবে কি না। ছেলেমানুষের মতো খুশি হতেন। একটু যত্ন একটু মায়া খুবই চাইতেন উনি। সেই মায়ার কি অভাব ঘটেছিল একটা সময়ে পৌঁছে? অজস্র অমর চরিত্রের এই স্রষ্টা কি মধ্যজীবন পার করে নিজেই হয়ে উঠছিলেন নিঃসঙ্গ কোনো চরিত্র? জবাবে কোনো নেতিবাচক উত্তর কিন্তু পাওয়া গেল না শাওনের কাছে। হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন সম্পর্কেও উষ্মার প্রকাশ ঘটালেন না। শুধু এটুকুই বললেন, দেখুন সবাই শিক্ষিত মানুষ। কখনও কোনো কটুবাক্য বিনিময় হয়নি আমাদের মধ্যে। বরং হুমায়ূন সাহেবের বড় পুত্র নূহাসের সঙ্গে আমার মধুর স্মৃতি রয়েছে। আমরা ওকে নিয়ে বিদেশে বেড়াতেও গিয়েছি। এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি অপেক্ষা করব। আমার ধারণা, ও যখন সত্যি বড় হয়ে যাবে সে দিন আমাদের আবার দেখা হবে। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে পাওয়া প্রিয়তম উপহারটা কী? এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, বিয়ের আগে আমি তো কোনো দামি উপহার নিতাম না। উনার পাথরপ্রীতি ছিল খুব। একটা লাল গোমেদ দিয়েছিলেন, খুবই দামি। আমি নিইনি। তারপর যেটা দিলেন তা ওনার পক্ষেই সম্ভব। রেললাইন থেকে তুলে আনা একটা বড় পাথরে কলম দিয়ে কয়েকটা ক্রস চিহ্ন করে দিয়ে বলেছিলেন, এটা নিতে নিশ্চয়ই কোনো বাধা নেই! আমি সেই পাথরটার প্রেমে পড়লাম যেন। সব সময় সঙ্গে রেখে দিতাম, কলেজে নিয়ে যেতাম! মা তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন আমার আচরণে। ওনার একটা গল্প রয়েছে পাথর নামে। সেই গল্পে এই ঘটনার ছায়া রয়েছে।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ouT437
April 26, 2017 at 07:48PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন