কুমিল্লায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা

মাহফুজ নান্টু ● চলতি বছর চৈত্রমাস থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে বৈশাখ মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে ভারী বর্ষণ শুরু হয় কুমিল্লা জুড়ে। ভারী বর্ষণ ও দমকা বাতাসে পরিপক্ক হতে থাকা ১লাখ ৬০ হাজার ৩১ হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকির মুখে পড়েছে। এত করে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রসারিত হচ্ছে।

এ বছর চৈত্রমাসের মাঝামাঝি আগাম কাল বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি আর দমকা বাতাস শুরু হয়েছে। গত পনের দিনে দু’একদিন পর মাঝারি বৃষ্টি আর দমকা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে কুমিল্লায়। গত তিন দিন ধরে দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া দমকা বাতাস আর মাঝারি বৃষ্টি। দমকা বাতাসে মাঠে নুযে পড়ছে ধান গাছগুলো। তলিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে।

এভাবে আরো কিছু দিন বৃষ্টি অব্যহত থাকলে জেলার লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের মাঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলার ৬০ হাজার কৃষক।

এদিকে সবচেয়ে বেশী হুমকির সম্মুখীন জেলার নিন্মাঞ্চলের ধানী জমি। অল্প বৃষ্টিতেই যেখানে পানি জমে যায় আর সে এলাকাগুলোতে গত ৩ দিন ধরে ধারবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সরেজমিনে জেলার নিন্মাঞ্চল দাউদকান্দি, মেঘনা তিতাস, সদর দক্ষিণ, সদর ও বুড়িচং, ব্রাক্ষ্মনপাড়া উপজেলায় ঘুরে ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে ধানের শীষগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে জমির সব  ধান পরিপক্ক নাও হতে পারে। এছাড়াও যেগুলো কিছুটা পরিপক্ক হয়েছে সেগুলোও বাতাসে নুয়ে পরে পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। মিশে যাওয়া ধানগুলো অপরিপক্কতার কারনে নষ্ট হয়ে যাবে দ্রুত। যার কারনে  কৃষকরা তাদের কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

এদিকে জেলার নিন্মাঞ্চল হোমনা মেঘনা ও দাউদকান্দিসহ আশেপাশের এলাকায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ, ভাঙ্গি ও মিষ্টি কুমড়ার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে গোমতী চরে বাজারজাত করার অপেক্ষায় থাকা মিষ্টি কুমড়ো, চিচিঙ্গা, ঢেড়স, চাল কুমড়া, বেগুন, মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য সবজিগুলো।

শনিবারসহ পুরো বৈশাখমাসের এ অল্প কয়দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টি ও দমকা বাতাস কুমিল্লার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, তাতে ফসলের মাঠে সবুজ সবজি ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

জেলার সদর ও বুড়িচং উপজেলার গোমতীচরের অন্তত ১০ জন কৃষক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভারি বৃষ্টির কারনে এ বছর কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাবে। কারণ মাঠে জমে থাকা পানি থেকে ধান কাটা ও সংগ্রহ অনেক কষ্টের আর এ কারনে কৃষি মজুরি বেড়ে যাবে।

এদিকে ভারী বর্ষণ  গোমতী চরের সবজি ক্ষেতে  তেমন সমস্যা না হলেও দমকা বাতাসে সবজি ক্ষেতের মাচা ভেঙ্গে যায়। গত কয়েকদিনের কালবৈশাখী ঝড়ে গোমতী চরের শাওয়ালপুর, টিক্কারচর, রত্নাবতী, বানাশুয়া, কামাড়খাড়া, ভান্তি এলাকায় বরবটি, টমাটো, চালকুমড়োর মাচা নষ্ট হচ্ছে। বহু স্থানে শতাধিক একর জমিতে আবাদ করা বরবটি, চাল কুমড়ো, শশা, ঝিঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা জানান, বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস ও শিলা বৃষ্টিতে ফসলের যে ক্ষতি হয় তা কাটিয়ে উঠা এসব প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এদিকে সদর দক্ষিণ ও চান্দিনা উপজেলার কৃষক আবদুল মজিদ, সোবহান, আয়েত আলী, জুলফিকাসহ আরো অন্তত কুড়িজন কৃষক জানান, বিগত বছর গুলোতে কদাচিৎ এক আধটু ঝড়-বৃষ্টি হলেও এ বছরের মত এমন ধারাবাহিক ঝড়-বৃষ্টি আর দমকা বাতাস প্রবাহিত হয় নি। এখনো আষাঢ়-শ্রাবন মাস আসে নি,তার আগেই এমন জড়-বৃষ্টি ভাবিয়ে তুলছে কৃষক সম্প্রদায়কে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আসাদুল্লাহ জানান, বোরো ধানের মাঠে তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর শুনে নি। তবে ঝড়-বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



from ComillarBarta.com http://ift.tt/2q26Syp

April 22, 2017 at 11:37PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top