কলকাতা, ১৮ এপ্রিল- এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে চলেছে ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে। এক মুখ্যমন্ত্রী চিটফান্ড কাণ্ডে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হওয়া এক সাংসদের সঙ্গে দেখা করবেন। যদিও তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে এখন জেল থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তবু তিনি একজন জেল-বন্দি আসামি। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহলে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। সেই জল্পনা নতুন মাত্রা পেয়েছে নারদকাণ্ডে সিবিআই-এর এফআইআর দায়ের করার পরে। দেখে নেওয়া যাক মমতা-সুদীপের এই সাক্ষাৎকার কী কী বিপদের বার্তা বহন করবে। প্রভাবশালী তত্ত্ব শুধু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, এর আগে যত জন তৃণমূল নেতাদের সিবিআই চিটফান্ড-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে, তাদের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে একটি জোরাল যুক্তিই তদন্তকারীদের আইনজীবীরা দিয়েছেন। তা হল অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। এরা ছাড়া পেলেই তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন। একসময় প্রভাবশালী তকমা ঝেড়ে ফেলতে সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া মদন মিত্রকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল। মমতা, সুদীপের সঙ্গে দেখা করে সেই তত্ত্বই আরও জোরদার করবেন বলেই আশঙ্কা। একজন মুখ্যমন্ত্রী জেল-বন্দি সাংসদের সঙ্গে দেখা করছেন, আদালতে এর থেকে বড় সওয়াল করার যুক্তি আর কী পেতে পারে সিবিআই! এই সাক্ষাতের পরে সুদীপের জামিন পাওয়া আরও কঠিন হতে পারে। রাজনৈতিক প্রভাব যদি এই সাক্ষাতের পরে সুদীপ সহজে জামিন পেয়ে যান, তাহলে প্রশ্ন উঠবে, তবে কি মমতা তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব খাটালেন সুদীপের জামিন নিশ্চিত করতে? এর ফলে বাম-কংগ্রেসের হাতে নতুন অস্ত্র এসে যাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে মমতা-মোদী বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গেছে। জল্পনা, সুদীপের মতো দলের নেতাদের বাঁচাতে মমতা দরবার করে এসেছেন মোদীর কাছে। বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী তো সরাসরিই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা অনন্য। এর আগে ভবানীপুর থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন। এবার দিদি-ভাই মিলে সুখ-দুঃখের কথা বলে হয়ত ভাইকে ট্রেনে করে নিয়েই ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। বেনজির দৃষ্টান্ত আইনজীবীদের মতে সুদীপ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও, তিনি একজন বন্দি। জেলের বদলে হাসপাতালে রয়েছেন। শুধু স্থান বদল হয়েছে, কিন্তু তিনি আসলে জেল-বন্দিই। এ ভাবে বন্দিদের সঙ্গে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর দেখা করা এক বেনজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সাধারণত জেল সুপারের অনুমতি নিয়ে আসামির পরিবারের লোকজন বা বন্ধুরা দেখা করতে পারেন। তবে সেখানে বন্দি জালের এক দিকে ও সাক্ষাৎপ্রার্থীরা জালের অপর দিকে বসেন। তবে সুদীপ-মমতার ক্ষেত্রে সেরকম কোনও ব্যবস্থা থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রী কোনও আইনও অবশ্য ভাঙছেন না। ভুবনেশ্বর স্পেশাল জেলের সুপার আর এন সোয়েন বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই আদালত থেকে অনুমতি নিয়েই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। বেআইনি কিছু না করলেও মুখ্যমন্ত্রীর পদের সঙ্গে মমতার এই পদক্ষেপ সঠিক বার্তা বহন করে না। এটাও বিরোধী দলগুলির হাতে একটি নতুন অস্ত্র হবে। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি কোনও নেতা গ্রেফতার হলেই মমতা তাঁর সঙ্গে এভাবেই দেখা করতে যাবেন? মোদীকে বার্তা মমতার সফরে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওড়িশা সরকার সূত্রে জানানো হয়েছে, মমতা সেখানে রাজ্য সরকারের অতিথি হিসেবেই থাকবেন। পুরীর মন্দিরে পুজোও দিতে যাবেন। এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। একেই রোজভ্যালি-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সুদীপের সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ, তার উপরে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক দুটি ঘটনাই মোদী-অমিত শাহদের জন্য একটি কড়া বার্তা বহন করবে। নারদ-কাণ্ডে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই-এর এফআইআর দায়ের করা বুঝিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার মমতাকে ছেড়ে কথা বলবে না। সঙ্গে রাজনৈতিক আক্রমণও বাড়বে। বিজেপি-র একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার পথে মমতার বাধাও মানবেন না মোদী। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলছেন, আসলে মোদীজি-অমিতজির ভুবনেশ্বরে রোড শোয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছিলেন তিনিও সেরকম কিছু করবেন। কিন্তু দেখেছেন রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল হবে না। তাই সুদীপকে দেখতে যাওয়ার কথা বলছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যেবেলার বিমানে মমতার ভুবনেশ্বরে যাওয়ার কথা। ফিরবেন বৃহস্পতিবার। আপাতত মমতার ভরসা রাজ্যে তাঁর উন্নয়নের কর্মসূচি ও এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তা। এইসব রাজনৈতিক বিপদের সামনে সেই উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তার উপরে ভর করেই তিনি বৈতরণী পার করতে চান।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2pc6il2
April 18, 2017 at 06:07PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন