কলকাতা, ১৭ এপ্রিল- রামনবমীর হাওয়া তুলে বিজেপি যে অনেকটাই সাফল্য পেয়েছে তা নিয়ে এক মত রাজনৈতিক মহল। এ বার সংখ্যালঘু ভোট কাছে টানতে জোড়া চাপ তৈরি করলেন মোদী ও যোগী। দেশে তিন তালাক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করাই লক্ষ্য মোদী সরকারের। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিপুল জয়ের পরে তালাক রোধে উৎসাহ বেড়েছে বিজেপির। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি মূলত সংঘ্যাগুরুর ভোটে জিতলেও মুসলমান পরিবারের মহিলাদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কারণ, স্বাধীনতার পরে এই প্রথম দেশের কোনও সরকার তালাক প্রথা বিলোপের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ নিয়ে নিজেদের বিরোধিতার কথা জানিয়ে দিয়েছে মুসলমি পার্সোনাল ল বোর্ড। ইসলামি আইন অনুযায়ী, স্ত্রীকে তিনবারে তিন তালাক দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে স্বামীকে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের দাবি, তিন তালাকের বিষয়টি একটি ব্যক্তিগত আইন। সুতরাং তা কেন্দ্র সংশোধন করতে পারে না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এই বিতর্কের সমাধান দরকার। কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কপিল সিব্বলের বিরোধিতা সত্বেও গ্রীষ্মাবকাশের মধ্যেই এই মামলার শুনানি চাইছে সর্বোচ্চ আদালত। ছুটির মধ্যেই পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ এই ইস্যু পর্যালোচনা করবে। ১১ মে শুরু হবে শুনানি। শুধু তালাক নয়, একই সঙ্গে বহুবিবাহ এবং নিকা হালাল নিয়েও শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই ঘোষণার পরে গত রবিবার অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তাদের অবস্থান কিছুটা বদলেছে। জানিয়েছে, তিন তালাক নিয়ে শরিয়তের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে মুসলমান দম্পতিদের। নিয়ম না মেনে মৌখিক ভাবে তালাক দেওয়া হলে মুসলমান পুরুষদের সামাজিক বয়কট করা হবে। ঠিক সেই দিনেই নতুন করে তালাক নিয়ে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশ জয়ের পরে এই প্রথম মোদী তালাক নিয়ে মুখ খুললেন। ভুবনশ্বের দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শেষ দিনে মোদী বিজেপি নেতাদের বলেন, নিজের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে প্রতিটি মুসলমান মহিলার পাশে দাঁড়াতে হবে। গোটা দেশে তালাকের বিরুদ্ধে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওড়িশার বৈঠকে। তালাক প্রথার পক্ষে যে সব রাজনৈতিক দল কথা বলছে তাদের সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করবে বিজেপি। আগামী মাস থেকেই সেই কর্মসূচি শুরু হবে। এ বার উত্তরপ্রদেশের সন্ন্যাসী মুখ্যমন্ত্রীও তালাক নিয়ে সরব হলেন। গেরুয়াধারী হিন্দু নেতা যোগী আদিত্যনাথ নিজের নতুন ইমেজ বানাতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছেন। হিন্দু ভোটের পাশাপাশি মুসলমান মহিলাদের ভোটও যে তাঁকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছে তা স্মরণে রেখে গরিব ঘরের মুসলমান মেয়েদের সরকারি উদ্যোগে গণবিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বার তালাক নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার যে আরও কড়া অবস্থান নিতে চলেছে তা এ দিন স্পষ্ট করলেন যোগী। সোমবার লখনউতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন যাঁরা তালাক ইস্যুতে চুপ করে রয়েছেন তাঁরাও সমান অপরাধী। এই প্রসঙ্গে তিনি মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কাহিনি উল্লেখ করে বলেন, সেই সময়ে যাঁরা চোখ বুজে ছিলেন তাঁরাও অপরাধ করেছিলেন। তালাকের নামে মুসলমান মেয়েদের উপরে নির্যাতন চলছে বলে মন্তব্য করেন যোগী। গত ৬ নভেম্বর তালাক প্রথা বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে কলকাতায় সমাবেশ করে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ। ওই মঞ্চে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। বাংলায় জমিয়তের সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও এখন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনিও ছিলেন মঞ্চে। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই পার্থবাবু বলেন, আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে থাকবেন কি না, তা আমাকেই ঠিক করতে দিন। এর বিচার করার জন্য সংবিধান আর উপরওয়ালা আছে। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য পরিষ্কার করে দেয় যে, রাজ্যের শাসকদল তিন তালাক নিয়মের পক্ষে। এ বার এই রাজ্যে তালাক নিয়ে পথে নামতে চলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র তালাকের বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ, আলোচনাচক্র হবে। সেখানে তালাক প্রথার নিন্দা করার পাশাপাশি তালাকের মতো জঘন্য নিয়মকে সমর্থনকারী তৃণমূলের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে। রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির এই প্রচার বড় চাপ তৈরি করতেই পারে। ১। উত্তরপ্রদেশের ধাঁচে এই রাজ্যেও সংখ্যালঘু মহিলাদের একটা বড় অংশের ভোট নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করবে বিজেপি। ২। শিক্ষিত ও সচেতন মুসলমান সমাজের একটা বড় অংশও তৃণমূলের এই নীতির বিরোধী হতে পারে। ৩। তৃণমূল যদি পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের অবস্থান বদল করে তা হলেও ভোট রাজনীতিতে তার বড় প্রভাব পড়তে পারে। আর/১০:১৪/১৭ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2oEJ2co
April 18, 2017 at 05:58AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন