মুম্বাই, ৩০ এপ্রিল- সদ্য মুক্তি পেয়েছে নুর। ছবির চিত্রনাট্য দর্শকের তেমন পছন্দ না হলেও বাঙালি সাংবাদিক নুর রায়চৌধুরীর চরিত্রে সোনাক্ষী সিংয়ের অভিনয় অনেকেরই পছন্দ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রায়ই বলিউড ছবির মুখ্যচরিত্র হয়ে উঠছে কোনো বাঙালি। কীভাবে বাঙালিদের দেখে বলিউড? পরিচালকেরাই বা কীভাবে তৈরি করছেন এই বাঙালি চরিত্রদের? আসুন একটু খতিয়ে দেখা যাকঃ বাঙালি চরিত্রে সোনাক্ষী এই প্রথম নন। বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানের লুটেরা ছবিতেও তিনি বাংলার জমিদারের মেয়ে পাখি হয়েছিলেন। তারপর তিগমাংশু ধুলিয়ার বুলেট রাজাতেও তাকে বাঙালি মেয়ে মিতালির চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। আসলে বাঙালি চরিত্ররা কিন্তু হিন্দি ছবিতে নতুন নয়। তাদের চিরকালই দেখা যেত। তবে অনেকদিন পর্যন্ত তাদের গোলগাল, চশমা-পরা, হাবাগোবা পার্শ্বচরিত্রেই পাওয়া যেত বেশি। অনেক সময়ই তারা চিত্রনাট্যে থাকত শুধু কমিক রিলিফের জন্য। কিন্তু সঞ্জয় লীলা বনশালির দেবদাসএর পর পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যায়। পরদায় শাহরুখ খানকে টুকরো বাংলা বলতে দেখে অনেকেই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। পারো, চন্দ্রমুখী এবং চুনিবাবুর চরিত্রেও দেখা গিয়েছিল ঐশ্বর্য রাই, মাধুরী দীক্ষিত এবং জ্যাকি শ্রফকে। তারপর থেকেই বলিউড বাঙালিদের নিয়ে নতুনভাবে উৎসাহ ফিরে পায়। এমনকী, ছোট পর্দায় একতা কাপুরের ধারাবাহিকগুলোর কল্যাণেও বাঙালিদের আচার-আচরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করে বলিউড। তবে এই চরিত্রগুলো আগের মতো বোকা বাঙালির স্টিরিওটাইপ না হলেও অন্য ধরনের স্টিরিওটিপিক্যাল চরিত্র ছিল তো বটেই। অবাঙালিদের মুখে অস্বাভাবিক টুকরো বাংলার উচ্চারণ শুনে বাঙালিদের খুব একটা আনন্দ হতো বলে তো মনে হয় না! এমনকী, ধুম ছবিতে অভিষেক বচ্চনের বাঙালি স্ত্রী সেজেছিলেন রিমি সেন, যিনি নিজেও বাঙালি বটে। কিন্তু তার মুখেও বাংলা সংলাপগুলো অবাঙালিদের মতোই ভাঙা ভাঙা শোনানোয় যথেষ্ট হাসি পেয়েছিল দর্শকের! কোনো কোনো হিন্দি ছবিতে বাঙালি চরিত্র মানেই যেন শাঁখা-পলা, আটপৌরে লালপাড় সাদা শাড়ি কিংবা হাতে পায়ে আলতা! আবার কোনো কোনো ছবিতে দেখা যেত আরেক দল বাঙালিকেও। যারা শুধু নামেই বাঙালি! অথচ বাঙালি বলতে আমরা যা বুঝি, তা একেবারেই নয়। যেমন অনুরাগ বসুর লাইফ ইন আ মেট্রো তে শিল্পা শেঠী এবং কঙ্কণা সেন শর্মার চরিত্র। কিংবা ধুম টু বা কর্পোরেটএ বিপাশা বসুর চরিত্র। অথবা অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ওয়েক আপ সিডএ কঙ্কণার চরিত্রটা। ২০১২ সাল থেকে পরিস্থিতি একটু বদলাতে শুরু করে। অনুরাগ বসুর বরফিতে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার করা ঝিলমিল বা ইলিয়ানা ডিক্রুজের করা শ্রুতিকে ভালবেসে ফেলেন দর্শক। এই প্রথম হিন্দি ছবির বাঙালি চরিত্ররা শুধু বাঙালি সাজই নয়, বাঙালি সত্তাও ফুটিয়ে তুলতে পারল পরদায়। ইলিয়ানাকে ছবিতে দেখে অনেকে বাঙালি বলেই ভেবে নিয়েছিলেন। একই বছর মুক্তি পায় সুজিত সরকারের পিকু। ছবিতে ইয়ামি গৌতম ছিলেন বাঙালি মেয়ে অসীমার চরিত্রে। তাকে দেখেও চট করে অবাঙালি মনে হওয়ার জো ছিল না। অনেকে মনে করেন, বলিউডে বাঙালি পরিচালকদের ভিড় বাড়ছে বলেই বাঙালি চরিত্রগুলো আরও বেটার হচ্ছে। এই চরিত্রগুলো শুধুই যে বাঙালিরা পছন্দ করছেন, তা নয়। দেশের বৃহত্তর দর্শকও পছন্দ করছেন। কারণ, বাস্তবের বাঙালির মতোই এই চরিত্রগুলোও যথেষ্ট কসমোপলিটান। যে কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। সুজয় ঘোষের কাহানির বিদ্যা বাগচিকে এমনি এমনি তো পছন্দ করেননি দর্শক! পরিচালকরাও এখন চরিত্র গড়ার সময় বেশি যত্ন নিচ্ছেন। ভাঙা বাংলার সংলাপের এখন আর প্রয়োজন পড়ে না। সুজিত সরকার পিকুতে দীপিকা পাড়ুকোনের মুখে সেভাবে বাংলা সংলাপ বসাননি। কিন্তু চরিত্রটার বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, হাবভাব, সবই আদ্যোপান্ত বাঙালি! অমিতাভ বচ্চন অবশ্য কিছু কথা বাংলায় বলেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বলিউডের অন্য কোনো চরিত্র তার চরিত্রটার চেয়ে বেশি বাঙালি হয়ে উঠতে পারেনি! আগামী মাসেই মুক্তি পাবে মেরি পেয়ারি বিন্দু। ছবিতে বেশ কিছু টলিউডের অভিনেতাকে দেখা যাবে। নায়ক আয়ুষ্মান খুরানাও বাঙালির চরিত্রে। ছবির ছোট ছোট ট্রেলারগুলো রিলিজের আগেই হইচই ফেলে দিয়েছে। অনেকটা অংশই কলকাতায় শ্যুট করা। লেখক-পরিচালকও বাঙালি। দেখা যাক, কতটা বাঙালিয়ানা ছুঁতে পারে মেরি পেয়ারি বিন্দু।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2pjQ0Fy
May 01, 2017 at 03:28AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top