শুধু চিকুনগুনিয়া নয়, ডেঙ্গুও ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীতে

fঢাকা::শুধু চিকুনগুনিয়া নয়, ডেঙ্গুও ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীতে। এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু (ডেঙ্গি) এ দুটি জ্বরই মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রচুর রোগী আসছেন। গত এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতর ২২ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিতে পারলেও চলতি মে মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। বেসরকারি হাসপাতালের অথবা প্রাইভেট চেম্বারের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সাথে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও পাচ্ছেন। ভাইরাসজনিত এ জ্বরের ব্যবস্থাপনা এখন জানা আছে বলে চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ২০০০ সালের মতো মারাত্মক পর্যায়েও যাচ্ছেন না রোগীরা। ২০০০ সালে ঢাকায় পাঁচ হাজার ৫৫১ ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ওই বছর ৯৩ জন মারা যান এ জ্বরে রোগটি বাংলাদেশে নতুন বলে। তখন চিকিৎসকেরা চিকিৎসা জানতেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তদের আমরা হাসপাতালে ভর্তি করতে চাই না। কারণ এটা ঘরে রেখেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এ সম্বন্ধে এখনকার মানুষ বেশ সচেতন। জ্বরের রোগী ভর্তি করলে আমরা অন্য গুরুতর রোগীর চিকিৎসা করতে পারব না। সরকারি হাসপাতালে না রাখলেও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ার প্রায় একই ধরনের চিকিৎসা। কেবল প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ব্যথানাশক অথবা স্টেরয়েড দেয়া যাবে না রোগীকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বিস্তার কমাতে হবে। সিটি করপোরেশন হয়তো ঘরের বাইরের মশা মারতে পারবে কিন্তু ঘরের মানুষকেই ঘরের মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই ভাইরাসজনিত ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছেন আবার মানুষ থেকে মশার মাধ্যমে আসছে। পরে মশা থেকে আবার মানুষকে সংক্রমিত করছে। একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বার বার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও একবার চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে আর কখনো আক্রান্ত ব্যক্তি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
অন্যান্য মশা ময়লা-নোংরা পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এডিস মশা এর ব্যতিক্রম, পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গার পরিষ্কার পানিতে এ মশারা ডিম ছাড়ে। ফলে শহরে বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় এডিস মশা বেশি দেখা যায়। ভবিষ্যতে হয়তো এটা শহর কিংবা অভিজাত এলাকায় সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।
আইইডিসিআরের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী (প্রধানত এডিস) মশার বিস্তার ঘটছে। মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে না পারলে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এটা দিন দিন হুমকি হয়ে দেখা দেবে। মশা যাতে বেড়ে উঠতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। এডিস উষ্ণতা ও আর্দ্রতার মধ্যে বংশ বিস্তার করে থাকে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আর্দ্রতা ও উষ্ণতা ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এ মশার বংশ বিস্তারে অনুকূল ছিল। কিন্তু মে-জুন মাসের উষ্ণতা ও আর্দ্রতায়ও এ মশা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বৃষ্টি কমে গেলে এডিস মশার সংখ্যাও কমে যাবে। এডিস মশা কমাতে হলে একই সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কথাও চিন্তা করতে হবে।’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ জানিয়েছেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমিয়ে রাখা সম্ভব। বাহক (মশা) না থাকলে ডেঙ্গুজ্বরও হবে না। ডেঙ্গু স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এর প্রচ্ছন্ন হুমকি আরো ব্য্পাক। এখনই সাবধান হতে হবে এবং সব ধরনের মশা বিশেষ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি জানান, একটা সময় ডেঙ্গু কেবল শহর এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এটা মফস্বল শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক ছোট শহরেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে মেডিসিনের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। পানি অথবা অন্যান্য তরল পান করতে না পারলে শরীরে স্যালাইন (আইভি ফুইড) দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর বলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল লক্ষ্মণ বুঝেই চিকিৎসা দিতে হবে।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে এক শতাংশের কম মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। জ্বর হলেই প্লাটিলেট কাউন্ট করার প্রয়োজন নেই। এটা লক্ষ্মণ দেখে চিকিৎসা করা যায়। বেশি জ্বর, মাথা ব্যথা ও ত্বকে র‌্যাশ উঠলে ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
ঢাকা ফিভার নামে ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর ১৯৭৭-৭৮ সালে অল্প কিছু ডেঙ্গু রোগী আসে হাসপাতালে। এর প্রায় ১৯ বছর পর ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ২৫৫ জন জ্বরের রোগীর মধ্যে ১৩.৭ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়।



from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qDQJm9

May 20, 2017 at 09:58AM
20 May 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top