কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া দুই ছেলের একজন জন্মান্ধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক ● চলতি বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ২৮ জন আর ছেলে শিক্ষার্থী ২ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া দুই ছেলের মধ্যে একজন আবার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী! জিপিএ-৫ প্রাপ্ত জন্মান্ধ তফসিরুল্লাহ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে।

শুক্রবার সকালে তফসিরুল্লহর বড়ভাই আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র আমজাদ হোসেন কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানান।

জন্মান্ধ তফসিরুল্লাহ কসবার চান্দুখলা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে। মা বকুল বেগম গৃহিনী।

তার বড়ভাই আমজাদ হোসেন জানান, শিশুকালে চট্টগ্রামে পড়ালেখা করতো তফসির। প্রচণ্ড মেধাবী হলেও ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি অনীহা ছিল তফসিরের। সারাদিন পড়ে থাকতো প্রযুক্তি নিয়ে। এ নিয়ে বকাঝকা ও শাসনের শিকার হতে হয়েছিল তাকে। জেএসসি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয় সে। কিন্তু এরপর নবম-দশম শ্রেণিতে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। অসংখ্য বাধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে এসএসসি পরীক্ষায় আসে জীবনের সেরা সাফল্য। বোর্ডে মানবিক বিভাগের অমানবিক ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও সাধারণ গ্রেডে জিপিএ-৫ পায় তফসির।

জানা যায়, জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবীর আলো বঞ্চিত তফসিরুল্লাহ। বাবা খেটে খাওয়া একজন কৃষক। ঘরে দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তান। কুসংস্কারে আবদ্ধ সমাজের কিছু মানুষ দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু কুসংস্কারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাবা ও চাচা তাদের পাঠিয়ে দেন শহরে। সেখানেও প্রতিবন্ধকতা! দেশে বহুল প্রচলিত ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করাটা কিছুটা দুরূহ ব্যাপার অন্ধদের জন্য। রেকর্ড বই থেকে পড়া সহজে মুখস্ত করা সম্ভব হলেও এ বইয়ের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে সীমাবদ্ধতাপূর্ণ জীবনে আরেক ধাপ সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। সারাদেশে অন্ধদের জন্য এনজিও সংস্থা এবিসির ৮টি হোস্টেল রয়েছে।

এবিসির কুমিল্লার হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যায় তফসির। কিছু এনজিও সংস্থা থেকে মাঝেমাঝে অর্থনৈতিক সহায়তা পেলেও তা ছিল নগণ্য। তবে ইকরা নামে একটি সংগঠন থেকে কিছু বই পেয়েছিল সে।

নিজের সাফল্যের বিষয়ে তফসিরুল্লাহ কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলে, “এ প্লাস পেয়েছি, ভবিষ্যতেও ভালো করার ইচ্ছা আমার। তবে পড়াশোনা করে অর্থ উপার্জন করবো, সে ইচ্ছা নেই আমার।”

কেন পড়ালেখা করছো, জানতে চাইলে তফসিরুল্লাহ বলে, “নিজের জ্ঞানভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে, নিজেকে বুঝতে ও নিজেকে ভালোভাবে জানতে পড়ালেখা করছি।”

সরকারের কাছে একটি অনুরোধ রয়েছে, “ওপরের লেভেলে পড়াশোনার মান অনেক কঠিন, অন্ধদের প্রতি সু-দৃষ্টি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি রেকর্ড বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন, তাহলে অন্ধরা অন্তত পড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে।”

উল্লেখ্য, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তফসিরুল্লাহ কুমিল্লার রক্তদান ভিত্তিক অন্যতম সংগঠন সঞ্চারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এ পর্যন্ত ছয়বার রক্তদান করেছে।

The post কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া দুই ছেলের একজন জন্মান্ধ! appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2qISXhM

May 05, 2017 at 10:32PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top