নিউইয়র্ক, ০২ মে- মাটি মোদের প্রাণ এ শ্লোগানকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস - বাফা মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করেছে বাংলা নববর্ষ। বাফার আয়োজনে ব্রঙ্কসে এ প্রথম বারের মত মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হল বাংলা নববর্ষ। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত বাঙালী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে বাফা স্থানীয় সময় ২৯ এপ্রিল শনিবার নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও আয়োজন করে বৈশাখী ভোজ, কৃতি শিক্ষার্থীর মাঝে সনদপত্র বিতরণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এদিন বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্কসের বাঙালী অধ্যুষিত পার্কচেষ্টার-স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকায় নতুন প্রজন্মের ব্যাপক অংশ গ্রহণে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পিএস ১০৬ মিলনায়তনে সন্ধ্যে সাড়ে ৬টায় পরিবেশিত হয় বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসব। উৎসবে ভিন্ন মাত্রা দেয় বাফার শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতি। মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা বাফার প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিনের নের্তৃত্বে বাফার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাঙালীদের ব্যাপক অংশ গ্রহণে স্টারলিং-বাংলাবাজার-ওলমস্টেড এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে বিশাল শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ওই এলাকার পিএস ১০৬ স্কুলের সামনে এসে শেষ হয়। বাফার এই আয়োজনে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করতে উপস্থিত হন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসানসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ। শোভাযাত্রা অংশগ্রহণকারীরা বাংলা নববর্ষ সম্বলিত সুশোভিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ রং বেরং এর পোশাক পরে, নতুন সাঁজে সজ্জিত হওয়ায় উৎসব প্রাঙ্গণে ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি করে। জমজমাট এ উৎসব প্রবাসে একখন্ড বাংলাদেশ হয়ে ওঠেছিল। নষ্টালজিক অনুভুতি কিছঝুটা হলেও পেয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। এদিকে, মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে বাফা ও ব্রঙ্কস বাংলাদেশ উইমেনস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, ব্যান্ডস-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও টাস্ট্রিবোর্ড চেয়ারম্যান আবদুস শহীদ, বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মাহবুবুল আলম প্রমুখ। মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসব সঞ্চালনায় ছিলেন কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, গোলাম মোস্তফা ও শামিম আরা বেগম। এর পর বৈশাখী ভোজে আপ্যায়ন করা হয় সকলকে। সন্ধ্যে সাড়ে ৬টায় পিএস ১০৬ মিলনায়তনে বাফার শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। শামিম আরা বেগম ও ক্লারা রোজারিওর উপস্থাপনায় এবং বাফা ও ব্রঙ্কস বাংলাদেশ উইমেনস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সনদপত্র বিতরণ করেন বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। এর পরপরই মাটি মোদের প্রাণ শিরোণামে পরিবেশিত হয় বাফার ইতিহাস সৃষ্টিকারী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাফা শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর নাচে গানে মাতিয়ে রাখেন উপচেপড়া হলভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের। বর্ণাঢ্য এ উৎসবে বাফার শিক্ষার্থী, শিক্ষক-অভিভাবক, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা যোগ দেন। এ পর্বে অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও কলাকৌশলীরা হলেন : মারজিয়া স্মৃতি, অন্তরা সাহা, মৃদুলা আলম, নিরমা গোলদার, মিথুন দেব, আনিকা সাহা, আনিকা কায়সার, সানজিদা ইসলাম, ইশানী চৌধুরী, নুজহাত কাইজা, ফাতিহা নূর, অর্পিতা পাল, পূজা চন্দ্র, জয়িতা রয়, কৃষনা প্রিয়া, ইশা রয়, তিশা রয়, মায়া এঞ্জেলিনা, রিয়া, শ্রেয়া, কথা, নিরজা, অদিতি, তুলসি, চৈতন্য, দিবা, হৃদিতা, জারা, আবৃতি, পূজা, রুচি, নোরা, সারুনি, এভেলিন, দীপু, মোনা, ফাহিম, মাইশা, শান্ত, অন্তরা, সোহানা, তাসনিয়া, ববি, কিংশুক, হ্যাপি, আরিয়া, সেজুতি, রাফা, অর্জুন, অপ্সরা, আদ্রিতা, ত্রির্পনা, হৈমন্তি, ছবি ও শম্পা। অতিথি শিল্পী আফজাল হোসেন। নৃত্যানুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন অনুপ কুমার দাশ। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন রনজিৎ কুমার দাস। পোষাক পরিকল্পনায় অনুপ কুমার দাশ ও ফরিদা ইয়াসমিন। গ্রন্থনায় শামীম আরা বেগম এবং তবলায় ছিলেন তপন মোদক। শব্দে মুনির-শিমুল। লাইটে শামীম লিটন এবং ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ফারজানা ইয়াসমিন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ব্রঙ্কস বাংলাদেশ উইমেনস এসোসিয়েশন। বাঙালী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে মাসুম আহমেদের সম্পাদনায় বাফা ঐকতান নামে একটি স্মরণীকা প্রকাশ করেছে। স্মরণীকাটির সহযোগী সম্পাদক ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। সহযোগীতায় ছিলেন হাবিব ফয়েজি। উৎসব আয়োজন, বাফা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও অতিথিদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি এসময় নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা সংস্কৃতির কাছাকাছি রাখার আহ্বান জানান। তিনি এ আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রবাসে বাঙালী ঐতিহ্যকে ধরে রাখা ও বিকশিত করার এ আয়োজন অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। নতুন প্রজন্মের স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহণে এ নির্মল আয়োজন অবশ্যই মনে রাখার মত। তারা বলেন, সাধারনত: প্রবাসের বাঙালী আয়োজনে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি আমাদের হতাশ করলেও বাফা এক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়ে আমাদের আশান্বিত করেছে। এধরণের ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য আমরা গর্বিত। বাফা অবশ্যই এজন্য প্রশংশার দাবিদার। বক্তারা বলেন, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি-কালচার ছড়িয়ে দিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে এ ঐতিহাসিক আয়োজন। নতুন প্রজন্মকে দেবে শেকড়ের সন্ধান। আমেরিকান মূলধারার সাথে তারা মিশে গেলেও তাদের স্বাতন্ত্রবোধ, নিজস্ব স্বত্তা, সংস্কৃতি ধরে রাখতে এধরনের আয়োজন মাইল ফলক হয়ে থাকবে। বাফার কর্মকর্তরা বলেন, নতুন প্রজন্মের হৃদয় উৎসারিত ভালবাসা ও মমত্ববোধে বিকশিত হয়ে ওঠা নাচে, গানে, গীতি আলেখ্যে আবহমান বাংলার নানা বৈচিত্রের পরিবেশনা রূপদানে সফল কারিগর বিশিষ্ট শিল্পী বাফার ড্যান্স ডাইরেক্টর অনুপ কুমার দাশ। আর/১৭:১৪/০২ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2qzBVBV
May 02, 2017 at 11:48PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top