ঢাকা::গৌরবের পথযাত্রা শুরু ১৯৮৮ সালে। ওই বছর জাতিসংঘ ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক দলে ১৫ সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠায় বাংলাদেশ। পরের বছর সেখানে প্রথমবারের মতো শান্তি প্রক্রিয়া ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘ একটি পূর্ণ শান্তিরক্ষী সৈন্যবাহিনী নিয়োগ করে। এরপর ক্রমাগতভাবে নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি।
এখন পর্যন্ত ৪০ দেশে ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৫ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে গৌরবের সঙ্গে কাজ করছেন।
বর্তমানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরসহ বিশ্বের ১২টি দেশে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৯২৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ।
আজ ২৯ মে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।
এ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আজ শান্তি ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এ সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের সদস্যরা বিপদসংকুল ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিয়োজিত থাকেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের দৃষ্টান্তমূলক সেবা, কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ মনোভাব ও সাহসিকতা আজ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তার বাণীতে বলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবচেয়ে কার্যকরী বিনিয়োগের একটি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন আকার ও ম্যান্ডেট সত্ত্বেও সব মিশনের লক্ষ্য একই- জীবন রক্ষা, জনগণের সুরক্ষা ও শান্তির মঞ্চ স্থাপন।
সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, বর্তমানে কঙ্গোতে ১ হাজার ৯৫৩ জন, লাইবেরিয়ায় একজন, লেবাননে ২৭৬, দক্ষিণ সুদানে ৭৯৫, সুদানে (দারফুর) ৭১৭, পশ্চিম সাহারায় ২৮, মালিতে ১ হাজার ৬৭৪, কার-এ এক হাজার ৩৯, হাইতিতে ৪৩১, থাইল্যান্ডে ১, সোমালিয়ায় ১, সাইপ্রাসে ৩ ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। সব মিলিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে ৬ হাজার ৯২৭ বাংলাদেশি সেনা নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১ হাজার ২৪২ নারী শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে ৮টি মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার ১২৬ সদস্য নিয়োজিত আছেন। তাদের মধ্যে নারী ১৬৪ জন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১১২ ও পুলিশের ২০ সদস্য প্রাণ হারান। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর ২০১ ও পুলিশের ১০ সদস্য আহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। শান্তিরক্ষা মিশনে মেডিকেল টিমের সদস্যরা অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। জনপ্রিয় করেছেন ‘ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক’।
ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তৈরি করে দিচ্ছেন রাস্তা, পুল-কালভার্ট। বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শান্তিরক্ষায় বিশ্বব্যাপী ব্লু হেলমেটধারীদের কাছে বাংলাদেশ এখন অনুপ্রেরণার নাম।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ‘মডেল অব পিস কিপারস’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সিয়েরা লিয়নে বাংলাদেশের নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণ সুদানের জুবায় বাংলাদেশি কন্টিনজেন্ট অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ আয়োজিত গণভোট সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে, যা দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2qqOXGm
May 29, 2017 at 11:42AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন